স্টাফ রিপোর্টার ॥ সকাল থেকেই নিজ বাসভবনে নবনির্বাচিত মেয়র এমএ মান্নানের অপোয় ছিলেন আজমতউল্লা খান। সকাল ১০টায় আসায় কথা ছিল মান্নানের। এরই মধ্যে জড়ো হয়ে যান দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকরা। তাদের সান্ত্বনা দিতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন সাবেক টঙ্গী পৌরসভার এ মেয়র। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এসময় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে আজমত উল্লা খান বলেন, জয়-পরাজয় আল্লাহর হাতে। মানুষের হাতে কিছুই নেই। আল্লাহ যা করেন মানুষের মঙ্গলের জন্য করেন। হয়তো এ ফলাফল আমার ভালর জন্যই হয়েছে। কষ্ট পেয়েছি, তবে তা ভুলেও গিয়েছি। আপনারাও ভুলে যাবেন। আপনাদের সঙ্গে সুখে-দুঃখে ছিলাম, আছি, থাকবো। ভোট পাইনি, তাতে কি? আপনাদের অনেক ভালবাসা তো পেয়েছি। মানুষ আমাকে দুর্নীতিবাজ কিংবা খারাপ লোক বলে না। এটা আপনাদের প্রার্থীর সফলতা। আমি গাজীপুরবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে। গতকাল সকালে অধ্যাপক এমএ মান্নান তার বাসায় পৌঁছার আগে নেতাকর্মী ও ভক্তদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন তিনি। গাজীপুর সিটির নির্বাচনে পরাজিত এ প্রার্থী বলেন, জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে আমাদের কৌশলে ভুল ছিল। তার ভোট আমি পাইনি। আমাকে যারা সাইজ করতে চেয়েছে, তারা নিজেরাই সাইজ হয়ে গেছে। দলীয় ফোরামে এসব বিষয় উত্থাপন করা হবে বলে নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করেন আজমত উল্লাহ খান।
মান্নানকে সংবর্ধনা দেবেন আজমত
বিপুল ভোটে বিজয়ী গাজীপুর সিটির নবনির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানকে সংবর্ধনা দেবেন পরাজিত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খান। শিগগিরই টঙ্গীতে এ সংবর্ধনা দেয়া হবে বলে গতকাল সকালে আজমত উল্লাহ খান মুঠোফানে দলের এক নেতাকে জানান। পাশাপাশি গাজীপুরেও এমএ মান্নানের জন্য সংবর্ধনা দেয়ার প্রস্তুতি নিতে বলেন তিনি। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তার বাসায় যান অধ্যাপক এমএ মান্নান। নির্বাচনের পর এটাই ছিল তাদের মধ্যে প্রথম সাাৎ। মান্নানকে পেয়ে নিজ চেয়ার ছেড়ে বসতে দেন আজমত। আন্তরিকতার সঙ্গে অভিবাদন জানান তাকে। বন্ধুর আনা মিষ্টি খেয়ে কোলাকুলি করেন। নির্বাচনে পরাজয় প্রসঙ্গে সমর্থকদের উদ্দেশে আজমতউল্লাহ বলেন, নির্বাচনে জয় পরাজয় আছে। তবে আল্লাহ যা করেন মানুষের মঙ্গলের জন্যই করেন। তিনি বলেন, আমাদের ল্য একটাই জনগণের মঙ্গল ও এলাকার উন্নয়ন। এসময় অধ্যাপক এমএ মান্নান বলেন, নির্বাচনের আগে আমরা একটা অনুষ্ঠানে বলেছিলাম, ফলাফল যা-ই হোক তা মেনে নেবো। আজমত আমার বন্ধু। আমরা দু’জন নির্বাচনের মাঠে ছিলাম। নির্বাচনের যুদ্ধে নেমেছিলাম। যুদ্ধের ফলাফল একদিকে যায়। দু’দিকে যায় না। আমাদের জয়-পরাজয় যা-ই হোক এটা হলো জনগণের জয়। বিজয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমার প্রিয় বন্ধু আজমত উল্লাহ খানকে পাশে পাবো আমি। তার সকল সহযোগিতা নিয়ে আমি সিটি করপোরেশনের উন্নয়নের জন্য কাজ করবো। পাশাপাশি আজমতের নির্বাচনী ইশতেহার থেকেও আমি কাজ করবো যেটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দরকার। বন্ধুর কৃতজ্ঞতার জবাবে আজমত উল্লাহ খান বলেন, আমি সর্বপ্রথম গাজীপুরবাসী, দেশবাসী, যিনি বিজয়ী হয়েছেন তাকে, নির্বাচন কমিশন, প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। জয়-পরাজয় প্রশ্নে আজমত ঊল্লাহ বলেন, আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। সিটি নির্বাচনের পর বিজয়ী প্রার্থী পরাজিত প্রার্থীর বাসায় ফুল ও মিষ্টি নিয়ে সহযোগিতা চাওয়ার এ ইতিবাচক রাজনীতির দৃষ্টান্ত দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে নেই কেন- এমন প্রশ্নে নবনির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান বলেন, অবশ্যই থাকা উচিত। থাকলে দেশবাসী উপকৃত হবেন। আজমত উল্লাহ খান বলেন, এ সংস্কৃতি চালু থাকলে দেশ ও জাতি এগিয়ে যাবে। প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ হবে। নির্বাচনে জয়ের পিছনে জাতীয় ইস্যু কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেন মান্নান। আজমত উল্লাহ বলেন, মান্নান ভাই যেসব পদপে মানুয়ের মঙ্গল, এলাকার উন্নয়নের জন্য নেবেন সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে আমি তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করবো। শুধু আমার তরফ থেকে নয়, আমার নেতাকর্মীদের তরফ থেকেও সহযোগিতার দরজা খোলা থাকবে তার জন্য। এসময় অধ্যাপক এমএ মান্নানের সঙ্গে ছিলেন টঙ্গী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম শাহানশাহ, সদর থানার সভাপতি নাজিম উদ্দিন ও সদর থানার সম্পাদক সুরুজ আহমেদ।