ভোজ্য তেল- শুধু বোতলেই ৫০% বেশি মূল্য নিচ্ছে পরিবেশকরা

স্টাপফ রিপোর্টার ॥ পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে প্রতিবছরই বাজারে কম দামে পণ্য বিক্রি করে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এবারও একই পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি। কিন্তু পরিবেশকরা তেল বোতলজাতের আগেই শুধু বোতলেই (তেল ছাড়া) ৫০% বেশি মূল্য নিচ্ছে। টিসিবি’র প থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে। টিসিবি’র হিসাব অনুযায়ী দেখা গেছে, শুধু (তেল ছাড়া) ৫০০ গ্রাম বোতলের মূল্য ৫.০৪ টাকা, ১ লিটার বোতলের মূল্য ৭.১২ টাকা, ২ লিটার বোতলের মূল্য ১২.৬৬ টাকা, ৩ লিটার বোতলের মূল্য ১৯.৭৪ টাকা এবং ৫ লিটার বোতলের মূল্য ২৪.৮৬ টাকা হওয়া যুক্তিযুক্ত বলে মনে করে টিসিবি। টিসিবি’র মতে, বোতলের এই মূল্য বাস্তবায়ন করতে পারলে ভোজ্যতেলের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। কিন্তু তেল পরিবেশকরা ১ লিটার বোতলের (তেল ছাড়া) মূল্য ১৫ টাকা ও ৫ লিটার বোতলের মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে। অর্থাৎ তেল বোতলজাতের আগেই প্রতি লিটার বোতলে ৫০% বেশি মূল্য নিচ্ছে পরিবেশকরা। যা অযৌক্তিক মনে করছে কমিশন। এসব বিষয় সামনে রেখে বাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে দুটি সুপারিশ সংবলিত চিঠি পাঠিয়ে ট্যারিফ কমিশন (টিসিবি)। চিঠিতে প্রতি লিটার লুজ সয়াবিন তেলের মিলগেট মূল্য ১০৯ টাকা এবং পাম তেলের মূল্য ৭৬ টাকা নির্ধারণ করতে সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া আগামী রমজানে বোতলজাতকৃত সয়াবিন তেল অতিরিক্ত মজুদ নিশ্চিত করারও কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, রমজানে বেশি ব্যবহৃত পাঁচটি ভোগ্যপণ্যের মধ্যে ছোলা, মটর, মশুর ডাল, চিনি ও ভোজ্য তেল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে সয়াবিন ও পাম তেলের মজুদ রয়েছে পরিশোধিত ১৩ হাজার ২৯৭ মেট্রিক টন ও অপরিশোধিত ১২ হাজার ৪৭৬ মেট্রিক টন। এছাড়া মিলে মজুদ রয়েছে ৭১ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন। মার্চে এলসি খোলা হয়েছে ৭৪ হাজার ৩০৭ মেট্রিক টন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অত্যাবশকীয় পণ্য বিপণন পরিবেশক নিয়োগ আদেশ ২০১১ এর উপানুচ্ছেদ ১২ (২) মোতাবেক প্রতিটি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানকে অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করে দাম ঠিক করতে হবে। আইন মোতাবেক অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসারে ১ মাসে ইন বন্ডের (বন্দরে প্রবেশ) গড়, এক মাসের এলসি খোলার গড় এবং সর্বশেষ ৭ দিনের আউট বন্ডের (বন্দর থেকে খালাস) গড় মূল্য যোগ করে যে মূল্য পাওয়া যায় সেটাকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের মূল্য ধরা হয়। এছাড়া অন্য মূল্য যোগ করে পরিশোধিত সয়াবিন তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সে হিসেবে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের ইন বন্ডের গড় মূল্য প্রতি মেট্রিক টনে (১লা মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত) ৯৮ হাজার ৩৪১ টাকা, এলসি খোলার গড় মূল্য ৮৮ হাজার ৭৫ টাকা ৭ দিনের আউট বন্ডের গড় মূল্য ৯৯ হাজার ৪০ টাকা। উপরোক্ত এলসি খোলা, ইন বন্ড এবং আউট বন্ড গড় মূল্য দাঁড়ায় ৯৫ হাজার ২১৯ টাকা। ৯৫ হাজার ২১৯ টাকাকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের মূল্য ধরে প্রতি লিটারের মিলগেট মূল্য দাঁড়ায় ১০৮.৮৩ টাকা। এরসঙ্গে বোতলের মূল্য ১৫ টাকা, পরিবেশক ২ টাকা, খুচরা ব্যবসায়ীর মুনাফা ২ টাকা যোগ করে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে সর্বোচ্চ মূল্য দাঁড়ায় ১২৭ টাকা ৮৩ পয়সা। অন্যদিকে একই পদ্ধতি মোতাবেক ইন বন্ডের গড় মূল্য ৬৬ হাজার ৩৩৮ টাকা। এলসি খোলার গড় মূল্য ৬৭ হাজার ৫ ৯৭ টাকা। ৭ দিনের আউট বন্ডের গড় মূল্য ৬৭ হাজার ৫৯৭ টাকা। উপরোক্ত এলসি ওপেন, ইন বন্ড এবং আউট বন্ডের প্রতি মেট্রিক টনে মূল্যের গড় মূল্য দাঁড়ায় ৬৭ হাজার ১৮৩ টাকা। এই টাকাকে অপরিশোধিত পাম তেলের মূল্য ধরে প্রতি লিটার পাম তেলের মিলগেট মূল্য দাঁড়ায় ৭৬.৭৮ টাকা। ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের মূল্য যেখানে ৫০ টাকা, পরিবেশকের মুনাফা ১০ টাকা এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের মুনাফা ১০ টাকা ধরে ৫ লিটারের মূল্য আসে ৬১৪.১৩ টাকা। কিন্তু কয়েকটি পরিশোধনকারী কর্তৃক প্রেরিত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের মিল গেট মূল্য এখনও ১১৪ টাকা দেখানো হচ্ছে। ১১৪ টাকাকে মিলগেটের মূল্য ধরে ৬ লিটারের মূল্য দাঁড়ায় ৬৭০ টাকার সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বোতলের মূল্য ৫০ টাকা, পরিবেশক ও খুচরা ব্যবসায়ী মুনাফা ২০ টাকা যোগ করার পর মূল্য দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৬৪০ টাকা। যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৬০ টাকা থেকে ৬৭৫ টাকা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পরিশোধিত পাম তেল আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় এ দু’টি পণ্য যৌক্তিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে পরিশোধিত সয়াবিন তেল যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে প্রতি লিটারে (খোলা) ৫ টাকা বেশি এবং বোতলজাত করণের েেত্র তা আরও বেশি চার্জ ধরা হচ্ছে। পর্যবেণে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের মূল্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠার পর স্থানীয় বাজারে বোতলজাতকৃত তেলের মূল্য যা নির্ধারিত হয়েছিল বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য কমলেও স্থানীয় বাজারে দাম কমেনি। এ অবস্থায় ওই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করলে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে স্থানীয় বাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কমিশন।
এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় স্থানীয় বাজারে অতিরিক্ত মূল্যে ভোজ্য তেলে বিক্রি হচ্ছে। এেেত্র ব্যবসায়ীদের বারবার সতর্ক করা হলেও কোন কাজ হয়নি। তাই তিনি আগামী রমজানে ব্যবসায়ীরা যেন ভোজ্য তেলের দাম বাড়াতে না পারেন সেজন্য আগেভাগেই ট্যারিফ কমিশনের প থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রতি বছর ভোজ্য তেলের চাহিদা হলো ১৩ লাখ মেট্রিক টন। শুধু রমজানে চাহিদা হলো দেড় লাখ মেট্রিক টন।

শেয়ার করুন

Related News

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫