আবির হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার:-
খুলনার সুন্দরবন উপকূলবর্তী কয়রা উপজেলার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে শিবসা ও কয়রা সেতুর টোল মওকুফের দাবি জানিয়ে আসছেন। টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি, হয়রানি এবং দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা গত ৫ আগস্ট টোল আদায় বন্ধ করে দেন। যদিও কিছুদিন পর তা পুনরায় চালু হয়।
প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে যাতায়াতকারী অনেকেই অভিযোগ করেন, ইজারাদারের নিয়োজিত কর্মীরা প্রায়ই অশোভন আচরণ করেন। মাছ, সবজি কিংবা অন্যান্য পণ্য পরিবহনকারীদের কাছ থেকে নির্ধারিত টোলের চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ টাকা আদায় করা হয়। কেউ প্রতিবাদ করলে হেনস্তা এমনকি মারধরেরও শিকার হতে হয়।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীন এই দুটি সেতু দিয়ে প্রতিদিন হাজারো সাধারণ মানুষ যাতায়াত করেন—যাঁদের অধিকাংশই দিনমজুর, কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী। নির্ধারিত টোল ৫ বা ১০ টাকা হলেও বাস্তবে আদায় করা হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে অপমানজনক ভাষা, লাঞ্ছনা কিংবা সহিংস আচরণের অভিযোগ উঠে।
বর্তমানে সেতু দুটি ইজারায় পরিচালনা করছে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলী আকবর এন্টারপ্রাইজ। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত দুই কোটি টাকায় এই ইজারা দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। মালিক আলী আকবর খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক। তাঁর প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত ২০–২৫ জন টোল আদায়কারী কর্মীর বিরুদ্ধে নিয়মিত দুর্ব্যবহার ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, দুর্যোগকবলিত এই উপকূলীয় অঞ্চল প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়, জলাবদ্ধতা ও নদীভাঙনের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এর মধ্যেও প্রতিদিন অতিরিক্ত টোল দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে তাঁদের, যা একপ্রকার অন্যায্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বারবার এই সমস্যা সমাধানে সওজ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কয়রা সাংবাদিক ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবির হোসেন বলেন, “বটিয়াঘাটা ও আশাশুনির একই ধরনের সেতুগুলো টোলমুক্ত হলেও কয়রার মতো দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় এখনও টোল আদায় চালু রয়েছে, যা সম্পূর্ণ অমানবিক। আমরা কয়রাবাসী এই টোল বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি চাই।”
এখন কয়রার দরিদ্র মানুষের একটাই চাওয়া—আগামী ৩০ জুন, যখন ইজারার মেয়াদ শেষ হবে, তখন যেন সেতু দুটি টোলমুক্ত ঘোষণা করা হয়। এতদিনের যন্ত্রণা ও আন্দোলনের পর অন্তত এবার তাঁরা আশার আলো দেখতে চান।