কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধিঃ
খুলনার কয়রা উপজেলায় ১২ বছর আগের একটি হত্যা মামলায় স্থানীয় ছয় সাংবাদিকসহ ১১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর কর্মী জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী ছবিরন নেছা বৃহস্পতিবার কয়রা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত মামলাটি গ্রহণ করে কয়রা থানাকে এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মাইনুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে রয়েছেন খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের সাবেক সাংসদ সোহরাব আলী ও আক্তারুজ্জামান, কয়রা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাহারুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের একাধিক নেতা এবং ছয়জন পেশাদার সাংবাদিক। মামলায় উল্লেখ থাকা ছয় সাংবাদিক হলেন—দৈনিক ভোরের কাগজের কয়রা প্রতিনিধি শেখ সিরাজুদ্দৌলা লিংকন, খোলা কাগজের কামাল হোসেন, যায় যায় দিনের মাস্টার হাবিবুল্লাহ, কালের কণ্ঠ ও পূর্বাঞ্চলের ওবায়দুল কবির সম্রাট, দৈনিক খুলনা অঞ্চলের শাহাজান সিরাজ এবং আজকের দর্পণের তারিক লিটু। তবে সাংবাদিকরা বলছেন, মামলাটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং হয়রানি মূলক।
মামলার ৩৯ নম্বর আসামি কালের কণ্ঠের কয়রা প্রতিনিধি ওবায়দুল কবির সম্রাট বলেন, “২০১৩ সালের ঘটনায় আমার নাম দেখে আমি বিস্মিত। সে সময় আমার বয়স ছিল ১৬ বছর, আমি তখন এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্র। রাজনীতির সঙ্গে কোনো সংযোগ ছিল না। কে বা কারা কী উদ্দেশ্যে আমার নাম দিয়েছে, বুঝতে পারছি না। এ নিয়ে আমি গভীর উদ্বেগে আছি। মামলার ৩৮ নম্বর আসামি এবং কয়রা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি তারিক লিটু বলেন, “ঘটনার সময় আমি গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলাম। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছিলাম। ২০১০ সালের পর পড়াশুনার জন্য আমি কয়রার বাহিরে ছিলাম ,পড়াশুনা শেষ করে একটি এনজিও’র দায়িত্ব নিয়ে ২০১৯ সালে কয়রায় আসি। ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মামলায় জড়ানো হয়েছে। কয়রা প্রেস ক্লাবের সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ বলেন, “সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া সাংবাদিকদের এমন হত্যা মামলায় জড়ানো গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে। আমরা এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও সাংবাদিকদের মামলা থেকে অব্যাহতির দাবি জানাই।
২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে কয়রা সদরে মিছিল-সমাবেশের আয়োজন করে দলটি। সমাবেশ শেষে জালালের মোড়ে হামলায় আহত হন অন্তত ২৯ জন। নিহত হন জামায়াত কর্মী জাহিদুল ইসলাম। মামলার এজাহারে বলা হয়, হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী ছবিরন নেছা বলেন, “আমার স্বামী দিনমজুর ছিলেন। তার মৃত্যুর পর পরিবারে অভাব-অনটন নেমে এসেছে। আগে সাহস না পেলেও এখন বিচার চাইতে আদালতে গেছি।” সাংবাদিকদের নাম মামলায় কীভাবে এলো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শে নাম দেওয়া হয়েছে। আমি সবাইকে চিনি না।”
জামায়াতের কয়রা উপজেলা আমির মিজানুর রহমান বলেন, “আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা হয়েছিল। সে সময় মামলা করতে ভয় পেয়েছিল পরিবার। এখন মামলা করেছে। সাংবাদিকদের নাম মামলায় থাকা উচিত হয়নি। এতে বিচার ব্যাহত হতে পারে। সাংবাদিক ও সাংবাদিক সংগঠনগুলো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষী নয় এমন সাংবাদিকদের হয়রানি না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।