বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
মুমিনুল হকের অপেক্ষায় সবাই। দিনের খেলা শেষে জিম্বাবুয়ে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন কাইল জার্ভিস। জিম্বাবুইয়ান পেসারের সংবাদ সম্মেলন শেষ দুই মিনিটেই! ‘জার্ভিসের কাছে কী এত শোনার আছে’— এ ভাবনায় হয়তো সবার অপেক্ষা মুমিনুলের জন্য। দিনের সবচেয়ে উজ্জ্বল মুখটা যে তিনিই।
২৬ রানে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার বাংলাদেশের সামনে যখন আরও একটি বিপর্যয়ের চোখ রাঙানি, মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে মুমিনুল গড়েন প্রতিরোধের দেয়াল। উচ্চতায় বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যান ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি হতে পারেন। শুরুর ধাক্কার পর দুজন যে প্রতিরোধের দেয়ালটা গড়ে তুললেন, সেটির উচ্চতা ইঞ্চি-ফুটে পরিমাপ করা যায় না। ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জোড়া সেঞ্চুরির পর টানা আট ইনিংসে ভালো করতে পারেননি মুমিনুল। রানের ক্ষুধাটা ক্রমেই বাড়ছিল তাঁর। সেই ক্ষুধা তিনি আজ ভালোভাবে মিটিয়েছেন, বিশেষ করে লাঞ্চের পরের সেশনে। প্রথম সেশনে করেছেন ৬৪ বলে ২৫ রান। দ্বিতীয় সেশনে অনেক আক্রমণাত্মক, ৮৬ বলে ৭৭। সেঞ্চুরি করেছেন ১৫০ বলে।
জেনে অবাক হতে পারেন, টেস্টে ব্যাটিং করতে করতে যদি লাঞ্চ বিরতি পান, মুমিনুল মুখে তোলেন না কিছুই। লাঞ্চে কেন কিছু খান না, ড্রেসিংরুম থেকে আজ সংবাদ সম্মেলনে আসার পথে সেটির ব্যাখ্যা তিনি দেন না। শুধু বলেন, ‘এতেই আমি বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করি।’
লাঞ্চে কিছু খেয়ে পেটের ক্ষুধা নিবারণের চেয়ে মুমিনুলের কাছে বড় হয়ে ওঠে রানের ক্ষুধা মেটানো। পাঁচ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে সেটি তিনি প্রায়ই মেটান। এ কারণে টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তাঁর পরিসংখ্যানটাই সবচেয়ে উজ্জ্বল। আজ পেয়েছেন সপ্তম টেস্ট সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ ৮ সেঞ্চুরি করে তামিম ইকবাল সবার ওপরে। এও মনে রাখতে হবে তামিমের ৮ সেঞ্চুরি করতে লেগেছে ১১ বছর। এমনও হতে পারে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টেই সেঞ্চুরি সংখ্যায় তামিমকে ছুঁয়ে ফেলেছেন মুমিনুল।
এই উজ্জ্বল পরিসংখ্যানের বিপরীতে কিছু আফসোসের গল্পও আছে। ক্যারিয়ারের শুরুতে যেমন ছিলেন, মুমিনুল যদি সেই ছন্দটা ধারাবাহিক ধরে রাখতেন, নিশ্চিত এত দিনে টেস্টে অনেক রেকর্ড নিজের করে নিতেন। অবশ্য মুমিনুল প্রায়ই বলেন, রেকর্ডের জন্য তিনি খেলেন না। আজও খেলেননি, ‘রেকর্ড নিয়ে তেমন চিন্তা করি না। আমি আর মুশি (মুশফিক) ভাই যখন ব্যাটিং করছিলাম, তখন লক্ষ্য ছিল সেশন ধরে সেশন ব্যাটিং করার। একটা সেশন নিজেদের করে নেওয়া আমাদের অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ওই সময় ওদের বোলাররা খুব ভালো বোলিং করছিল। এখনো ভালো করছে। যে কন্ডিশন, যে উইকেট ছিল, অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল (রান করা)। আমরা সেশন ধরে ধরে খেলার চেষ্টা করেছিলাম, রেকর্ড নিয়ে ভাবিনি। সেশন ধরে ধরে খেললে আপনার সেঞ্চুরি হবে, দেড় শ হবে, দিন শেষে রেকর্ডও হবে।’
রেকর্ড নিয়ে না ভাবলেও যে ৩১ টেস্টে খেলেছেন, একেবারে কম অর্জন নেই তাঁর। আজ যেমন তামিমকে টপকে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা নিজের করে নিয়েছেন। এ নিয়ে তিনবার ১৫০ পেরোনো ইনিংস খেলেছেন, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ। ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ১৮১, গত ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭৬ আর আজ ১৬১। আচ্ছা, মুমিনুল ডাবল সেঞ্চুরি হবে কবে?
অদ্ভুত এক উত্তরই দিলেন বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান, ‘আমার দল কোনো দিন যদি সাড়ে তিন শ, চার শ তাড়া করতে খেলে, তখন হয়তো ডাবল সেঞ্চুরি হতে পারে! আমার দুই শ, দেড় শ করা খেলা তো এটা না। এটা হলো দলের খেলা। দলের যখন দরকার হবে তখন আসবে।’ বোঝা গেল উত্তরটা দিয়েছেন রসিকতার সুরে। পরক্ষণে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলেন, ‘এটা যত দেরিতে হবে আমার (রানের) খিদে তত বাড়বে। হয়ে গেলে খিদে তো মিটে গেল!’
মুমিনুল কেন লাঞ্চ করেন না, সেটির উত্তর না বলুন। কেন ডাবল সেঞ্চুরি হচ্ছে না, একটা উত্তর তো পাওয়া গেল! সূত্র: প্রথম আলো