সোমবার , ১১ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৬শে কার্তিক, ১৪৩১ , ৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > জাতীয় > নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসছে না ইইউ

নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসছে না ইইউ

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কর্মপরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোট গ্রহণে যাবতীয় পদক্ষেপ নেওয়া হলেও নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ, নির্বাচনকালীন হয়রানি বন্ধে বিশেষ কোনো উদ্যোগ বা পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি এই কর্মপরিকল্পনায়। অন্যদিকে এরই মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

ইসি সূত্রে এই কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে জানিয়েছে, কর্মপরিকল্পনাটি অনুমোদনের জন্য কমিশন সভায় উপস্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর তা অনুমোদন নেওয়া হবে বলেও ইসি সূত্রে জানা গেছে।

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ প্রায় ৭০ শতাংশ রাজনৈতিক দল। এই নির্বাচনে ৩০০-এর মধ্যে ১৫৩টি আসনে সংসদ সদস্য (এমপি) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে নির্বাচন ঘিরে থেকে যায় নানা প্রশ্ন। এবারও কারাগারে রয়েছেন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। নেত্রীকে কারাগারে রেখে দলটির নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে কোনো দল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে গেলেই ধরপাকড়ের ঘটনা ঘটছে।

এ ছাড়াও আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনি সংলাপে কমিশনের অধিকাংশ অংশীজন জোর দিয়েছেন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর। এত কিছুর পরও সর্বশেষ একাদশ জাতীয় নির্বাচন কর্মপরিকল্পনাতেও নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করলেও পর্যবেক্ষক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইসির পক্ষ থেকে একাদশ নির্বাচনের পর্যবেক্ষক হওয়ার অনুরোধ করা হলে গত ২৭ সেপ্টেম্বর এমন সিদ্ধান্তের কথা জানায় ইইউ।

ইইউর চিঠিতে বলা হয়, গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা ও মানবাধিকার ইইউর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এসবের ওপর অংশীজনদের সঙ্গে ইইউর সম্পর্ক নির্ভর করে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ওপর তাদের নজর রয়েছে এবং বাংলাদেশকে ইইউ উৎসাহিত করবে বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেওয়ার জন্য। তবে আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেবে না ইইউ।

নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে সামনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা বা অন্য কোনো উদ্যোগ কমিশন নেবে কি না জানতে চাইলে কমিশনার মো. রফিকুল ইসলামি বলেন, ‘উনারা আমাদের কাছ থেকে নিবন্ধন নিয়েছেন নির্বাচন করার জন্য। তারপর আবার তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে আনতে হবে যে নির্বাচনে আসেন!’

‘বাংলাদেশের জন্ম যে নির্বাচনের (১৯৭০) মাধ্যমে, সেই নির্বাচনেই কী সব দল অংশগ্রহণ করেছিল? পরবর্তীতে বাংলাদেশে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো কি সব দলের অংশগ্রহণে হয়েছে?’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে জাতীয় সংসদ না ভেঙেই। সাংসদ হিসেবে নির্বাচনি প্রচার চালাতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনি এলাকায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমান সুযোগ) তৈরি হওয়া নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমান সংসদের অধীনে নির্বাচনে গেলে কয়েক ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বর্তমান সাংসদকে মনোনয়ন দিলে একধরনের পরিস্থিতি, সাংসদকে মনোনয়ন না দিয়ে অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে আরেক ধরনের পরিস্থিতি। অনেক সময় ক্ষমতায় না থাকা প্রার্থীও প্রভাবশালী হয়ে থাকে। এসব পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে কার কর্তৃত্ব বেশি থাকবে। এ বিষয়ে তার ভাষ্য, ‘সাংসদ থাকা সত্ত্বেও মনোনয়ন না পেলে নির্বাচনি এলাকায় তার প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকবে না, বরং উল্টোটা হবে।’

সরকারি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসক বা পুলিশ সুপাররা নির্বাচন করেন না, ভোটাররা নির্বাচন করেন বলেও মন্তব্য করেন রফিকুল ইসলাম।

সম্প্রতি সিলেটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও পুলিশ-ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি, পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেওয়া, ধরে নিয়ে যাওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

নির্বাচনসংক্রান্ত মামলা হলে তা সমাধান করা হবে, কিন্তু গ্রেফতারের ওয়ারেন্ট থাকলে সে ক্ষেত্রে কিছু করার থাকবে না বলে জানিয়েছেন এই কমিশনার।

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশ্ন উঠতে পারে, তফসিল ঘোষণার আগে বা নির্বাচনের পরে গ্রেফতার করতে পারত—এমন প্রশ্ন হলে আমার কোনো জবাব নাই। কারণ তাকে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি বলে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কেন তাকে আগে গ্রেফতার করে নাই, নির্বাচনের আগে করছে—এই ব্যাখ্যা পুলিশের কাছে আদালত চাইতে পারেন।’

কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে বিদ্যমান আইনেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান রফিকুল ইসলাম।

ইসি সূত্রে জানা যায়, কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বিধি অনুযায়ী নির্বাচনি বিভিন্ন তথ্য ও ফল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাওয়ার জন্য সিআইএমএস, ইএমএস ও আরএমএস সংস্কার, ভোট কেন্দ্র ও নির্বাচনি এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সভা, আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে ও নির্বাচনি অপরাধ দমনে ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি গঠন ও ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, মনিটরিং সেল গঠন, ভোট গ্রহণের আগে ও পরে কিছু নৌযান/যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ, সাধারণ ছুটি ঘোষণা, ইসি থেকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ, তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ফল প্রকাশ পর্যন্ত সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন এবং অফিস সময়ের পরেও দায়িত্ব পালনের নির্দেশ, হালনাগাদ করা ভোটার তালিকা মুদ্রণ/ফটোকপির নির্দেশ, নির্বাচনি দ্রব্যাদির মজুদ পরীক্ষা ও প্রয়োজনে কেনা বা অন্য ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি।

কর্মপরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, বিভাগীয় কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা/জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা/সহকারী কমিশনার (ভূমি)/উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সহায়তার জন্য উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে সহায়ক কর্মকর্তা নিয়োগ, নির্বাচনি কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর কর্মকর্তাকে বদলি বা ছুটি না দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিভিন্ন স্থানীয় সংস্থার (জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ) সহায়তা দান, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন বিকাল ৫টার পর প্রার্থী ঋণখেলাপি কি না সে সংক্রান্ত তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে স্ব-উদ্যোগে সংগ্রহ করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া, নির্বাচন-পূর্ব সময়ে নির্বাচনি এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি।