আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
ঢাকা: ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপে শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর সৃষ্ট সুনামিতে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার অভিযানের মধ্যে আরো কয়েকটি মরদেহ উদ্ধারের খবর মিলেছে। ভূমিকম্পের আঘাতস্থল পালু শহরের একটি গির্জার নিচে নতুন করে সন্ধান পাওয়া ৩৪টি মরদেহ শিক্ষার্থীদের বলে জানা গেছে। উদ্ধার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভূমিকম্পের পর গির্জার নিচে মাটিচাপায় তারা প্রাণ হারান।
মঙ্গলবার (০২ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে গত শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সুলাওয়েসি দ্বীপের পালু শহরের কাছে ধারাবাহিক ভূমিকম্পের পর ৭ দশমিক ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে জারি করা হয় সুনামি সর্তকতা। পরবর্তীতে ওই অঞ্চলে প্রায় সাড়ে ছয় ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস আছড়ে পড়ে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে নিহতের সংখ্যা ১২০০ ছাড়িয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এদিকে বারবার পরাঘাত ও ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামোর কারণে সাহায্য সহায়তা ও উদ্ধার কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, অনেকেই পাথরের স্তুপের নিচে চাপা পড়েছেন। এতে যত দিন যাবে মৃত্যুর সংখ্যা ততো বাড়তে পারে।
খবরে বলা হয়, পালু শহরের কিছু দূরেই সিগি জেলার একটি গির্জায় শিক্ষার্থীদের মরদেহগুলোর খোঁজ মিলেছে। ভূমিকম্পের সময় হয়তো তারা সেখানে প্রার্থনারত ছিলেন। মরদেহগুলো উদ্ধারের কাজ চলছে। তবে প্রচুর কাদার কারণে উদ্ধার কার্যক্রম বিঘ্ন হচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়ান রেড ক্রসের মুখপাত্র রিদওয়ান সোবরি বলেন, এ অঞ্চলের কাদার পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। মাটিচাপা পড়া এ জায়গাটিতে হেঁটে পৌঁছাতে আমাদের দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে। যার জন্য উদ্ধার কার্যক্রমের কঠিন হয়ে পড়ছে।
তবে ছাত্রদের পরিচয় ও বয়স এখনও শনাক্ত করতে পারেনি উদ্ধারকারী দল।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, সিগির একটি গির্জার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বাইবেল ক্যাম্প থেকে ৮৬ জন ছাত্রের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। খোঁজ পাওয়া মরদেহগুলো এ দলের ছাত্রদের কিনা এ ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়াও দুর্গম রাস্তা, ক্ষতিগ্রস্ত বিমানবন্দর, টেলিযোগোযোগ ব্যবস্থার অবনতির কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে পৌঁছাতে পারছে না উদ্ধারকারী দল। দুর্গম জায়গাগুলোতে যোগাযোগও করা সম্ভব হচ্ছে না।
দেশটির হাসপাতালগুলোতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় আহতদের চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে উন্মুক্ত স্থানে।
দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা বিএনপিবি বলছে, ভূমিকম্প ও সুনামির কারণে ১৬ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। কিন্তু ডংগলা ও পালু শহরে মানবিক সহায়তার প্রয়োজন পড়বে ২৪ লাখ মানুষের।
ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। গত জুলাই ও আগস্টে পালু শহর থেকে শত কিলোমিটার দূরের লমবোক দ্বীপে দফায় দফায় ভূমিকম্পে ৫শ লোকের প্রাণহানি হয়। প্রশান্ত মহাসাগরের ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা ‘রিং অব ফায়ারে’ অবস্থিত দেশটিতে ২০০৪ সালে ৯.৩ মাত্রার ভূমিকম্পের পর ইন্দোনেশিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি ভয়াবহ সুনামি আছড়ে পড়ে। এতে প্রায় দু’লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হন, যার মধ্যে প্রায় সোয়া লাখই ইন্দোনেশিয়ার।