আব্দুল আলীম অভি
কালিয়াকৈর ব্যুরো ॥
গাজীপুর: কালিয়াকৈর উপজেলার চান্দরা পল্লীবিদ্যুৎ জোড়াপাম্প এলাকায় শনিবার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে প্রায় ১শ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়।
অভিযানে বনের উপর গড়ে উঠা বনদস্যু জসিম উদ্দিন ইকবালের বহুতল ভবন ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। অভিযানে জবর দখল হওয়া ১০ একর জমি উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক মৃল্য একশত কোটি টাকা হবে বলে বনবিভাগ দাবী করেছে।
বনবিভাগ, পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুক্ষ্যাত বনদস্যু বনখেকো মুচি জসিম গত ১০/১৫ বছর যাবত চন্দ্রা রেঞ্জের চন্দ্রা বিটের আওতায় চান্দরা মৌজায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে গজারী গাছ কেটে বনের যায়গায় বিশাল মার্কেট, রাশিদা কুটির-১ নামে চারতলা পাকা ভবন, রাশিদা কুটির-২ ও ৩ নামে দুইটি আধাপাকা ভবন এবং দুই শতাধিক টিনের ঘর, পাকা মসজিদ এবং বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলে। বনের গাছ কেটে পাঁচ শতাংশের প্লট তৈরী করে ৩শ প্লট সাধারণ লোকজনের কাছে পাঁচলক্ষ টাকা করে বিক্রি করে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের আশীর্বাদপুষ্ঠ জসীম ইকবালের ছিল শক্তিশালী ক্যাডার বাহিনী। তার অবৈধ কাজে বাধা দিতে গেলে বন বিভাগের লোকজনের উপর মুচি জসিমের ক্যাডার বাহিনী গুলি ছোড়ে। তৎকালীন পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় উল্টো বনবিভাগের লোকজনের নামে ডাকাতি এবং ধর্ষণ মামলা দিয়ে হয়রানী করে।
গাজীপুরের চন্দ্রা বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা খন্দকার মাহমুদুল হক মুরাদ এ বিষয়ে আলাপ কালে বলেন, ‘জসীমের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন চন্দ্রা বিট কর্মকর্তা সজীব কুমার মজুমদার, জীবন দেওয়ান, নিজাম উদ্দিনসহ অনেকেই। আমরা যখনই জসীমের বনের জমি দখল কর্মকা-ের প্রতিবাদ করতে যাই তখনই আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদের নারী নির্যাতন, ডাকাতিসহ বিভিন্ন মামলার আসামি বানানো হয়। আর এসব অপকর্মে পুলিশ প্রত্যক্ষভাবে তাঁকে সহযোগিতা করছে।’ বিট কর্মকর্তা মুরাদ আরো বলেন, ‘আমরা জসীমের অপকর্মের বিষয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাই। সব শুনে তাঁরা দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
অবশেষে শনিবার বিকালে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে জমি উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। গাজীপুরের তিনটি রেঞ্জের শতাধিক বনকর্মকর্তা/বনপ্রহরী, দুইশতাধিক শ্রমিক, শতাধিক পুলিশ ও আনসারের অংশগ্রহণে উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয়। তিনটি ভেকু মেশিন দিয়ে বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে মহাসড়ক সংলগ্ন মার্কেটের আধাপাকা দোকানঘর এবং মুচি জসিমের বিলাশবহুল অফিসঘর ভেঙ্গেগুড়িয়ে দিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। এ সময় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকে অবৈধ জায়গার ঘরবাড়ি থেকে লোকজনকে সরে যেতে অনুরোধ করা হয়।
শুক্রবার জসিম নিহত হওয়ার পর শনিবরা দুপুরে ওই এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন গাজীপুর জেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জান্নাতুল ফেরদৌস, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মশিউর রহমান, জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সনজিব কুমার দেবনাথ, গাজীপুর এডিশনাল এসপি রাসেল শেখ, এডিশনাল এসপি গোলাম সবুর, ঢাকা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ ইউসুফ, এসপি সার্কেল শাহিদুল ইসলাম, সহকারী বন সংরক্ষক এনামুল হক, এএসপি শোভন চন্দ্র, এ এসপি শরীফ আল রাজীব, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার(ভুমি) নির্বাহী ম্যাজেষ্ট্রিট শাহ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা, কালিয়াকৈর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম, ওসি(তদন্ত)মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ওসি অপারেশন সানোয়ার জাহান, কালিয়াকৈর রেঞ্জ কর্মকর্তা এ কে এম আজাহারুল ইসলাম সহ প্রশাসনের বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মকর্তাগণ। বন বিভাগের জমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চলমান থাকবে বলে জানান বন বিভাগের কর্মকর্তারা।