শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ডান্ডিতে ঝুঁকছে পথশিশুরা

ডান্ডিতে ঝুঁকছে পথশিশুরা

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাদকে বুঁদ যুবসমাজ। নেশার বাজারে প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পলিথিন আর গামের (টলুইন) সমন্বয়ে তৈরি নতুন নেশা ‘ডান্ডি’সেবীদের সংখ্যা। সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় পথশিশু ও ছিন্নমূল নারী-পুরুষ সবচেয়ে বেশি আসক্ত এই নেশায়। উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরাও ডান্ডি নেশায় ঝুঁকছে। এতে উত্কণ্ঠিত অভিভাবকরা। রাস্তা-ঘাট, পার্ক, রেল-লঞ্চ-বাসস্টেশন এলাকায় পুলিশের নাকের ডগায় বসে ডান্ডিসেবন চলছে। নিয়মিত সেবনে ডান্ডিসেবীদের লিভার, কিডনিসহ ব্রেইনের অংশগুলো স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় হতে পারে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের।

রাজধানীর রেল-লঞ্চ-বাসস্টেশনসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ পলিথিন হাতে বসে আছে ফুটপাতে। পলিথিনের ভেতরে হলুদ গাম-জাতীয় পদার্থ ঢুকিয়ে ফুঁ দিয়ে ফুলিয়ে তাতে নাক-মুখ ঢুকিয়ে কয়েক মিনিটের জন্য চেপে ধরছে তারা। ঘ্রাণ নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই তারা নেশায় বুঁদ হয়ে ফুটপাতেই ঝিমায়।

জুরাইন, পল্টন, গুলিস্তান, ফার্মগেট, ধোলাইখাল, সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড, রেললাইন-সংলগ্ন স্থান, সদরঘাট লঞ্চঘাট এলাকা, কমলাপুর রেলস্টেশন, মালিবাগ থেকে মগবাজার রেললাইন-সংলগ্ন বস্তি এলাকায় ডান্ডিসেবনকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এসব এলাকায় পথশিশু ও ছিন্নমূল নারী-পুরুষ পুলিশের সামনেই ডান্ডির নেশা নিতে দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কিছুই বলছে না।

যাত্রাবাড়ীর গোবিন্দপুর এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীপড়ুয়া ছেলে পড়াশোনায় হঠাত্ অমনোযোগী হয়ে পড়লে তাকে বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে। পরে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, তার ছেলে ডান্ডিতে আসক্ত। তিনি নিজে দেখতে পান, গোলাপবাগ মাঠের পাশে তার ছেলে ৪ থেকে ৫ জন পথশিশুর সঙ্গে ডান্ডি সেবন করছে। পরে তাকে মাদক নিরাময়কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।

ডান্ডি-আসক্ত বেশ কিছু পথশিশুর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডান্ডি সেবনের পর প্রচণ্ড ঘুম আসে এবং ক্ষুধামান্দ্য দেখা যায়। কমলাপুর রেলস্টেশনে রবিন নামের এক পথশিশু ডান্ডি নেওয়ার ফাঁকে পলিথিন দেখিয়ে বলেন, ভেতরে জুতো কিংবা ফোমের কাজে ব্যবহূত আঠা রয়েছে। এই আঠা থেকে একধরনের গন্ধ বের হয়। ওই গন্ধ আমরা বারবার টানি। এতে মাথা ঝিম ঝিম করে। নেশায় মনে হয় আকাশে উড়ছি।’

পাড়া-মহল্লার হার্ডওয়্যারের দোকানে পাওয়া যায় সলিউশন গামের কৌটা ‘ডান্ডি’। জুতো পলিশওয়ালা, মোটরসাইকেল বা সাইকেল মেরামতের দোকানিদের কাছ থেকেও এটা কিনে নেয় তারা। এটা ২০ টাকা বিক্রি হলেও এখন তা ৮০ থেকে ৯০ টাকায় দোকানিরা বিক্রি করছেন বলে কয়েকজন ডান্ডিসেবনকারী জানায়।

বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড হেলথ ফর বাংলাদেশের তথ্যমতে, এক বছর আগেও এসব পথশিশুর মধ্যে ৮ থেকে ১০ ভাগ নিয়মিত ডান্ডি নিত। এখন তা বেড়ে ৫০ থেকে ৭৫ ভাগে পৌঁছেছে। এর হার আশঙ্কাজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মো. রশিদুল হক বলেন, ডেনড্রাইট (ডান্ডি) স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। জুতো তৈরির আঠায় টলুইন নামের একধরনের তরল পদার্থ থাকে, যা বাষ্পীভূত হয়ে নিশ্বাসের সঙ্গে সেবনকারীদের দেহে ঢোকে। টলুইন সেবনে ক্ষণস্থায়ীভাবে ঝিমুনি, মাথাব্যথা, ক্ষুধা না লাগা ও নিয়ন্ত্রণহীনতার উদ্রেক করে। নিয়মিত এ নেশা গ্রহণে লিভার, কিডনিসহ ব্রেইনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিষ্ক্রিয় করে ফেলে ডান্ডিসেবীদের। বেনজিন মিথাইলের প্রভাবে পথশিশুদের মস্তিষ্ক বিকৃতির আশঙ্কা রয়েছে শতভাগ।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রোর সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) নাজমুল কবির বলেন, কেন্দ্রীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গত বছর ডান্ডিতে আসক্ত পথশিশুদের চিকিত্সা দিতে ১০ বেডের একটি শিশু ইউনিট গঠন করে। সেখানে ডান্ডি-আসক্ত শতাধিক পথশিশুকে চিকিত্সা দেওয়া হয়।