শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > চরম উৎকণ্ঠায় আমলারা

চরম উৎকণ্ঠায় আমলারা

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ সরকারের শেষ সময়ে এসে অস্বস্তিতে রয়েছেন প্রজাতন্ত্রের শীর্ষ আমলারা। ২৪ অক্টোবরের পর কী পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বিরাজ করছে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে। এক্ষেত্রে সরকার ঘনিষ্ঠদের উত্কণ্ঠাই বেশি। সচিবদের মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন দেশের ভিসা ও ওপেন টিকিট কেটে রেখেছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। একাধিক সচিব, তাদের অধস্তন কর্মকর্তা ও নিকটজনদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সচিবদের অনেকেই মনে করছেন, সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে আবার ক্ষমতায় আসবে আওয়ামী লীগ সরকার। নির্বাচনকে কেন্দ্র কের কোনো ধরনের সংকট সৃষ্টি হবে না। প্রায় ৩০ জন সচিব এ রকম মনোভাব পোষণ করছেন। কিন্তু কেউ কেউ আবার মনে করছেন, নির্বাচন হলে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনগণ সে বার্তা দিয়ে দিয়েছে। তাই সরকারের শেষ সময়ে এসে মধ্যপন্থীরা নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রকাশের চেষ্টা করছেন। এরা চাইছেন, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার বদল হোক।

এ বিষয়ে এক সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমলারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হলেও দুই দশক ধরে তারা দলীয় পরিচয় দিয়ে পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। প্রশাসনে কে সরকারি দলের আর কে বিরোধী দলের, তা এখন চিহ্নিত। এ কারণেই সরকারের শেষ সময়ে অনেক সচিব বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

যে দলই ক্ষমতায় আসে সরকারি কর্মকর্তাদের কেউ কেউ তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হন উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, আমলাদের নিয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি মোটেও ঠিক নয়। দেশের প্রধান দুই দলকে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে এসে প্রশাসনকে পরিচালনা করতে হবে। তা না হলে সরকারের মেয়াদ শেষে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভীতির মধ্যে থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক। এতে সরকার তথা দেশের বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

এদিকে সরকারের শেষ সময়ে এসে বিএনপিপন্থী আমলাদের তত্পরতা ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমান সরকারের আমলে সুবিধাবঞ্চিত আমলারা বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের কাছে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন। ২৪ অক্টোবরের পর সরকারবিরোধী আন্দোলনে তারা বিএনপির পাশে থাকবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমলারা রাজনীতির অংশ না হলেও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তাদের ছাড়া কোনো সরকারের পক্ষেই প্রশাসন চালানো সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী যারা, তারা এখনই নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। তাদের বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করা হবে। আমলাদের নিজস্ব একটা ধর্ম আছে। তারা সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অবস্থানের পরিবর্তন করেন। বর্তমান সরকারের সময়ে যারা বঞ্চিত বা ওএসডি হয়েছেন, তারা স্বাভাবিকভাবেই আগামী নির্বাচনে পরিবর্তনের পক্ষেই অবস্থান নেবেন। আর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় এলে আমাদের ধ্যান-ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মকর্তাদের দিয়েই প্রশাসন সাজানো হবে। এক্ষেত্রে আমাদের সহযোগী হিসেবে যারা কাজ করতে আগ্রহী, তারাই প্রাধান্য পাবেন।’

সরকারি কর্মকর্তা ও আমলাদের উদ্দেশে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের সাম্প্রতিক এক বক্তব্য সচিবালয়সহ রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। যেসব সরকারি কর্মকর্তা ক্ষমতাসীন দলের কথামতো কাজ করবেন না, কিংবা নির্দেশ মানবেন না, সেসব কর্মকর্তা ও আমলাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হবে— মোহাম্মদ নাসিমের এমন মন্তব্য কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।

আওয়ামী লীগ নেতার এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের চাপের মুখে শীর্ষপর্যায়ের অনেক আমলাই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। এতে স্পষ্টই বোঝা যায়, প্রশাসনিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বুঝতে পারছেন, এ সরকার আর ক্ষমতায় থাকতে পারছে না। সরকার জনগণের সমর্থন হারিয়ে এখন বিকল্প উপায় খুঁজছে।

একই মনোভাব পোষণ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অবঃ) মাহাবুবুর রহমানও। এ বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার প্রশাসনকে দলীয়করণ করলেও বিএনপিপন্থী আমলারা বর্তমানে সক্রীয় হতে শুরু করেছেন। প্রশাসনে বিএনপি সমর্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই, এমন ভাবনা ঠিক নয়। নিশ্চয়ই তারা মুখ বুজে থাকবেন না। বি বার্তা