শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে চীনের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয় গত বছরের অক্টোবরে। ওই সময় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। তখন ডলারের দাম ছিল ৮১ টাকা। এখন তা ৭৮ টাকার কাছাকাছি হওয়ায় ব্যয়ও কমে আসার কথা।

অথচ কার্যাদেশ দেয়া হচ্ছে ৪০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকায়। সরকারের শেষ সময়ে বিশেষ একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় তড়িঘড়ি করে অতিরিক্ত ব্যয়ে এ কার্যাদেশ দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়নে গত বছরের ২৫ অক্টোবর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও চীনের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির অধীন এভিক ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মধ্যে একটি ঋণ চুক্তি সই হয়। এ চুক্তির ভিত্তিতে প্রকল্পের প্রাথমিক প্রকল্প প্রস্তাবনা (পিডিপিপি) গত বছরের ২০১২ সালের ১১ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

চুক্তি অনুযায়ী, প্রকল্প ব্যয়ের পুরো ২০ কোটি ডলার (১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা) সহজ শর্তে ঋণ হিসেবে দেবে চীন। কিন্তু বাস্তবায়নকাজে বিলম্বের কারণে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ কোটি ডলার (প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা)।এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহীদুল আফরোজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিস্তারিত তথ্যের জন্য জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

তিনি জানান, প্রকল্প ব্যয়সহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এখনো দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলায় এ প্রসঙ্গে এখনই মন্তব্য করা সমীচীন নয়।তবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সদস্য (অপারেশন অ্যান্ড প্ল্যানিং) এয়ার কমডোর শফিকুল আলম এ বিষয়ে বলেন, ২০০৯ সালে যখন প্রকল্পটি নেয়া হয়, তখন কেবল রানওয়ে সম্প্রসারণের কথা ছিল।

পরবর্তী সময়ে পর্যটনের উন্নয়নের জন্য বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে গেছে।১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ঋণ চুক্তি হওয়ার এক বছরের ব্যবধানে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা কেন হচ্ছে— এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনো দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। চীনের পক্ষ থেকে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হলেও তা কমানোর চেষ্টা চলছে।

জানা যায়, প্রকল্পটির আওতায় কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৭৭৫ থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার ফুটে উন্নীত করার কথা রয়েছে। আর প্রস্থ ১৫০ থেকে বাড়িয়ে ২০০ ফুটে সম্প্রসারণ করা হবে। পাশপাশি দূরত্ব পরিমাপক সরঞ্জাম, ডপলার ওমনি ডিরেকশন রেঞ্জ, অগ্নিনির্বাপক যান ক্রয় ও রানওয়ের ধারণক্ষমতাও বাড়ানো হবে।

এছাড়া আন্তর্জাতিক অবতরণ ব্যবস্থা ও স্বয়ংক্রিয় মেট্রোলজিক্যাল পর্যবেক্ষণব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে আধুনিক টার্মিনাল ভবন, ট্যাক্সিওয়ে, অ্যাপ্রোন ও বোর্ডিং ব্রিজসহ লাইটিং ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পর কক্সবাজার থেকে পিক আওয়ারে একসঙ্গে ৮-১০টি উড়োজাহাজ ওঠানামা করতে পারবে।

প্রসঙ্গত. মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জরুরি ভিত্তিতে নেয়া প্রকল্পটি ২০০৯ সালের ২৯ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন হয়। শুরুতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ৩০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হয়।

২০১১ সালের ৩ মার্চ প্রাকযোগ্য বিবেচিত নয়টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দর প্রস্তাব আহ্বান করা হয়। ওই বছরের ২৪ মে দরপত্র খোলা হয়। তাতে পাঁচটি দরপত্র পাওয়া যায়। এসব দরপত্র মূল্যায়ন শেষ করতে চলে যায় আরো ১০ মাস। এর মধ্যে প্রকল্প সংশোধনের প্রয়োজন পড়ে।

২০১২ সালের ১০ এপ্রিল সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব একনেক সভায় অনুমোদন হয়। কিন্তু এরই মধ্যে শেষ হয়ে যায় জমা পড়া দরপত্রের বৈধতার মেয়াদ। দুই দফায় গত বছরের ২৩ জুন পর্যন্ত সে মেয়াদ বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে বাড়ানো হয় সর্বনিম্ন দরদাতার দরপত্র নিরাপত্তা জামানতের (বিড বন্ড) মেয়াদও।

গত বছরের ২২ মার্চ দরপত্র মূল্যায়নের কাজ শেষ হয়। তাতে তুরস্কের কুয়ান্তা আইএনসি কনস্ট্রাকশন কোম্পানি সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। প্রতিষ্ঠানটির দর ছিল ৪২৪ কোটি টাকা। গত বছরের ২ এপ্রিল এ প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিয়োগের অনুমোদনের জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায়। ফাইলটি সেখানে পড়ে থাকে প্রায় দুই মাস। এরপর বিমানমন্ত্রীর সুপারিশসহ তা অনুমোদনের জন্য গত বছরের ২৮ মে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উত্থাপন করা হয়।

কিন্তু একটি মহল কুয়ান্তাকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা এএমএল-টিআরসিএসবি নামে একটি যৌথ কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে তত্পরতা শুরু করে। যদিও যৌথ কোম্পানিটির প্রস্তাবিত দর ছিল কুয়ান্তার চেয়ে ৫৭ কোটি টাকা বেশি। পরে সবকিছু বাদ দিয়ে চীনের সঙ্গে জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়।