শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > সড়ক দুর্ঘটনা ও ছিনতাইয়ের কুড়িল ডার্ক ফ্লাইওভার

সড়ক দুর্ঘটনা ও ছিনতাইয়ের কুড়িল ডার্ক ফ্লাইওভার

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুল প্রত্যাশিত কুড়িল ফ্লাইওভার যানজট নিরসন করে গাড়িগুলোতে এনে দিয়েছে হায়েনার গতি। একই সঙ্গে বাড়িয়েছে সাধারণ যাত্রীদের সড়ক দুর্ঘটনা ও ছিনতাইয়ের কবলে পড়ার মতো ঘটনা।

ফ্লাইওভার সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দোকান মালিক ও সাধারণ মানুষ এমনকি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তারাও বলছেন ফ্লাইওভার গাড়ির দ্রুত চলাচলে সহায়তা করেছে। কিন্তু সমগ্র ফ্লাইওভারে পর্যাপ্ত আলোর অভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রতিরাতেই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা।

ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি ঘটে ছিনতাইও।

শুক্রবার রাতেই পৃথক ঘটনায় অন্তত তিনটি সড়ক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে ফ্লাইওভারের শ্যাওড়া ও এমইএইচমুখি অংশে। এতে ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তায় অন্ধকারে মাইক্রোবাসের চাপায় মোঃ সিরাজ ( ৩৫) ও বেছু মিয়া(৫৫) নামের দুই ভ্যান চালক গুরুতর আহত হয়েছেন।

টহলরত পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে কুর্মিটুলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। তবে সিরাজের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানান কুর্মিটোলার জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগে কর্মরতরা।

রাতে হাসপাতালে গেলে ওই দুইজন ছাড়া ময়ুরী নামের এক ভারতীয় নাগরিকও ফ্লাইওভারের এমইএইচমুখি অংশে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মোঃ তুহিন।

তুহিন জানান, শুধুমাত্র পর্যাপ্ত আলোর অভাবেই এসব সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। মাঝেমধ্যে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া লোকজনও আসেন চিকিৎসা নিতে।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার বলেন, ফ্লাইওভারে সড়ক দুর্ঘটনা এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে গেছে। অন্ধকার এলাকাটুকুতেই এই প্রবণতা বেশি।

রাতে সরেজমিনে ফ্লাইওভার পরিদর্শন করতে গেলে দেখা যায়, ফ্লাইওভারের পশ্চিম অংশ এমইএইচ ও শ্যাওড়ামুখি অংশে পুরোপুরি অন্ধকার। শুধু গাড়ির হেডলাইটই ভরসা। কিন্তু আঁকাবাঁকা ফ্লাইওভারের দু’পাশে লাইটপোস্ট থাকলেও তাতে কোন বাতি জলতে দেখা যায়নি। আবার ফ্লাইওভারের ওই অংশের নিচের রাস্তায়ও নেই আলোর ব্যবস্থা।

হায়েনার মতো ধেয়ে আসছে গাড়িগুলো, আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্ধকারের মধ্যেই দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ।

ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তার পাশের খাবার হোটেল মালিক ছানোয়ার হোসেন বলেন, অন্ধকারে না দেখতে পারার কারণে মাইক্রোবাস রাতে দুই ভ্যান চালককে চাপা দিয়েছে।

পাশের দোকান থেকে এগিয়ে এসে আরেক কর্মচারী জানান, গত বুধবার গাড়ি চাপায় গুরুতর আহত একজন হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা গেছে। শ্যাওড়া সংলগ্ন ফ্লাইওভার অংশে অন্ধকারে একটি ট্রাক তাকে চাপা দেয় বলে জানান এই কর্মচারী।
এছাড়া অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে ছিনতাইকারীরা পথচারী কিংবা অন্যান্য জায়গা থেকে মানুষজন ধরে এনে ফ্লাইওভারের আলোহীন অংশে নামিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নেয় বলে জানান রফিক নামের আরেক ব্যবসায়ী।

ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তার পাশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, অন্ধকারের সুযোগে এখানে নেশাখোরদের আড্ডাও জমজমাট। দুর্ঘটনা ও ছিনতাই রোধে অবিলম্বে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করার দাবি জানান তারা।

শুক্রবার রাতে ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তায় দায়িত্বরত খিলক্ষেত থানার উপ-পরিদর্শক হারুন অর রশিদ সড়ক দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, ফ্লাইওভারের পশ্চিম অংশের উপর ও নিচে রাস্তা অন্ধকারাচ্ছন্ন। বাতি যা আছে তা জ্বলে না অথবা জ্বালানো হয় না।

আলোহীন এই অংশে অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাতের ডিউটি করতে হয়। অন্ধকারের কারণেই এই অংশে সড়ক দুর্ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক হয়ে উঠেছে। কখন যে নিজেই গাড়িচাপা পড়ি তার নেই ঠিক। অহরহ ঘটছে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও।

দুর্ঘটনা রোধে দ্রুত পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।