শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > বজ্রপাতে দেশে প্রতিবছর ২’শ মানুষ মারা যায়

বজ্রপাতে দেশে প্রতিবছর ২’শ মানুষ মারা যায়

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
বাংলাদেশ বজ্রপাতের চরম ঝুঁকিতে আছে। বজ্রপাতে সারা পৃথিবীতে যত মানুষ মারা যায় তার ৪ ভাগের ১ ভাগ মানুষ মারা যাচ্ছে বাংলাদেশে। প্রতি বছর বাংলাদেশে বজ্রপাতে গড়ে ২০০ মানুষ মারা যাচ্ছে। ভৌগোলিক এবং আবহাওয়া সংক্রান্ত নানা কারণে বাংলাদেশে এখন বজ্রপাত বেশি হচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কায়ও বজ্রপাত বেশি হয়। আমেরিকায় বছরে প্রায় ২৫ মিলিয়ন বজ্রপাত হয়। মারা যায় প্রতি বছর গড়ে ৫০ জন। সেখানে বজ্রপাত নিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর কারণে মৃত্যুর হার কম। বজ্রপাত বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. এম এ ফারুখ এই তথ্য জানিয়েছেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক হিসেবে জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৭ বছরে বজ্রপাতে সারাদেশে ১৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও বিপুল সংখ্যক গবাদি পশুসহ অন্যান্য প্রাণী মারা গেছে। বজ্রপাতে মৃত্যু নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের এক গবেষণা তথ্যে জানা যায়, গত ৬ বছরে বজ্রপাতের ঘটনায় ২১০০ মানুষ হতাহত হয়েছে। পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও বজ্রপাত বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. এম এ ফারুখ বজ্রপাত নিয়ে গত ৬ বছর ধরে গবেষণা করছেন। তার সঙ্গে ১৬ সদস্যের টিম কাজ করছেন। তিনি সংবাদকে জানান, বাংলাদেশের গত ৬ বছরের প্রাপ্ত তথ্যে তার মতে, বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা ২ হাজার ১শর কাছাকাছি হবে। এই গবেষণায় গবাদি পশুসহ অন্যান্য প্রাণীর হিসাব নেই। সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় বলে গবেষণায় নিশ্চিত করেছেন।

তার মতে, শীতের পর বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর থেকে উষ্ণ আদ্র বাতাস আসতে শুরু করে। অন্যদিকে হিমালয় থেকে ঠাণ্ডা বায়ু আসে। দক্ষিণের গরম এবং উত্তরের ঠাণ্ডা এবং শুকনো বাতাসের সংমিশ্রণে অস্থিতিশীল বাতাস তৈরি হয়। এর থেকে বজ্র মেঘের সৃষ্টি হয়। আর অস্থিতিশীল বাতাসে মেঘ চলতে গিয়ে একটা মেঘ আরেকটা মেঘের সঙ্গে ঘর্ষণে বজ্র তৈরি হয়। মেঘ থেকে যে বজ্র মাটিতে আসে সেটাতে বজ্রপাত ঘটে। সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে বেশি বজ্রপাত হয় বলে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে। বজ্রপাত সম্পর্কে বিশিষ্ট আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, সাধারণত মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে বজ্রঝড় হয়। তবে বর্ষার সময় বজ্রপাত সবচেয়ে বেশি হয়। তিনি বলেন, বজ্রপাত সাধারণত চার ধরনের হয়। এরমধ্যে একটি হলো আকাশ থেকে মাটিতে। এটাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। অন্য ৩টি হলো, আকাশ থেকে আকাশে, মেঘ থেকে মেঘে ও অন্যটি হলো শুধু মেঘের মধ্যে হয়। বজ্রপাত থেকে মানুষকে রক্ষায় সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। জনসচেতনতা বাড়ানোর উদোগ ছাড়াও দেশব্যাপী ২৮ লাখ তাল গাছের চারা বা বীজ রোপণ করা হয়েছে। বজ্রপাতে মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। ঝড়ের আগে আকাশে মেঘ দেখা দিলে ঘরের বাইরে বের না হওয়া, বাড়িতে থাকলে জানালা বন্ধ রাখা এবং ঘরের ভিতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকা, বজ্রঝড় সাধারণত ৩০-৪৫ সেকেন্ড স্থায়ী হয়। অতি জরুরি প্রয়োজনে রাবারের জুতা পরে বাইরে যাওয়া, বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, মাঠ অথবা উঁচু স্থানে না থাকা এবং যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেয়া, বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেতে বা খোলা মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি পায়ের আঙ্গুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙ্গুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়া, সমুদ্র বা নদীতে থাকলে দ্রুত কোন ছাউনীর নিচে অবস্থান নেয়া, বজ্রপাতের সম্ভাবনা দেখা দিলে উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার, ধাতব খুঁটি, মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা; গভীর ও উলম্ব মেঘ দেখা দিলে নদী, পুকুর, ডোবা বা জলাশয় থেকে দূরে থাকা; বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতর অবস্থান করলে গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ না রাখা, সম্ভব হলে কোন কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেয়া, বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার না করা; বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির ধাতব রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ না করা, প্রতিটি বিল্ডিংয়ে বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড স্থাপন নিশ্চিত করা। কোন বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত বজ্রপাত নিরোধক ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে থাকা। বজ্রপাতের সময় মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, টিভি, ফ্রিজসহ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সুইচ বন্ধ রাখা এবং বজ্রপাতের আভাস পেলে আগেই এগুলোর প্লাগ বিচ্ছিন্ন করা- এসব সতর্কতা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

সরকার ২০১৫ সালের বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে পালন করেছে। বজ্রপাত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে খোলা মাঠে উঁচু জাতের তাল, খেজুর, সুপারি, নারিকেল ইত্যাদি গাছ লাগানোর বিষয়ে সরকার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওমর ফারুক দেওয়ান জানান, বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তির দাফন ও সৎকারের জন্য পরিবার প্রতি ২৫ হাজার টাকা এবং আহত ব্যক্তিকে ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে। নিহত ব্যক্তির পরিবারের অস্বচ্ছল ব্যক্তিকে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আত্মসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বজ্রপাতের বিদ্যমান বিপর্যয় থেকে জনজীবন রক্ষা করা সম্ভব হবে তিনি মনে করেন। সূত্র: সংবাদ