শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > শিবিরের হাতে গোলাবারুদের পাহাড়

শিবিরের হাতে গোলাবারুদের পাহাড়

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশজুড়ে ব্যাপক রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কা বাড়ছে। জাতীয় নির্বাচন ও যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকরের সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এই শঙ্কা। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকারের নীতিনির্ধারক মহল ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা। গত কয়েক দিনে সারাদেশে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও বোমাসহ গ্রেফতার হয়েছে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গি সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। উদ্ধার করা বিস্ফোরক দিয়ে দেশে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা ছিল গ্রেফতারকৃতদের। এ ল্েযই ঢাকা ও তার আশপাশে বিস্ফোরক ও বোমার বড় মজুদ গড়ে তুলেছিল তারা।

গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার বড় ধরনের নাশকতা চালাতে মাঠে নামবে জামায়াত-শিবির। গ্রুপ এসএমএসের মাধ্যমে নাশকতার আগে বার্তা পাঠানো হবে। বার্তা পৌঁছার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাণ্ডব শুরু করবে জামায়াত-শিবির। সরকারের শীর্ষপর্যায়ে দেয়া বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল, জামায়াত-শিবিরের সব নেতাকর্মীর মুক্তি, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে আজ সোমবার সারাদেশে বিােভ কর্মসূচি পালন করছে জামায়াত-শিবির। কর্মসূচি সফল করতে ঢাকা মহানগর জামায়াত-শিবির ঢাকার পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তর-দণি মোট চারটি বিভাগে ভাগ হয়ে মাঠে নামছে।

পুলিশের অভিযানে দেশের নানা প্রান্ত থেকে যে হারে বোমা ও বিস্ফোরক আটক হচ্ছে, তার ভিত্তিতে গোয়েন্দারা মনে করছেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচারাধীন নেতাদের বাঁচাতে জামায়াত-শিবির কোমর বেঁধে নেমেছে। এরই অংশ হিসেবে শুধু গত শনিবারেই রাজশাহীর বহরমপুর থেকে ৩০টি শক্তিশালী বোমা ও ৪ কেজি গানপাউডার ও বোমার বিপুল পরিমাণ স্প্লিন্টারসহ ২ জন, খোদ রাজধানী থেকে ৬২টি শক্তিশালী বোমা, জিহাদি বই ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ ১৩ শিবিরকর্মী গ্রেফতার হয়।

পুলিশ সদর দফতরের তথ্যমতে, গত ৭ মাসে (২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) দেশজুড়ে সৃষ্ট রাজনৈতিক সহিংসতায় মারা গেছেন এক বিজিবির নায়েক, ১১ পুলিশসহ প্রায় দেড়শ ব্যক্তি। আহত হয়েছেন সহস্রাধিক। যানবাহন, রাজনৈতিক দলের অফিস, পুলিশ দফতর ও সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়গুলোয় হামলা ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গ্রেফতার হয়েছে জামায়াত-শিবিরের সহস্রাধিক নেতা ও কর্মী।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলের শীর্ষ নেতাদের বাঁচাতে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের কর্মীরা গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতার সূচনা করে। ওই সহিংসতায় প্রায় দেড়শ ব্যক্তি মারা যায়। এদের মধ্যে বিজিবির এক নায়েক ও ১১ পুলিশ রয়েছে। সম্প্রতি আপিল বিভাগে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় ঘোষণার পরই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দলটির নেতাকর্মীরা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া ছাড়াও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা। দেশজুড়ে বিােভ কর্মসূচি ও হরতালের ডাক দিচ্ছে।

সূত্রগুলো বলেছে, শীর্ষ নেতাদের বাঁচাতে বড় ধরনের লড়াইয়ের প্রস্তুতিও নিচ্ছে জামায়াত-শিবির। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংগঠিত হচ্ছে তারা। এ ল্েয বিভিন্ন বাসাবাড়িতে বিস্ফোরকের পাহাড় গড়ে তোলা হচ্ছে। সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ধারণা, সরকারের শেষ সময়ে এ সহিংসতা প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। এদিকে সম্ভাব্য সহিংসতার আশঙ্কায় পুলিশ সদর দফতর পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছে। প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন ও সন্দেহভাজনদের দেহ তল্লাশি করে দেখা হচ্ছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোরও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সন্দেহজনক বাসাবাড়িতে চলছে তল্লাশি।

পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার জানান, ‘আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে পুলিশ বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের সম্পদ ও জানমাল রা করা। সে দায়িত্বই পালন করবে পুলিশ। যে কোনো ধরনের সহিংসতা কঠোর হাতে দমন করা হবে। এ ব্যাপারে কোনো রকম ছাড় দেয়া হবে না।’

এদিকে রাজনৈতিক সহিংসতার বিষয়টি মাথায় রেখে দেশজুড়ে ব্যাপক নজরদারি শুরু করেছে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। বিরোধী জোটের রাজনৈতিক অফিস ও নেতাদের গতিবিধির ওপরও কড়া নজর রাখা হচ্ছে।

এদিকে গোয়েন্দারা ধারণা দিয়েছেন, আজ ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতা চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছে জামায়াত-শিবির। তারা ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি গোপন বৈঠকও করেছে। গোয়েন্দা সূত্রমতে, এবারও তাদের টার্গেট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং সরকারের শেষ সময়ে নেতাকর্মীদের মানসিকভাবে চাঙ্গা করতে আজ সর্বোচ্চ লোক সমাগম ঘটানোর চেষ্টা করছে।

গোয়েন্দাদের মতে, ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতার চেষ্টা ব্যর্থ হলে ঢাকার বাইরেও বড় ধরনের তাণ্ডব চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াত-শিবিরের। ঢাকায় নাশকতা চালাতে দুই থেকে আড়াই হাজার প্রশিতি নেতাকর্মী বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আনা হয়েছে। তারা রাজধানীর চারপাশে ও ঢাকায় জামায়াতের বিভিন্ন নেতাকর্মীর বাসায় রয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এবার জামায়াত-শিবির সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে যাত্রাবাড়ী-ধোলাইখাল-দয়াগঞ্জ, পল্টন মোড়, ফকিরাপুল, বিজয়নগর, ধানমণ্ডি সায়েন্সল্যাব, মহাখালী, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, মিরপুর-১০ নম্বরের আশপাশের গলি, মগবাজার রেলগেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ঝটিকা মিছিলসহ যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা চালাতে পারে। তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর, হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি, আনসার উল্লাহ বাংলা টিমসহ অন্যান্য উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের নেতাকর্মী।

প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতি, প্রসিকিউটর ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিয়োজিত বিচারক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ওপর অতর্কিত হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে হামলাকারীদের।

পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, ‘প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পুলিশ প্রস্তুত।’