স্টাফ রিপোর্টার ॥
প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের নিয়ে বৈঠক করে রাষ্ট্রপতিও সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে সরকারি নাটকের যেন শেষ হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পর হঠাৎ করে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থপাচার, নৈতিক স্খলনসহ ১১টি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে-প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতিদের ডেকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি বৈঠক করেছেন এবং তাদের বুঝিয়েছেন।
তিনি বলেন, দেশের সংবিধান বিশেজ্ঞরাও বলেছেন যে, এটা সংবিধানে নেই। প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের নিয়ে বৈঠক করে রাষ্ট্রপতিও সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। এছাড়া প্রধান বিচারপতি’র বিদেশ যাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে ১১ দফা অভিযোগ উত্থাপন সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে নজীরবিহীন ঘটনা। বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনটিকে এভাবে কালিমালিপ্ত করার ঘটনা ইতিহাসে আর কখনো ঘটেনি। জনগণ কোনটি বিশ্বাস করবে, তাঁকে ছুটি দিয়ে বিদেশ পাঠানো ক্যানসার রোগজনিত অসুস্থতা নাকি তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ। প্রধান বিচারপতির ওপর আরো বেশি চাপ সৃষ্টি করার জন্যই এমন অভিযোগ করা হয়েছে। জোর করে সন্ত্রাসী কায়দায় জালিয়াতির মাধ্যমে প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য করার পর এখন চূড়ান্ত পদক্ষেপ পদত্যাগ করতে হঠাৎ এসব অভিযোগ তোলা হয়েছে বলে জনগণ বিশ্বাস করে।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, রাষ্ট্রপতি যদি প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ পেয়েই থাকেন তাহলে তিনি সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করলেন না কেন এ প্রশ্ন এখন আইনাঙ্গনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের সর্বসম্মত রায়ের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল হওয়ার কথা। নিয়ম হলো-প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উঠলে অভিযোগগুলো রাষ্ট্রপতি সুপ্রীম কোর্টের জুডিশিয়াল বিভাগে তদন্তের জন্য পাঠাবেন। তদন্তের শেষে যদি প্রমাণিত হয় তাহলে বিচারপতিকে অপসারণ করবেন আর যদি প্রমাণিত না হয় তাহলে তিনি পদে বহাল থাকবেন। রাষ্ট্রপতি এ ধরনের ব্যবস্থা না নিয়ে তিনি কেন আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের নিয়ে বৈঠক করে অভিযোগ শোনালেন তা এখন আর মানুষের বুঝতে বাকী নেই। তাঁর বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ তিনি দেশে থাকতে এসব অভিযোগ তোলা হলো না কেন? আর এসব অভিযোগ তো মনে হচ্ছে অনেক পুরনো। এতো দিন এসব অভিযোগ তোলা হলো না কেন ? প্রধান বিচারপতি বিদেশ যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে যে বিবৃতি জাতির সামনে তুলে ধরেছেন, সেই অস্থিরতা থেকেই সরকার এখন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এতো অভিযোগের নাটক সাজাচ্ছেন তা জনগণ ঠিকই বোঝে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার যে বিবৃতি দিয়েছেন সেটিও ইতিহাসে নজীরবিহীন ঘটনা দাবি করে রিজভী বলেন, এ দিকে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন-প্রধান বিচারপতি ফিরে এসে দায়িত্ব নেয়া সুদূর পরাহত।
গতকাল আইনমন্ত্রী বলেছেন-অভিযোগ সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি স্বপদে বসতে পারবেন না। আবার গতকাল আইন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলসহ সুপ্রীম কোর্ট প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পূর্বে বলেছিলেন-সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনে রদবদল শুধুমাত্র প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার। তাহলে প্রধান বিচারপতির বক্তব্য অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয়ের এই প্রজ্ঞাপনও বেআইনী। সুতরাং এখন আদালত প্রাঙ্গণে যা ঘটছে তা হচ্ছে সরকার প্রধানের একক কর্তৃত্ব বিচার বিভাগের অধীন করার জন্য যাবতীয় আয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর অদ্বিতীয় স্বৈরাচার হওয়ার পথে সকল কাঁটা সরাতেই এতো সব নির্লজ্জ দুর্বৃত্তপনা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।