শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > জাতীয় > ঝিনাই নদীর পেটে গেছে চার শতাধিক বসতভিটা

ঝিনাই নদীর পেটে গেছে চার শতাধিক বসতভিটা

শেয়ার করুন

জেলা প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল ॥
টাঙ্গাইলের বাসাইলে ভাঙনের শিকার হয়ে চার শতাধিক বসতভিটা ঝিনাই নদীর পেটে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে আরো পাঁচ শতাধিক পরিবার।

গত বর্ষা মৌসুমে ঝিনাই নদীর প্রবল স্রোতে অনেক ফসলি জমি, দুই শতাধিক বসতবাড়ি ও সামাজিক বনায়নের বাগান বিলীন হওয়ার পরও নদীপাড়ের অসহায় মানুষ শত কষ্টে টিকে ছিল। কিন্তু এ বছর উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও বিরামহীন ভারি বর্ষণে ঝিনাই নদীতে প্রবল স্রোত সৃষ্টি হয়। এতে নদী তীরবর্তী উপজেলার কাশিল, কাঞ্চনপুর, ফুলকি ও হাবলা ইউনিয়নের ২০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে।

ফলে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কাজিরাপাড়া, বিলপাড়া, মানিকচর ও আদাজান গ্রামে ৭০টি, হাবলা ইউনিয়নের বিলপাড়ায় ১০টি, কাশিল ইউনিয়নের দাপনাজোর, দেউলী, কামুটিয়া, নথখোলা, কাশিল, থুপিয়া, নাকাছিম ও বিয়ালা এলাকায় দুই শতাধিক, ফুলকি ইউনিয়নের দোহার, হাকিমপুর, জশিহাটি পশ্চিমপাড়া এবং একঢালা এলাকায় ৪০টিসহ নদী তীরবর্তী এলাকার চার শতাধিক বসতভিটা ঝিনাই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

নদী ভাঙনে ভিটামাটি, সহায়-সম্বল হারিয়ে ভাঙন কবলিত পরিবারের পথে বসার উপক্রম। ঝিনাই নদীর ভয়ালমূর্তি দেখে নদী তীরবর্তী অনেক বাসিন্দা ভয়ে বসতঘর সরিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন। কেউ কেউ রাস্তার পাশে অস্থায়ীভাবে ঘর তৈরি করে কোনোরকমে দিনাতিপাত করছে।

স্থানীয়রা জানায়, গত এক সপ্তাহে ঝিনাই নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ভাঙনে অনেক ফসলি জমি ও বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে আরো বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। এলাকার অধিকাংশ মানুষ ফসলি জমি ও ভিটাবাড়ি রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান। তা না হলে বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে ছিন্নমূলদের তালিকায় কয়েক হাজার মানুষ যোগ হবে। কৃষক পরিবারগুলোও অসহায় হয়ে পড়বে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় তিন বছর আগে ঝিনাই নদীতে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড বালু উত্তোলনের পর থেকে এ এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। এরপর থেকে প্রতি বছরই আবাদী জমিসহ বসতভিটা নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা আরো বলেন, বর্ষা শেষ হলেই ঝিনাই নদী বালুখেকোদের দখলে থাকে। প্রশাসনকে বার বার জানালেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয় না। বালুখেকোরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলাও যায় না। প্রতি বছর নদী থেকে ব্যাপক হারে বালু উত্তোলনের ফলে এ এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েই চলছে।

কাঞ্চনপুর কাজিরাপাড়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত খুসরু খান জানান, আমার ভিটাবাড়ি যেটুকু ছিল সবই নদীতে চলে গেছে। এখন পরিবার নিয়ে বসবাস করার মতো জায়গাটুকুও নেই। অস্থায়ীভাবে রাস্তার পাশে ঘর বানিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে রাত যাপন করছি।

ক্ষতিগ্রস্ত নুর ইসলাম, শাহাদত ও নয়েজ আলীসহ অনেকেই বলেন, প্রতি বছর সরকারিভাবে শুধু ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরিই করা হয় কিন্তু কোনো অনুদান দেয়া হয় না।

ভাঙন কবলিত কাঞ্চনপুরের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. আশরাফুজ্জামান বক্তার বলেন, কাঞ্চনপুর কাজিরাপাড়া, কাঞ্চনপুর বিলপাড়া, মানিকচর এলাকায় প্রায় শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত বছরও এসব এলাকার অর্ধশতাধিক বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতি বছর সরকারিভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এদের তালিকা নিলেও কোনো প্রকার অনুদান দেয়নি।

কাশিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা রাজিক বলেন, কাশিল ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত ঝিনাই নদীর তীরবর্তী এলাকা দাপনাজোর, দেউলী, কামুটিয়া, নথখোলা, কাশিল, থুপিয়া, নাকাছিম ও বিয়ালা গ্রামের দুই শতাধিক বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বসতভিটা হারিয়ে অনেকে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এই মুহূর্তে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।

ফুলকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, ঝিনাই নদীর তীরবর্তী দোহার, হাকিমপুর, জশিহাটি পশ্চিমপাড়া ও একঢালা এলাকায় ৪০টি বসতভিটা নদীর পেটে চলে গেছে। এছাড়াও অনেক কৃষকের আদাবী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল ইসলাম বলেন, ভাঙনের বিষয়ে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে বার বার জানানোর পরও তারা কোনো প্রদক্ষেপ নিচ্ছে না। ঝিনাই নদী থেকে একটি মহল অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে প্রতি বছর এ ভাঙনের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সায়মা আক্তার বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙনের বিষয়টি টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ বলেন, আমি ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। অতিদ্রুত এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। জাগোনিউজ