শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > শীর্ষ খবর > আজব শহর ঢাকা রে > যে লাউ সেই কদু

আজব শহর ঢাকা রে > যে লাউ সেই কদু

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
কবি হাসে টাকা ভাসে, গঙ্গা বুড়ির শহরে,/ আসমান তুই কাঁদিস কেন অট্টালিকার পাহাড়ে,/ মিছে হাসি মিছে কান্না, পথে পথের আড়ালে,/ গ্রিন সিগনাল রেড ওয়াইন, দেয়ালে দেয়ালে,/ এই শহর জাদুর শহর প্রাণের শহর ঢাকা রে’।  একটা গানের পর থেকে আসলেই আমাদের ঢাকা এখন সত্যি সত্যি জাদুর শহর ও যন্ত্রনার শহরে পরিনত হয়েছে। এই জাদুর শহরে দিনে-দুপুরে কত রং-বেরং এর ঘটনা ঘটে ঘটেই চলেছে।

অব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা এই নগর সাধারণ মানুষ তো বটেই; মন্ত্রী-এমপি-বিদেশী কূটনীতিক-সমাজের এলিট শ্রেণী সবাই জীবন করে তুলেছে দূর্বিসহ। নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি এবং সেবা দেয়ার লক্ষ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে প্রশাসনিক ভাবে দুই ভাগ করা হয়। কিন্তু ‘যে লাউ সেই কদু’। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনিতেই ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত মানুষ তার ওপর দায়িত্বরতদের সমন্বয়ের অভাবে ঢাকা শহর দ্রুতই মানুষের বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে। মাঝে মাঝেই স্বপ্নের ঢাকা শহর ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করে।

বঙ্গভবন; সাংবিধানিক ভাবে রাষ্ট্রের এক নম্বর নাগরিক মহামান্য প্রেসিডেন্টের বসবাস। সেই বঙ্গভবনের দক্ষিণ গেইটে সামান্য বৃষ্টিতে রুপ নেয় শীতলক্ষা-বালু নদীর। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয় একদিনের বৃষ্টিতে থৈ থৈ পানি। অফিস-ব্যাংক পাড়া খ্যাত মতিঝিল-দিলকুশা হয়ে পড়ে পানিতে টইটুম্বুর। দেশ-বিদেশে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাজধানীর যোগাযোগের ‘লাইফলাইন’ হিসেবে পরিচিত বিমানবন্দর সড়ক মহাখালী থেকে আব্দুল্লাপুর কয়েক কিলোমিটার হাঁটুপানি। অভিজাত পাড়া হিসেবে পরিচিত গুলশান-বাড্ডায় চলে নৌকা। রেল যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র কমলাপুরের পাশের নটরডেম কলেজ-আরামবাগ এলাকার পানির ঢেউ ভাসিয়ে নিয়ে যায় স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের রিক্সা-ভ্যান। সামান্য বৃষ্টিতে এই হলো স্বপ্নের শহর ঢাকার চিত্র। দেশের এই রাজধানী ক্রমান্বয়ে মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।

ইসলাম বিদ্বেষী লেখক ড. হুমায়ূন আজাদের একটি উপন্যাসের নাম ‘সব কিছু ভেঙে পড়ে’। সমকালীন বিশ্ব সাহিত্যে জীবনবাদী শিল্প ধারার ওই উপন্যাসে মানুষের ঘর-সংসার ও যাপিত জীবনের নানা বাঁকের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। হুমায়ূন আজাদের ইসলাম বিদ্বেষী লেখালেখি নিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু তাঁর উপন্যাস ‘সব কিছু ভেঙ্গে পড়ে’ রাজধানী ঢাকার শহরের নাগরিকদের কাছে যেন স্বার্থক উদাহরণ। সামান্য বৃষ্টি হলেই প্রায় দেড় কোটি লোকের বসবাস রাজধানী ঢাকায় সবকিছু ভেঙ্গে পড়ে। অচল হয়ে যায় স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। বিপর্যন্ত নাগরিক জীবন হয়ে ওঠে দূর্বিসহ। এতে করে মনে পড়ে আরেক কথাশিল্পী বাংলা সাহিত্যের রাজপুত্র হুমায়ূন আহমেদের নাটক ‘কোথাও কেই নেই’ এর কথা। ওই নাটকের মতোই যেন ঢাকাকে দেখার কেউ নেই। মানুষের দুর্ভোগ যন্ত্রণা-কষ্ট লাঘবে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই।

ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট নামের আন্তর্জাতিক একটি গবেষণা সংস্থা গত বছর এক জরীপে বিশ্বে সবচেয়ে বসবাসের অযোগ্য শহর হিসেবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে চিহ্নিত করেছে। সংস্থাটি অপরাধের মাত্রা, সংঘাতের ঝুঁকি, স্বাস্থ্যসেবার মান, বাধানিষেধের মাত্রা, তাপমাত্রা, বিদ্যালয় ও যোগাযোগব্যবস্থা বিবেচনায় নিয়ে এই মূল্যায়ন করা হয়। বিশ্বের বড় বড় শহরগুলোয় মানুষের বসবাসের ভালো-মন্দ বিবেচনার ওপর মোট ১০০ পয়েন্টের সূচকের ভিত্তিতে তৈরি করা হয় এই তালিকা। সর্বনি¤œ ৩৮ দশমিক ৭ পয়েন্ট পেয়ে বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য শহর হিসেবে বিবেচিত হয় ঢাকা। এরপর ৩৯ দশমিক ৯ পয়েন্ট পেয়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশ পাপুয়া নিউগিনির পোর্ট মোরেসবাই শহরের অবস্থান হয় দ্বিতীয়। অতপর বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে পর্যায়ক্রমে আছে নাইজেরিয়ার লাগোস (৩৯), জিম্বাবুয়ের হারারে (৩৯.৪), আলজেরিয়ার আলজিয়ার্স (৪০.৯), পাকিস্তানের করাচি (৪০.৯), লিবিয়ার ত্রিপোলি (৪২.৮), ক্যামেরুনের দৌয়ালা (৪৩.৩), ইরানের তেহরান (৪৫.৮) ও আইভরি কোস্টের আবিদজান (৪৫.৯) শহর। ঢাকা শহরে বৃষ্টি হলেই হাটু পানি, বঙ্গভবন, সচিবালয়, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কে এক দিনের বৃষ্টিতে নৌকা চলাচলের উপক্রমের দৃশ্য আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের কর্মকর্তাদের নজরে পড়লে ঢাকা শহর নিয়ে তাদের মূল্যায়ন কেমন হতো?

নাগরিক জীবনের যন্ত্রণার অপর নাম ঢাকা শহর। শহরের পরিবেশ দূষণ, যানজট এতো ভয়ঙ্কর পর্যায়ে গেছে যে ভুক্তভোগী ছাড়া অন্যের পক্ষ্যে আন্দাজ করা দূরহ। নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির জন্য রাজধানী শহরকে দুই ভাগ করে দু’টি সিটি কর্পোরেশন গঠন করা হয়। প্রশাসনিক ভাবে দুই ভাগ হলেও কার্যত নাগরিকরা কোনো সুবিধা বাড়েনি; বরং সংশ্লিষ্টদের মধ্যে একে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপানোয় যন্ত্রণা আরো বেড়ে গেছে। ঢাকা শহরের নাগরিক সুবিধা দেয়া এবং উন্নয়নে ৭টি মন্ত্রণালয় কাজ করছে। স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র, রেল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, গণপূর্ত, সড়ক ও যোগাযোগ এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া অর্থ ও পরিকল্পনাসহ আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয় পরোক্ষভাবে ঢাকার উন্নয়নের অংশীদার।

এসব মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২৬টি সেবাদানকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান হলো ঢাকা ওয়াসা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি, ডেসকো, বিটিসিএল, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বাংলাদেশ রেলওয়ে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর, স্বাস্থ্য অধিদফতর, সমাজসেবা অধিদফতর, পরিবেশ অধিদফতর, এনজিও ব্যুরো, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, তথ্য অধিদফতর, বিআরটিসি, সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রভৃতি। এর বাইরে বিশ্বব্যাংক, জাইকাসহ দেশি-বিদেশি বেশকিছু নাগরিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও এনজিও ঢাকার উন্নয়নে কাজ করছে। সব মিলিয়ে রাজধানীতে মোট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। এই যে প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে অথচ কারো সঙ্গে সমন্বয় নেই। এক সেবা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করছে; তো আরেক প্রতিষ্ঠান খোঁড়াখুঁড়ি করছে। ৭দিন পর একই রাস্তায় খুঁড়ে কাজ করছে আরেক সংস্থা। সমন্বয় না থাকায় সারা বছরই চলে সংস্কার কাজ। দুর্নীতি এবং প্রকল্পের অর্থ লুটপাটের জন্য বর্ষা মৌসুম খোঁড়াখুঁড়ির জন্য বেছে নেয়া হয়। দুর্ভোগে পড়ে নাগরিক।

নগরবিদ ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন সারাবছর ঢাকার উন্নয়ন কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের সুপারিশ করে নানামুখী প্রস্তাবনা দিচ্ছেন। কে শোনো কার কথা! রাজউক, সিটি কর্পোরেশন আর ওয়াসার মধ্যেকার বিরোধ তো সর্বমহলে আলোচিত ইস্যু।

বর্ষাকালে কমবেশি বৃষ্টি হবেই; এটাই স্বাভাবিক। ঢাকার মুসলমানরা এক সময় বৃষ্টির দিন গরুর গোশত খিচুরী খেয়ে ‘বৃষ্টি বিলাশ’ উপভোগ করতেন। সোনাতন ধর্মের লোকজন বৃষ্টির আনন্দে উদযাপন করতেন ‘বর্ষামঙ্গল’ উৎসব। বৃষ্টি এখন আর ঢাকার মানুষের কাছে বৃষ্টি বিলাশ বা বর্ষামঙ্গল উৎসব নয়; যন্ত্রণা-ভোগান্তি। দু’দিন হালকা বৃষ্টির পর তৃতীয় দিন প্রচুর বৃষ্টি হয় ঢাকা শহরে। গত মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হয়ে বুধবার দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি ঝরে বিরামহীন। টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর রাজপথগুলো যেন নদী হয়ে ওঠে। এমন এলাকা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে যেখানে হাটু পানি জমেনি। ডুবে যায় সচিবালয় এবং বঙ্গভবনের দক্ষিণ গেইট। হাজার হাজার বাড়িতে পানি ওঠে। কয়েক বছর ধরে এ চিত্র নিয়মিত। বর্ষাকালে প্রায়ই পানিজট ও যানজটে রাজধানী ঢাকা পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে। রাজধানী তথা সিটি কর্পোরেশন ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সর্বত্র ছিল একই চিত্র।

ঢাকা দক্ষিণ নামে পরিচিত পুরান ঢাকার সড়ক ও অলিগলিতে বৃষ্টির পানি হাজার হাজার বাড়ির নীচ চলায় উঠে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি করে। যাত্রাবাড়ি, দনিয়া, ধোলাই পাড়, মাতুয়াইল, রায়সাহেব বাজার, ওয়ারী, গুলিস্তান সর্বত্রই পানি আর পানি। কবি নজরুল কলেজ-জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়-ভিক্টোরিয়া পার্কের সামন থেকে শুরু করে কাজী আবদুর রউফ রোড, কলতাবাজার, ধোলাইখাল, টিপু সুলতান রোড, মালিটোলা, বংশাল, কাজী আলাউদ্দিন রোড, নারিন্দা, ওয়ারী, র‌্যাংকিং স্ট্রীট, নাজিরা বাজার, সুরিটোলা ও সিদ্দিকবাজার এলাকার কোনো কোনো অলিগলিতে কোমর পানি জমে যায়। এসব এলাকার অনেক বাড়ি এবং দোকানে পানি ঢুকে পড়ে। এসব পানির সঙ্গে স্যুয়ারেজ লাইন একাকার হয়ে আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয় পুরান ঢাকার বিশাল এলাকা। লোহা-লষ্কর ও জুতার কারখানাসহ বিভিন্ন প্লাস্টিকের কারখানার পুরনো বর্জ্য পানিতে ভেসে গোটা জনপদই পরিত্যক্ত নদীর রূপ নেয়। পানির কারণে অধিকাংশ এলাকায় গ্যাসের সংযোগ না থাকায় রান্নাবান্না না হওয়ায় দূর্বিসহ অবস্থায় পড়ে লাখ লাখ মানুষ। পুরান ঢাকার জগন্নাথ সাহা রোডে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের পৈতৃক বাড়ির নীচ তলায় জমে হাঁটুপানি। মেয়র খোকন ঢাকা উত্তরের বনানী এলাকার ১১ নম্বর রোডে থাকলেও তাকেও টিভির বদৌলতে হাটু পানিতে হাটতে দেখা যায়। পল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগর, বিজয়নগর, মালিবাগ, মগবাজার, ফার্মগেইট সব রাস্তা পানিতে ডুবে যায়। মোহাম্মদপুর, ধানম-ি, খিলক্ষেত, রামপুরা, কারওয়ানবাজার, এ্যালিফ্যান্ট রোড, হাতিরপুল এলাকায় থৈ থৈ করে পানি। সিটি কর্পোরেশনের উত্তরের অবস্থা! পত্রিকায় খবর বের হয়েছে বুধবার বিমানবন্দর থেকে বনানী অভিমুখে র‌্যাডিসন হোটেল সংলগ্ন ফ্লাইওভারটির গোড়ায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগ সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয় ‘পানির নিচে রাস্তা ভালো’। একটু বৃষ্টি হলেই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির এই অংশে হাটু-কোমর পানি হয়। অজানা বিপদ এড়াতে সড়কের ডুবে যাওয়া অংশ এড়িয়ে চলতে যানজটের সৃষ্টি হয়।

যানজট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক বিভাগ এখন এই কৌশল নিয়েছে। নগরবাসী নিজেরাও উদ্যোগী হয়ে কোথাও কোথাও লুকানো গর্ত ও ঢাকনা খোলা ম্যানহোলে গাছের ডাল বা বাঁশ পুঁতে দিয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছে। বৃষ্টিতে কার্যত রাজধানী ঢাকা ভয়ঙ্কররুপ ধারণ করে। ঘর থেকে বের হয়ে মানুষকে পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। পরিকল্পিত ভাবে নগর না হওয়া এবং শহরের ভিতরের খালগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় পানি সরে যাওয়ার পথ প্রায় বন্ধ। ফলে বৃষ্টিতে রাজপথের কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও আবার কোমরসমান। পানিবদ্ধতা আর খানাখন্দের কারণে অধিকাংশ সড়কে যান চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। এর মধ্যে প্রকট হয়ে উঠে গণপরিবহনের সংকট। প্রায় সব সড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট। ৫ মিনিটের পথ অতিক্রম করতে সময় লাগে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। গাড়ির ইঞ্জিনে পানি ঢুকে অনেক গাড়ি বিকল হয়ে যায়। পানির মধ্যে অসংখ্য প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশা ডুবে থাকতে দেখা যায়। পানির নিচে গর্ত থাকায় যাত্রীসহ রিকশা উল্টে পড়ার দৃশ্য হয়ে পড়ে স্বাভাবিক ঘটনা। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ঢাকার নাগরিক দুর্ভোগ নিরসন-উন্নয়নে দুই সিটি করপোরেশনের সমন্বয় জরুরী।

সিটি কর্পোরেশনের হাতে আরো ক্ষমতা দিতে হবে। ৭ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সেবা সংস্থাগুলোকে সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে কাজ করার বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। কারণ সিটি করপোরেশনকে রাজধানীর অভিভাবক মনে করা হলেও তারা সড়ক নির্মাণ ও মেরামত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশক নিধন ও সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়া তেমন কোনো দৃশ্যমান উন্নয়নে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পরে না। আবাসন সমস্যা, যানজট নিরসন, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সরবরাহসহ রাজধানীর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলো সিটি করপোরেশনের হাতে নেই। ঢাকা ওয়াসা, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা এনার্জি সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষসহ সব উন্নয়ন সংস্থা আলাদা মন্ত্রণালয়ের অধীন। এ কারণেই কোনো উন্নয়নকাজ একক সিদ্ধান্তে করা সম্ভব হয় না। ফলে যখন যাদের খুশি তারা উন্নয়নের নামে রাস্তা খোঁড়াখুড়ি করে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করেন। প্রয়োজনে আইনের সংশোধন করে হলেও ওয়াসা, বিদ্যুৎ বিভাগ, পূর্ত বিভাগ, রাজউক, মেট্রোপলিটন পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, সড়ক ও যোগাযোগ, বাংলাদেশ রেলওয়ে, বিআরটিএসহ সব সেবাপ্রতিষ্ঠানের কাজের সমন্বয় বাধ্যতামূলক করতে হবে। তা না হলে রাজধানী ঢাকা শহর ক্রমান্বয়ে মানুষের বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়বে। ইনকিলাব, প্রথম আলো, প্রথম বার্তা