শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > রাজনীতি > বিচারপতি ইস্যু : নতুন পথ খুঁজছে আওয়ামী লীগ

বিচারপতি ইস্যু : নতুন পথ খুঁজছে আওয়ামী লীগ

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
বিচারপতি অপসারণে সংসদের ক্ষমতা অবৈধ ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়ের পর এই বিষয়ে পরবর্তী করণীয় কী হতে পারে, তা নিয়ে ভাবছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পরই এতে নতুন কোনও নির্দেশনা দেওয়া আছে কিনা, তা আগে দেখা হবে। এরপর সংবিধানের মূলনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।

তবে ১৯৭৭ সালে সামরিক শাসকের করা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কোনোভাবেই আর থাকবে না বলে আভাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা ও সরকারের দু’জন মন্ত্রী। তারা জানিয়েছেন, সংসদের ক্ষমতা আপিল বিভাগ তার রায়ে অবৈধ ঘোষণা করলেও সেখানে বিকল্প কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিনা, পুরো রায় না পড়ে তা বোঝা যাবে না। নতুন কোনও নির্দেশনা থাকলে সেটি বিবেচনায় নেওয়া হবে। এই নিয়ে আলোচনা করা হবে সংসদে। আলোচনার মাধ্যমেই নতুন পথ বের করতে হবে। তবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল বহাল রাখার কোনও নির্দেশনা থাকলে তা নিয়ে জনপ্রতিনিধিরা সংসদে সিদ্ধান্ত নেবেন।

ক্ষমতাসীন দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, নতুন কোনও আইন করার প্রয়োজন হতে পারে, এমন সম্ভাবনা থেকে দল ও দলের অনুসারী অভিজ্ঞ আইনজীবীদের চিন্তা-ভাবনা করতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনও কোনও বিচারপতিরও পরামর্শ নেওয়া হবে, এ সংক্রান্ত নতুন আইন প্রণয়নের আগে। তারা বলছেন, আপিলের রায়ে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে ফেরানোর কোনও নির্দেশনা থাকলে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই নতুন পদ্ধতি ঠিক করা হবে। সে জন্য পুরো রায় হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় আছে ক্ষমতাসীনরা। তবে এক্ষেত্রে সংবিধানের মূল নীতির সঙ্গে অবশ্যই সামঞ্জস্য থাকতে হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রায় সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালত মার্শাল ল’ অবৈধ ঘোষণা করেছেন। সেখানে একজন সামরিক শাসকের করা অধ্যাদেশ কিভাবে বৈধ হয়? বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে সংসদ জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সংসদই এ বিষয়ে কী করা যায়, সেই সিদ্ধান্ত নেবে। নতুন কিছু করার এখতিয়ার সংসদের রয়েছে।’

গত শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বলা হয়েছে, বিচারপতি অভিসংশনের ক্ষমতা সংসদ থেকে কেড়ে নেওয়া সংক্রান্ত আদালতের দেওয়া রায় অসাংবিধানিক। সুতরাং এ ব্যাপারে নতুন কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, সে বিষয়ে সংসদ সংবিধানসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। ওই সভায় উপস্থিত একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘ইস্যুটি নিয়ে সংসদে আলোচনা হবে। এরপর নতুন কী করা যায়, তা নিয়ে কংক্রিট সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অনেক নেতাই ইঙ্গিত দেন যে, বিচারপতি অভিসংশনের ব্যাপারে নতুন পদ্ধতি কী করা যায়, সে সিদ্ধান্ত সংসদই নেবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে ওই নেতারা বলেন, ‘এখন ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত নতুন কোনও পদ্ধতি বা আইন না হচ্ছে, ততক্ষণ কোনও জটিলতার সৃষ্টি হলে রাষ্ট্রপতিই এর সমাধান দেবেন।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ কে বলেন, ‘বিচারপতি অভিসংশনের মতে দেশে কোনও জটিলতা এই মুহূর্তে তৈরি হলে সমাধানের কোনও উপায় এ পর্যায়ে থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘বিচারপতি অভিসংশন বিষয়ে আপিলের সম্পূর্ণ রায় না দেখে কোনও মন্তব্য করা যাবে না। উচ্চ আদালত মার্শাল ল অবৈধ ঘোষণা করেছেন। ফলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বাতিল হয়ে গেছে। আবার আপিলের রায়ে সংসদের ক্ষমতা অবৈধ করা হয়েছে। তবে এই বিষয়ে সুপ্রিমি কোর্ট নতুন কোনও ‘ডিরেকশন’ দিয়েছেন কিনা, জানা যায়নি। এ জন্য পুরো রায দেখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘রায়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বহাল থাকার ব্যাপারে কোনও ‘ডিরেকশন’ দেওয়া না থাকলে অবশ্যই নতুন আইন করতে হবে।

ডিরেকশন না দিয়ে যদি সংদের হাতে ক্ষমতা ও সুপ্রিম জুডিয়াশিয়াল কাউন্সিল—দু’টিই সরাসরি বাতিল বলা হয়, তাহলে শূন্যতা সৃষ্টি হবে। মার্শাল ল’ বাতিল করা হলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলও থাকার সুযোগ নেই। এখন দেখতে হবে রায়ে কী আছে। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘সংসদের হাতে ক্ষমতা বাতিল করা হলেও আপিলের রায়ে কোনও ডিরেকশন আছে কিনা, তা দেখতে হবে। তাই রায়ের কপি পুরো দেখতে হবে। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পর্যন্ত।’ তিনি বলেন, ‘যদি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল রাখার পক্ষে ডিরেকশন থাকে, তাহলে সেটা সবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। তাই আমাদের নতুন কিছু ভাবতে হবে। আর সেটা সংসদই নির্ধারণ করবে।’ বাংলা ট্রিবিউন