বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হয়ে লন্ডন যাচ্ছেন দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য, এক ভাইস চেয়ারম্যান, নির্বাহী কমিটির এক তরুণ নেতা। সাবেক এক ছাত্রনেতাও থাকতে পারেন। এমনটি জানিয়েছে কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র। এতে বোঝা যাচ্ছে, দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হবে সেখানে।
আগামী ১৫ জুলাই লন্ডন যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন খালেদা জিয়া। দেশ ত্যাগের আগে কয়েকটি সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত দিয়ে যেতে পারেন। কারণ গতবারের মতো এবারও তিনি দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে পারেন সেখানে। বলা হচ্ছে, দুই ছেলের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন। তার পরই দেশে ফিরবেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, চোখ ও পায়ের চিকিৎসা করাতে বেগম জিয়া লন্ডন যাবেন। এর আগেও তিনি সেখানে চিকিৎসা করিয়েছেন। এবারে সফরের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত হলে জানানো হবে।
একটি সূত্র বলছে, এবারের সফরের পর আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তিনি সেখানে না গেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও দেখা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই আন্দোলন, জাতীয় নির্বাচন, স্থায়ী কমিটির শূন্যপদ পূরণ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে পদায়ন, গুরুত্বপূর্ণ জেলা কমিটি গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করবেন বেগম জিয়া। সেখানে তার সঙ্গে সফরসঙ্গী নেতারাও থাকবেন। আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং এ ব্যাপারে পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতসহ পশ্চিমারা কী মনে করছেন, তাদের চাওয়া কী আলোচনায় এসব বিষয় গুরুত্ব পাবে বেশি। চলতি বছরের শেষে আন্দোলনের যে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে তার যৌক্তিতা নিয়েও বিশেষ কথা হতে পারে। এ ছাড়া কিছু স্পর্শকাতর আসনে মনোনয়নের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হতে পারে। মোদ্দা কথা, আগামীতে বিএনপির আন্দোলন ও নির্বাচনী কৌশল কী হবে তা চূড়ান্ত হতে পারে এ সফরে।
লন্ডন সফর শেষ করে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দেবেন বেগম জিয়া। রূপরেখা কী হবে তা নিয়েও সেখানে আলোচনা হবে।
খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন এক নেতা বলেন, গত কিছুদিন ধরে সরকারকে ঠিক স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা পক্ষের নানা মতে সরকারের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করেছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের খুব সাবধানে কৌশল ঠিক করতে হবে। কোনো ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। তাই বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে বিশদ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। লন্ডনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ নেতারা সে বিষয়ে আলোচনা করবেন।
জানা গেছে, সার্বিক বিষয়ের ওপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্যাদি লন্ডন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সঙ্গে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখার একটি কপিও রয়েছে।
অবশ্য এ সফরে পা ও চোখের চিকিৎসা করানো খালেদা জিয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য। বেশ কিছুদিন ধরে তার পায়ের সমস্যা কিছুটা বেড়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে চোখের অপারেশন করিয়েছিলেন লন্ডনে। চোখের ফলোআপ চিকিৎসা করতে যাওয়ার কথা ছিল আরও আগে।
স্থায়ী কমিটির শূন্যপদে কারা জায়গা পাবেন তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা আলোচনা চলছে। দলের মধ্যে এ নিয়ে কিছুটা গ্রুপিংও আছে। আবদুল্লাহ আল নোমানের মতো পোড় খাওয়া রাজনীতিকের শেষ পর্যন্ত স্থায়ী কমিটিতে জায়গা হবে কিনা তা নিয়ে কানাঘুষা চলছে। সঠিক পদ না পাওয়ায় অভিমান করে আছেন তিনি। ২১ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে তিনটি পদ খালি আছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কী হবে সে বিষয়ে সবার দৃষ্টি। কারণ একটি গ্রহণযোগ্য সরকারই পারে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে রেখে কোনোভাবেই সে রকম নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থেই বেগম জিয়া একটি গ্রহণযোগ্য রূপরেখা দেবেন। আমাদের সময়