শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ পঞ্চম

মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ পঞ্চম

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ সদিচ্ছা ও হাজার উদ্যোগে জলাশয়ে মাছ চাষে বাংলাদেশ বিশ্বের পঞ্চম। শস্য প্রবৃদ্ধির হার যেখানে শূন্যে নেমে এসেছে, হতাশায় কৃষকের উদ্যোগ স্তিমিত, সেখানে মাছচাষীরা উৎপাদন খরচ বহন করেও মুনাফা পাচ্ছেন। এ অনুপ্রেরণাই মাছ চাষে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শীর্ষ অবস্থানে নিয়ে গেছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, চাষকৃত মাছ উৎপাদনে (ফিশ অ্যাকোয়াকালচার) চীন, ভারত, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার পরই বাংলাদেশের অবস্থান। অনান্য দেশের তুলনায় এখানে সম্প্রসারণ হারও বেশি। ২০১৩ সালে প্রকাশিত ‘দ্য গ্লোবাল অ্যাকোয়াকালচার প্রোডাকশন স্ট্যাটিসটিকস ফর দ্য ইয়ার ২০১১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাছের অভয়াশ্রম ও প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ এবং মৎস্য আইন বাস্তবায়ন এ সাফল্যে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া পোনা অবমুক্তি, বিল নার্সারি স্থাপন, পোনা সংরক্ষণ কর্মসূচি, পরিবেশবান্ধব চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ, বদ্ধ জলাশয়ে মাছ চাষ নিবিড়করণ, সমাজভিত্তিক মৎস্য ব্যবস্থাপনা গ্রহণ এবং মাছচাষীদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের কারণে চাষকৃত মাছের উৎপাদন বাড়ছে।

প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে চাষকৃত মাছের উৎপাদন বছরে ১৫ লাখ ২৪ হাজার টন; যা প্রতি বছর গড়ে ১৬ শতাংশ হারে সম্প্রসারণ হচ্ছে। চীনে এর উৎপাদন ৩ কোটি ৮৬ লাখ ৬২ হাজার টন। আর ভারতে উৎপাদন ৪৫ লাখ ৭৩ হাজার, ভিয়েতনামে ২৮ লাখ ৪৫ হাজার ও ইন্দোনেশিয়ায় ২৭ লাখ ১৮ হাজার টন।

দেশে চাষকৃত মাছের উৎপাদন বাড়ার পেছনে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে জেলেদের পরিচয়পত্র বা আইডি কার্ড দেয়ায় তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে সরকারের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ মৎস্য জেলা হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে। অ্যাকোয়াকালচারের উন্নয়নে এ অঞ্চল মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। দেশে সরকারি ও বেসরকারি হ্যাচারির সংখ্যা প্রায় ৯৫০ এবং নার্সারি প্রায় ১১ হাজার। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় হ্যাচারি রয়েছে ২০০টি আর নার্সারি সাড়ে তিন হাজারের অধিক।

প্রাথমিকভাবে কয়েকটি জেলায় জেলেদের পরিচয়পত্র দেয়া হলেও ভবিষ্যতে তা সব জেলায় সম্প্রসারণ করা হবে বলে জানান মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ২০১৫ সালের মধ্যে প্রতি হেক্টরে মাছের উৎপাদন ৩ থেকে ৪ টনে উন্নীত করা হবে। মাছ চাষ বাড়ানোর জন্য অধিদফতর থেকে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে গ্রামীণ এলাকার নারীদের মাছ চাষে যুক্ত করা। পাশাপাশি চিংড়ির আবাদ সম্প্রসারণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩২ লাখ ৬২ হাজার টন মাছ উৎপাদন হয়েছে; যা আগের বছর ছিল প্রায় ৩০ লাখ ৬২ হাজার টন। এর প্রায় অর্ধেক আসছে জলাশয়ের চাষ থেকে। পুকুর, আধাবদ্ধ জলাশয়, বাঁওড় ও চিংড়ি খামারে উৎপাদন হচ্ছে ৪৮ শতাংশ মাছ। এছাড়া মুক্ত জলাশয় বা নদী ও মোহনা, সুন্দরবন, বিল, কাপ্তাই লেক ও প্লাবনভূমিতে উৎপাদন হচ্ছে ৩৪ শতাংশ। আর সমুদ্র থেকে আসছে ১৮ শতাংশ।

দেশে সমন্বিত মাছ চাষ করা গেলে অবস্থার আরো উন্নতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. নেসার আহমেদ। তিনি বলেন, দেশের নিচু সব আবাদি জমিতে রফতানিমুখী মাছ হিসেবে বাগদা চিংড়ি ছাড়াও দেশী জাতের মাছ চাষ করা সম্ভব। জমিতে বোরো ধান কাটার পরও তিন মাস পর্যন্ত পানি থাকে। তাই এসব জমিকে মাছ চাষের আওতায় আনা গেলে উৎপাদন কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, একজন মানুষের বছরে মাছের প্রয়োজন ১৮ কেজি। কিন্তু প্রয়োজনের বিপরীতে মাছ গ্রহণ করছে মাত্র ১৫ দশমিক ৪ কেজি। একজন মানুষের দৈনিক ২ দশমিক ৬ কেজি হিসাবে বাংলাদেশে ১৫ কোটি মানুষের জন্য বছরে মাছের ঘাটতি ৩ লাখ ৯০ হাজার টন। তাই চাষকৃত মাছের উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমেই এ চাহিদা পূরণ করতে হবে।

রেণু ও পোনা উৎপাদনকারীদের সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণের সুপারিশ করে ময়মনসিংহের আল-ফালাহ হ্যাচারির পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পোনা উৎপাদন খরচ বাড়ছে। পাশাপাশি পরিবহন ও সংরক্ষণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় উদ্যোক্তাদের অর্থসংকটে পড়তে হয়। তাই হ্যাচারি ও নার্সারির উৎপাদনকারীরা আর্থিক সুবিধা পেলে তারা জোরাল ভূমিকা রাখতে পারবেন।

প্রসঙ্গত. জিডিপিতে মৎস্য এবং প্রাণী ও পোলট্রি খাতের অবদান ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও কৃষিঋণ বিতরণে মৎস্য খাত উপেক্ষিতই রয়েছে। গত অর্থবছরে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা কৃষিঋণের মধ্যে মৎস্য খাতে বিতরণ হয়েছে এর মাত্র ১০ শতাংশ।