স্টাফ রিপোর্টার ॥
ভরা মৌসুমেও সংকট চলছে চালের বাজারে। এ কারণে চালের দাম কমাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। সরকারের চাল মজুদে ঘাটতি, হাওরের বন্যা, সারা দেশে উৎপাদন কম হওয়া এবং মিল কারখানায় পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকাকে চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বলছেন ব্যবসায়ীরা। আর সরকার বলছে বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে চাল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে।
রাজধানীর অন্যতম পাইকারী চালের বাজার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট। এখান থেকে চাল সরবহার করা হয় আশপাশের এলাকায়। পাইকারী দরে ব্যবসায়ীরা এখান থেকে চাল কিনে নিয়ে যান। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, এ বছর প্রতি কেজি বোরো ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে ২২ টাকা, আর প্রতি কেজি চাল উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৩১ টাকা। এ হিসাবে সরকার চালকল মালিকদের কাছ থেকে ৩৪ টাকা কেজিতে সিদ্ধ চাল এবং ৩৩ টাকা কেজিতে আতপ চাল কেনার জন্য দাম নির্ধারণ করে। চালকল মালিকরা খাদ্যমন্ত্রী ও খাদ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে মিটিং করে এই দামে সরকারকে চাল দিতে রাজি হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের সবচেয়ে বেশি মানুষ যে মোটা চালের ভাত খায় তা ৩৬-৩৭ টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হ”েছ ৪১-৪২ টাকা কেজি পাইকারী দরে। খুচরা বাজারে এ দাম ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মিনিকেট ৫২-৫৪, নাজির ৫২-৬০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ বছর সারা দেশে ধান উৎপাদন কম হওয়ার কারণে চালের দাম বাড়তি বলে দাবি করেন চাল ব্যবসায়ী আনোয়ারুল আলম। তার মতে, হাওর অঞ্চলে বন্যার কারণে চালের বাজারে প্রভাব পড়েছে। বিদেশ থেকে সময় মতো চাল আমদানি না হওয়ায় বাজার চড়া বলে জানান তিনি।
চাল ব্যবসায়ী শওকত ওসমান বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় দাম একটু বেশি। মিল থেকে পর্যাপ্ত চাল বাজারে সময় মতো আসছে না। চালের বাজারের নিয়ন্ত্রণ এখন মিলারদের হাতে চলে গেছে বলে দাবি এ ব্যবসায়ীর। মিল থেকে পাইকারী বাজারে চালের দামে মাত্র এক টাকার পার্থক্য বলে জানান তিনি। বিদ্যুতের লোড শেডিং এর কারণে চাল সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।
চালের ওপর উচ্চহারে ট্যাক্স বসানোটা উদার আমদানি নীতির পরিপন্থী বলে মনে করেন ব্যবাসায়ীরা। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরো আগে চাল আমদানির ওপর ট্যাক্স তুলে দেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন তারা। তাহলে আজকে চালের দাম এ পর্যন্ত আসত না।
কৃষি মার্কেট ব্যবায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর রমজান মাসে চালের দাম কমে। ব্যতিক্রম এ বছর। দিন দিন দাম বাড়ছে চালের। রমজানের পর দাম আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানান এ চাল ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, হাওরে যে ক্ষতি হয়েছে সেটা হয়তো সামগ্রিক উৎপাদনের ১০ শতাংশ। আসল কথা উৎপাদন কম হয়েছে এবার। এ কারণে চালের দাম আগের তুলনায় বেশি। সরকারের কাছে পর্যাপ্ত চাল নেই, তাই মিল মালিকরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে।
এখন সরকার যদি দ্রুত চাল আমদানি করতে পারে তাহলে দেখা যাবে চালকল মালিকরা যে চালগুলো ধরে রেখেছে সেগুলোও দ্রুত বাজারে ছেড়ে দেবে। এতে করে বাজারে চালের দামে দ্রুত ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও মনে করেন কোনো কোনো ব্যবসায়ী।