শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > আন্তর্জাতিক > এ না হলে মুসলিম উম্মাহ!

এ না হলে মুসলিম উম্মাহ!

শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
যখন সারাবিশ্ব তথাকথিত ইসলামি সন্ত্রাসী জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে একাট্টা তখন কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশ। মধ্যপ্রাচ্যে কাতার উত্তেজনা সৃষ্টি করছে, এই অভিযোগে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। তাহলে ইয়েমেনে সামরিক আগ্রাসন চালাচ্ছে কারা? সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তানের এ হাল কেন? এসব বিচার বিশ্লেষণে ও সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে সারাবিশ্বের মুসলিমদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করে তুলতে এবং ইসলামের যে অপব্যবহার করে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তা প্রতিরোধে ওআইসি বা মুসলিম উম্মাহ বলতে গর্ববোধকারী দেশগুলোর পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। যা আছে তা হচ্ছে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব বিবাদে সম্পর্ক ছিন্ন, একে অপরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগ ইত্যাদি।

সম্পর্ক ছিন্নকারী চারটি দেশই কাতারের নিকটতম প্রতিবেশী। রিয়াদ কাতারের সঙ্গে নিজের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে, এবং জল, স্থল ও আকাশপথে দুই দেশের যাবতীয় দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বিচ্ছিন্ন করেছে। তাহলে পরাশক্তি যে সব দেশ মধ্যপ্রাচ্যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির সুযোগ খোঁজে তাদের কপাল পোয়াবারো। এক সফরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০ বছরে সৌদি আরবে ৩৫ হাজার কোটি ডলার অস্ত্র বিক্রি চুক্তির পর নিউইয়র্ক শেয়ারবাজারে অস্ত্রবিক্রেতা ৬টি মার্কিন কোম্পানির শেয়ারমূল্য বেড়ে গেছে। এসব অস্ত্র এখন ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টির জন্যে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে আরো বিভেদ প্রয়োজন। ইতিমধ্যে বলা হচ্ছে, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ করে নিজের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সৌদি আরব এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইতিমধ্যে কাতারের সাথে আকাশসীমা এবং বন্দরসমূহ বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি। অথচ ৫০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে মিসরের সামরিক শাসক কি করছেন তা বিশ্ববাসী দেখছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত দেশটিতে নিযুক্ত কাতারের কূটনীতিকদের দেশত্যাগের ৪৮ ঘণ্টার সময় বেধে দিয়েছে। আর বাহরাইন অভিযোগ করছে, দেশটির নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা করছিল কাতার।

তাহলে মুসলিম উম্মাহ বলে কি আর কিছু অবশিষ্ট থাকল? ওআইসি কি ভেরে-া ভাজছে। মধ্যপ্রাচ্যের এইসব দেশ আর কি করে? বিলাসিতা, তেলের অঢেল টাকা ও রাজনৈতিকভাবে পরাশক্তিগুলোর প্রতি একনিষ্ট আনুগত্য থেকে প্রভাবান্বিত হওয়া ছাড়া যদি আর কিছু করারই থাকত তাহলে এই রমজানে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেয় মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশ। কাতারের আসল পাপ (?) হচ্ছে ইরানের সঙ্গে একতাবদ্ধ হওয়া। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সৌদি আরব সফরের মধ্যপ্রাচ্য এখন ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তানের পরিণতি ভোগ করতে শুরু করবে কেবল।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর টাকার অভাব নেই। যদিও বড় ধরনের খাদ্য আমদানি, পানি সংকট, উদ্যোক্তা বিকাশের অভাব ও অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় ও টেকসই নয় এমন উন্নয়নের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে এসেছে দেশগুলো। যে সুরম্য অট্টালিকাগুলো গড়ে উঠেছে মরুভূমির বুক চিরে সেগুলো কি সিরিয়া. ইরাক কিংবা লিবিয়ার ভগ্নস্থপের পরিণতিক  লাভ করবে?

এতদিন জ্ঞান নির্ভর অর্থনীতি, সমাজ ও রাজনীতি গড়ে তোলেননি মধ্যপ্রাচ্যের শাসকরা। যা করেছেন, তা হচ্ছে বিলাসিতা। একটু ছিটেফোঁটা উদাহরণ দেওয়া যাক। সৌদি আরব, কুয়েত, আমিরাত, কাতার সহ কয়েকটি দেশের ধনাঢ্য শেখরা ব্রিটেনের অভিজাত এলাকা মেফেয়ারে প্রতিবছর ২১৫ মিলিয়ন ডলারের সম্পদ ক্রয় করে থাকেন। ২০০১ সালে মেফেয়ারের অর্ধেক বাসিন্দা বিদেশি হলেও এখন তা ৬৫ ভাগ বিদেশি বাসিন্দায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। এদের অধিকাংশ শেখ পরিবার। শেখ পরিবার বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর এমন অগুণিত ধনসম্পদ এমনিভাবে পশ্চিমা দেশগুলোর ব্যাংক গচ্ছিত বা অস্থাবর বা স্থাবর সম্পাত্তিতে পরিণত হয়েছে। এই ধনসম্পদ তারা কখনো প্রযুক্তি, বুদ্ধি ও পুঁজিতে পরিণত করেননি। এই পাপ এখন তাদের টেনে নিয়ে গেছে পরাশক্তি দেশগুলোর লেজুড়বৃত্তিতে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাশক্তি দেশগুলোর রণকৌশল বা ভূকৌশলগত খায়েশ পরিপূর্ণ করতে যখন যা বলা হবে তখন শেখ পরিবার, রাজতন্ত্র বা নামে মুসলিম উম্মাহ হয়ে তারা তাই করবেন, কারণ তারা জবান, বিবেক, বুদ্ধি ও বিবেচনা বন্ধক দিয়েছেন। দিয়েছেন বলেই ইরাকের শাসক সাদ্দাম হোসেন কার দেওয়া ‘বাতাসে’ কুয়েত ও ইরান আক্রমণ করে দেশদুটির ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিলেন তা আজো অজানা। আগামীতে সাদ্দাম হোসেনের পরিণতি মধ্যপ্রাচ্যে কে ভোগ করবেন পশ্চিমাদের সে হিসেব নিকেষ করা হয়ে গেছে আগেই।