শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > শীর্ষ খবর > বেপরোয়া অপরাধ-প্রতারণা

বেপরোয়া অপরাধ-প্রতারণা

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
ঈদ আর রমজানকে ঘিরে রাজধানীসহ সর্বত্রই অপরাধ-প্রতারণা বেপরোয়া রূপ নিয়েছে। গড়ে উঠেছে নতুন নতুন অপরাধ চক্র, যত্রতত্র পাতা হচ্ছে অভিনব প্রতারণার ফাঁদ। মহল্লার ছিঁচকে মাস্তান থেকে শুরু করে পেশাদার অপরাধী-শীর্ষ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, পকেটমারসহ বিভিন্ন চক্র নানারকম ধান্ধাবাজির মওকা নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অপহরণ, মুক্তিপণ, ছিনতাই, ডাকাতি জোর চলছে। আছে অজ্ঞান পার্টি, থুথু পার্টি, ধাক্কা পার্টির সীমাহীন দৌরাত্ম্য। বেড়ে গেছে ছিনতাই-রাহাজানি। রমরমা হয়ে উঠেছে মাদক বাণিজ্য। আগে থেকেই মজুদ হচ্ছে নানারকম মাদক।

ঈদকে সামনে রেখে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চাঁদাবাজি। পেশাদার অপরাধী থেকে মৌসুমী অপরাধী, রাজনৈতিক প্রভাবশালী থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযুক্ত কর্মকর্তা পর্যন্তÑসবাই জড়িয়ে পড়ছেন বেশুমার চাঁদাবাজিতে। সবার দরকার মোটা অঙ্কের টাকা, রমরমা ঈদ বাণিজ্য। এতসব অপরাধ-অপকর্মের ধকলে হাজারও মানুষকে সর্বস্বান্ত করার মধ্য দিয়েই চলছে ঈদ ধান্ধা। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনার পরও সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না। চাঁদাবাজি বন্ধে রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বসানো হয়েছে সিসিটিভি। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। কিন্তু সব এড়িয়ে অসাধু পুলিশ ও স্থানীয় মাস্তানরা চাঁদাবাজি করছেই। তারা শুধু টাকা আদায়ের কৌশল পরিবর্তন করেছে। ঘর থেকে দু-পা ফেলতেই হরেক প্রতারণার বেড়াজালে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মানুষজন। অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েও নিস্তার মিলছে না, অনেক ক্ষেত্রে জীবনটাও হারাতে হচ্ছে। অন্যান্য ‘অপরাধ প্রতারণাও’ ইদানীং ডিজিটাল রূপ পেতে শুরু করেছে। নূরেরচালা ও খিলবাড়ীর টেক মহল্লার কয়েকটি চিহ্নিত বাড়িতে একদল প্রতারক তরুণী বসিয়েছে নিত্য প্রতারণার আসর। তাদের পেছনে স্থানীয় থানার দুর্নীতিপরায়ণ পুলিশের নেপথ্য সহায়তাও রয়েছে। প্রতারণার আস্তানায় পুলিশের সিভিল টিম পরিচয়ে দফায় দফায় সাজানো অভিযান চালিয়ে কথিত খদ্দেরদের টাকা-পয়সা, মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

রাজধানীর সর্বত্র নানা প্রক্রিয়ায় ঈদধান্ধার চাঁদাবাজি চললেও শেরেবাংলানগর থানার বাসিন্দারা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর চাঁদাবাজির ফাঁপড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন। সেখানে চিহ্নিত সংগঠন, গ্রুপ, ক্লাবের নিয়মিত চাঁদাবাজির পাশাপাশি বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে হাসু-কাসুর বিতর্কিত সেই স্টার লিগ। প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সেলফি তুলে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে চাঁদার রেট বাড়িয়ে নেওয়া ‘স্টার লিগ’ এবার ঈদ ও রমজানকে সামনে রেখে তিন ধরনের চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীরা জানান, স্টার লিগের এক গ্রুপ বাসা-বাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসায়ীদের তালিকা নিয়ে ‘ঈদ বোনাসের’ নামে চাঁদাবাজি সচল রেখেছে। বহুরূপী এক প্রতারকের সন্ধান পাওয়া গেছে উত্তর বাড্ডা এলাকায়। সেখানে ভুয়া অফিস সাজিয়ে তিনি এসটিভির পরিচালক পরিচয় দিয়ে দেশজুড়ে সাংবাদিক কার্ড বিতরণসহ নানারকম ধান্ধাবাজির কার্যক্রম চলে সেখানে। ভাড়া করে নেওয়া মাইক্রোবাসে আইন-আদালত লেখা ব্যানার লাগিয়ে ব্যুম হাতে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে হরদম অপকর্ম করে বেড়ায় চক্রটি। চ্যানেল ফাইভের পরিচয়পত্র আর স্টিকার লাগিয়ে একদল অপরাধী সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলে বিমানের তেল চুরির বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। সিপি টিভি নামে ক্রাইম পেট্রল টিম সাজিয়ে নানারকম অপকর্ম চলছে পূর্ব মানিকনগরে। মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন অপরাধ সংঘটন করে দেশে ফেরা এক রবিউল আউয়াল খান সিপিটিভি টিমের নামে সংঘবদ্ধ অপরাধী গ্রুপ গড়ে তুলেছে। তাদের নানা কর্মকা-ে রীতিমত রহস্যময়তা ছড়িয়ে পড়েছে। তারা মিডিয়ার সাংবাদিক ও মডেল বানানোর নামে নানারকম প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে। নগরীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে টহল পুলিশ ছাড়াও বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্টের আদলে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়। সেসব স্থানে রাতভর পুলিশকে সহায়তা দেওয়ার নামে সোর্স পরিচয়ে চিহ্নিত যুবকদের আনাগোনা থাকে। তারা রিকশা যাত্রী বা নিরীহ পথচারীর দেহ তল্লাশির নামে আশপাশে নিয়ে পকেট-মানিব্যাগ হাতরাতে থাকে। একপর্যায়ে নিজেদের আঙ্গুলের চিপায় ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকিয়ে তা ভুক্তভোগীর পকেট থেকে তা উদ্ধার দেখায়। শুরু হয় দর কষাকষি, হৈচৈ, চড়-থাপ্পড়। চাহিদা মাফিক অর্থ আদায়ের পরই ভুক্তভোগীরা ছাড়া পায় বলে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহরসহ রূপগঞ্জের বেশিরভাগ এলাকা জুড়ে চলছে অভিনব প্রতারণা-অন্যরকম চাঁদাবাজি। সেখানে জেএল কর্পোরেশন নামের একটি ভূইফোঁড় কোম্পানি সাইনবোর্ড টানানোর মাধ্যমেই লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি করে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা জানান, যে কারও কেনা প্লটের ওপর রাতারাতি কোম্পানির সাইনবোর্ড লাগিয়েই নানা হম্বিতম্বি করতে থাকে গ্রুপটি। তারা একেকটি প্লট বাবদ ২০/৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করে থাকে।

ঈদ ও রমজানকে সামনে রেখে বৃহত্তর মিরপুর জুড়ে চলছে ডিএসপি বাবুল গ্রুপের সীমাহীন উৎপাত। ৪০/৪৫ জন চিহ্নিত অপরাধী তার সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য। ডিএসপি বাবুলের বিরুদ্ধে কাফরুল, পল্লবী ও ভাষানটেক থানাতেই অন্তত ২৩টি মামলা ও জিডি রয়েছে। কিন্তু সরকার দলীয় এক এমপি’র আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় পুলিশ তার দিকে ফিরে তাকাতেও সাহস পায় না। ডিএসপি বাবুলের সহযোগী হাফিজ-কালাপানি এলাকায়, রুহুল-ভাষানটেক এলাকায়, আসলাম ও মানিক বাইশটেকি এলাকায় জোরছে মাদক ব্যবসা চালায়। অপর সহযোগী শ্যামল পল্লীর হান্নান, সৈয়দ আলী, মজিবর, হানিফ, তারেকসহ ১০/১২ জন পরিচালনা করে কার্ড-জুয়া। ডিএসপির তত্ত্বাবধানে কারেন্ট রুবেল, কারেন্ট সুমন, হাতকাটা মিন্টু, কারেন্ট রাসেলসহ ৬/৭ জন চোরাই বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান ও চাঁদা আদায়ে তৎপর থাকছে। তাছাড়া স¤্রাট রিপন, জুয়েল, জাহাঙ্গীর, ডিস সোহাগ, কামাল, নওয়াব, ভাগিনা মামুন, হান্নান, হানিফসহ ১৫/১৬ জন অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসী জায়গা জমি জবর দখল, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, যাকে তাকে আটক করে নির্যাতন চালানোসহ ডিএসপি বাবুলের ভাড়াটে বাহিনী হিসেবে নানা অপরাধ অপকর্মে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। নানা প্রলোভনে নতুন কৌশলে অপহরণ-মুক্তিপণ আদায় ও ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটাচ্ছে দুর্র্ধষ নারী অপরাধী চক্র। কখনো কখনো গায়ে পড়েই কারও সঙ্গে বিবাদ সৃষ্টি করছে, ‘কু’প্রস্তাব দেওয়ার মিথ্যা কথা বলেও পথেঘাটে জিম্মি করে টাকা আদায় করছে এ চক্রের সদস্যরা। চক্রগুলো উত্তরা, গুলশান, ধানমন্ডি ও বারিধারার মতো অভিজাত এলাকায় সক্রিয়। চন্দ্রিমা উদ্যান, শ্যামলীর শিশুমেলা, মিরপুর চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, শাহবাগের শহীদ জিয়া শিশুপার্ক, রমনা পার্ক, গুলিস্তান, মতিঝিলসহ আরও কিছু স্থানে এসব নারী অপরাধী সিন্ডিকেটের তৎপরতা রয়েছে। ঈদ সামনে রেখে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের দখল নিয়েছে চিহ্নিত খুনি ও চাঁদাবাজচক্র। টার্মিনালের চিহ্নিত চাঁদাবাজচক্র কয়েক বছর পলাতক থাকলেও এবার তারা সদলবলে হাজির হয়েছে এবং বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়েছে। চক্রটি বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টারের উপর চাঁদা ধার্য করা ছাড়াও পার্ক সংলগ্ন রেলওয়ের জায়গা দখল করে নানা স্থাপনা তুলে মোটা টাকায় বরাদ্দ দিচ্ছে। এদিকে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে পুরো রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা বাস-মিনিবাস টার্মিনালের চাঁদা তুলছে বারো ভুতে। সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে মসজিদ-মাদ্রাসার হুজুররাও সেখানে রিসিট দিয়েই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিন