শুক্রবার , ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ , ১২ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > আন্তর্জাতিক > যুদ্ধ পাল্টে দিয়েছে ইরাকের রমজান

যুদ্ধ পাল্টে দিয়েছে ইরাকের রমজান

শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী অভিযান চালানোর আগে মোহামেদ আল আজাউই বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। যুদ্ধ শুরুর পর নিরাপত্তার কারণে পরিবারসহ দেশ ছাড়েন। জর্দান, সিরিয়া, রাহরাইন হয়ে বর্তমানে কাতারের রাজধানী দোহায় আছেন। ২০১০ সাল থেকেই তিনি দোহাতে আছেন। কিন্তু ইরাকের রমজান মাসের কথা ভোলেন তিনি।

বাড়ির দরজা খুলতে খুলতে মোহামেদ বলেন, ‘জানতে চান ইরাকের রমজান কেমন ছিল? যুদ্ধ শুরুর আগে রোজা কেমন ছিল সেটা বলতো পারবো। তবে খাবারের বর্ণনা আমি সেভাবে দিতে পারবো না। এটা আমার স্ত্রী খুব ভালো বলতে পারবে।’
মোহামেদের শৈশব কেটেছে বাগদাদে। যেখানে পুরো পরিবার একসঙ্গে বসে ইফতার করতেন। সব খাবার নিয়ে তারা মেঝেতে বসে একসঙ্গে খেতেন। ইফতারে বিশেষ খাবার হিসেবে থাকতো কাবাব, ভাতের একটি বিশেষ ডিশ এবং পায়েশ।

স্মৃতি হাতড়ে বলেন, ‘আমি যখন ছোট ছিলাম তখন জ্যামের খালি জারের মধ্যে মোমবাতি বসিয়ে লণ্ঠন বানাতাম। এটা ইফতারের সময় পাশে রাখতাম। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাচ্চারা ক্যান্ডি ও মিষ্টি চাইতো। রমজান মাস শেষে আমরা সবাই আগ্রগ নিয়ে ঈদের জন্য অপেক্ষা করতাম। আমরা ঈদের কাপড় বানাতাম। সেটা বের করতাম ঈদের আগের দিন। তার আগ পর্যন্ত লুকিয়ে রাখতাম। আর ঈদ ছিল আমাদের কাছে বড় উৎসবের। আমরা বাচ্চারা সারাদিন খেলতাম, বড়দের সালাম করতাম এবং সালামি নিতাম।’

২০০৩ সালে দেশ ছাড়ার পর মোহামেদের সন্তান ও স্ত্রী দেশের কথা খুব বলে। তিনি বলেন, ‘ইরাকে অভিযান শুরুর পরই আমি দেশ ছেড়ে চলে আসি। তাই আমার স্মৃতি আজও ওই পর্যন্তই আটকে আছে।’

মোহামেদের স্ত্রী হায়ফা বলেন, ‘যুদ্ধের ভেতরও ইরাকে রমজানের ঐতিহ্য একটুও কমেনি। পরিবারের লোকজন একসঙ্গে ইফতার করে। প্রতিবেশীরা ইফতারের বিশেষ খাবার প্র¯‘ত করতে সাহায্য করে।’ এখনই সেইসব দিনের কথা ভোলেননি তিনি।

তিনি বলেন, যুদ্ধ শুরু পর দিনের অনেকটা সময় বিদ্যুৎ থাকতো না। তবে এটা তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার রান্না থেকে বিরত রাখতে পারেনি। একটা সময় ইরাক সরকারও রেশনে খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিল। যে চাল তাদের দেওয়া হতো সেটা থেকে প্লাস্টিকের গন্ধ বের হতো।

মোহামেদ বলেন, ‘মার্কিন আগ্রসনের পর ইরাকে রমজানের সেই আনন্দ আর অনুভব করা যায় না। যখন পরিবারের অনেক সদস্যই প্রাণ হারায়, খাবারের ব্যবস্থা করা যায় না তখন কীভাবে সবাই আনন্দ করবে? তারপরও এখন পরিবারগুলো ইফতারের সময় একত্রিত হয়। সবই করে শুধু মনে আনন্দটাই নেই।’ সূত্র : আল-জাজিরা।