শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমার মাত্র দুই সেন্টিমিটার নিচে

রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমার মাত্র দুই সেন্টিমিটার নিচে

শেয়ার করুন

জেলা প্রতিনিধি, রাজশাহী ॥ উজান থেকে নেমে আসা ঢলে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা গ্রাস করছে পদ্মা।

এদিকে, পদ্মার পানি এখন বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। বর্তমানে বিপদসীমার মাত্র দুই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মা নদীর পানি।

ধারণা করা হচ্ছে, সোমবার বিকেলের মধ্যে তা বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ফলে, দীর্ঘ ১০ বছর পর রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে যাচ্ছে।

অপরদিকে, পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ভারতের এপারে থাকা রাজশাহীর পবা সীমান্ত। অব্যাহত ভাঙনের মুখে এরই মধ্যে কয়েক কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা ঢুকে পড়েছে ভারতের মধ্যে।

জানা যায়, রোববার সন্ধ্যায় পদ্মার পানি বিপদসীমা থেকে চার সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছিল। সন্ধ্যায় পানির উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৪৬ মিটার। সোমবার সকালে তা দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৪৮ মিটারে। অথচ রাজশাহীতে পদ্মার পানির বিপদসীমা হচ্ছে ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। ফলে, পদ্মার পানি বর্তমানে মাত্র দুই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির কারণে রাজশাহীর চরাঞ্চলসহ নদীপাড়ের বাড়িঘরগুলোতে পানি উঠে গেছে। এতে করে মানুষের চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। ডুবে গেছে শত শত হেক্টর জমির ফসল। বাধ্য হয়ে পানির দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে গবাদিপশু।

এছাড়া পানি বৃদ্ধিতে শহর রক্ষা বাঁধের ৬/৭টি পয়েন্ট ঝুঁকিতে পড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাঁধ রক্ষার জন্য ওই পয়েন্টগুলোতে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

বর্তমানে রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের চর মাঝাড়দিয়াড়, বসরী, নবগঙ্গা, সোনাইকান্দি, বেড়পাড়া, কসবা এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। এতে উভয় পাড়ের সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ডুবে গেছে প্রায় দুই হাজার বিঘা জমির আউশ ও আমন আবাদ।

পবার হরিয়ান ইউপি চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বাচ্চু জানান, পদ্মার ওপারে তার ইউনিয়নের চর খিদিরপুর, খানপুর এলাকায় ভাঙনের পাশাপাশি বাড়ি-ঘরে পানি উঠে গেছে। প্রায় ৩শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে মাচার ওপরে বসবাস করছে।

বিজিবির চর খিদিরপুর বিওপি ও কমিউনিটি ক্লিনিক পদ্মায় ভেঙে যাওয়ার পর তারা চর খিদিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়েছেন।

বর্তমানে ভাঙন ওই স্কুল থেকে মাত্র ১শ ফুট দূরে অবস্থান করায়, সেটিও চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এছাড়া চরাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ায় গবাদিপশু নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন সেখানকার মানুষজন। অনেকে বাধ্য হয়ে বাড়ি-ঘর ভেঙে কম দামে গবাদিপশু বিক্রি করে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছেন।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘রাজশাহীতে সোমবার সকালে পদ্মার পানি বিপদসীমার মাত্র দুই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে বাঁধের ৬/৭টি পয়েন্ট এখন ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

এগুলো হচ্ছে, চারঘাটের রাউথা, ইউসুফপুর, সাহাপুর, বাঘার আলাইপুর ও গোদাগাড়ীর ডাকবাংলো এলাকা।’

তবে এগুলোসহ পবার চর খিদিরপুর, খানপুর ও মাঝাড়দিয়াড় এলাকায় বাঁশের পাইলিং ও বালির বস্তা দিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, রাজশাহীতে পদ্মার বিপদসীমা ১৮.৫০ মিটার। গত ৯ বছর (২০০৪-২০০১২) রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। সর্বশেষ গত ২০০৩ সালে একবার রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছিল। ওই বছরের (২০০৩) ১৯ সেপ্টেম্বরে পদ্মার সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৮.৮৫ মিটার।