স্পোর্টস ডেস্ক ॥ ইনজুরি তাকে বারবার বেঁধে রেখেছে মাঠের বাইরে। কিন্তু প্রতিবারই তিনি সেই বাঁধন ছিঁড়ে মাঠে ফিরেছেন। ৭ বার ছুরির নিচে গিয়েছেন তবুও থেমে থাকেননি। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা পেস বোলার মাশরাফি বিন মর্তুজা যতটা যুদ্ধ করেছেন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তার চেয়ে বেশি লড়াই করেছেন ইনজুরির বিপক্ষে। আর সেই যুদ্ধে আবারও জয়ী হয়ে এখন অপেক্ষায় তিনি মাঠে নামার। বাংলাদেশের পেস আক্রমণ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শাণিত হবে যদি তিনি ফিরতে পারেন মাঠে। তবে তাকে ওয়ানডেতেই দেখা যাবে। টেস্ট থেকে অবসর না নিলেও ইনজুরির কারণে ২০০৯ সালের পর আর জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট বল হাতে তুলে নিতে পারেননি তিনি। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে তিনি শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেন। একই বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দেশের মাটিতেও শেষ টেস্ট খেলেছিলেন তিনি। তবে অনেকেই আশা করছেন নিউজিল্যান্ড সিরিজেই কি আবার ফিরবেন টেস্টে। মাশরাফিও মনে করেন বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ফিট আছেন তিনি। নিজের মাঠে ফেরা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন মানবজমিনের স্পোর্টস রিপোর্টার ইশতিয়াক পারভেজের সঙ্গে। তার মাঠে ফেরার সেই অদম্য ইচ্ছা ও বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে বলা কথার চুম্বুক অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: এখন ফিটনেসের কি অবস্থা?
মাশরাফি: আমার মনে হয় গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ফিট আছি এখন।
প্রশ্ন: অনেক দিন ধরে টেস্টের বাইরে। টেস্টে ফেরার আশা কতটা?
মাশরাফি: না, এখনও এই নিয়ে চিন্তা করছি না। এখন পর্যন্ত অনুশীলন ম্যাচও খেলিনি। তবে আশা টেস্টে ফেরার আশাতো করছি। কিন্তু এই নিয়ে এখনই বাড়তি কোন কমেন্ট করতে চাই না।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে পেসারদের ইনজুরি বড় সমস্যা। এ ইনজুরির পরিমাণ কমিয়ে আনতে কি করণীয়?
মাশরাফি: পৃথিবীর সব জায়গাতেই পেসাররা ইনজুরিতে পড়ছে। অস্ট্রেলিয়াতেও ফাস্ট বোলাররা ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করছে। আসলে ভাগ্য। তবে এখানে যেটা করা দরকার ফিজিও ও ট্রেনারের সঙ্গে রুটিনমাফিক কাজ করা। তারা যে ভাবে বলে সেই ভাবে ফিটনেস ম্যানটেইন করে চলে। তবে এত কিছু মানার পরও ভাগ্য বলে একটা বিষয় থাকে। ইনজুরি যদি শেষ পর্যন্ত হয়েই যায় তাহলেতো কিছু করার থাকে না।
প্রশ্ন: অনেক দিন ইনজুরিতে ছিলেন, এ সময়টাতে পরিবার ও আপনজনদের কাছে কতটা সাপোর্ট পেয়েছেন?
মাশরাফি: সবাই খুব হেল্প করেছে। আর আমার পরিবারতো সঙ্গেই ছিল। সেই সঙ্গে বন্ধুরাও হেল্প করেছে। বিশেষ করে টিমমেট, কোচ আর ফিজিওরাও বেশ হেল্প করেছে। আর মানুষের দোয়াতো সঙ্গে ছিলই।
প্রশ্ন: সামনে নিউজিল্যান্ড সিরিজ নিয়ে কোন টার্গেট।
মাশরাফি: আসলে দলে সুযোগ পেলে ভাল খেলা ছাড়া অন্য বিশেষ কোন টার্গেট নেই।
প্রশ্ন: ডিপিএলে মোহামেডান টিমের হয়ে মাঠে নামবেন কিনা?
মাশরাফি: আমি এখনও জানি না। এখনও আমাকে ক্লাব থেকে বলা হয়নি কিছু। হয়তো জাতীয় দলের অনুশীলন চলছে এই জন্য হয়তো তারা এখনও বলেনি। তবে এই অনুশীলন শেষ হলে হয়তো তারা ডাকবে।
প্রশ্ন: আপনার দৃষ্টি ভবিষ্যৎ পেসার হিসেবে কাকে দেখছেন?
মাশরাফি: তাসকিন ছেলেটা বেশ ভাল, কিন্তু ও এখন ইনজুরিতে। তবে রিহাব করছে আশা করি ভাল হলে আর ভাল কিছু ম্যাচ খেলতে পারলে জাতীয় দলেও চলে আসবে।
প্রশ্ন: পেসারদের জন্য কোন পরামর্শ?
মাশরাফি: আসলে সবাই এখন প্রফেশনাল। সবাই মোটামুটি প্রমেজিং যদি ফিটনেসটা ঠিক মতো ধরে রাখতে পারে। এখন বাংলাদেশে অনেক খেলা হয়, যদি খেলতে পারে অভিজ্ঞতাও বাড়বে ধীরে ধীরে। একটু সময় দিতে হবে। ঠিক হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: ফিক্সিং নিয়ে বাজে সময় পার করছে বাংলাদেশ। এই নিয়ে কিছু বলবেন?
মাশরাফি: আসলে ফিক্সিংয়ে ঢোকা আর বের হওয়া নিয়ে কিছু বলার নেই। যারা এর মধ্যে জড়িয়েছে তারাতো তাদের শিক্ষা পেয়েছে। তবে আমি মনে করি ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না। কারণ এখনকার ছেলেরা খুব চালাক তারা ভালমন্দটা বেশ বুঝে। আর তরুণদের এই সব থেকে বের করতে যে সব উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন তা বিসিবি’র নিজস্ব বিষয়। তারাই ঠিক করবে কি করা উচিত।
প্রশ্ন: ঘরোয়া ক্রিকেটগুলো নিয়মমতো করতে কি করা উচিত?
মাশরাফি: গতবছরতো ৪ দিনের ক্রিকেটটা খুব ভাল মতো হয়েছে। এই বছরও আশা করি ঠিকমতোই হবে। আসলে ৪ দিনের ম্যাচগুলো আমাদের টেস্ট খেলায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে যারা তরুণ ক্রিকেটার উঠে আসছে তাদের জন্য আরও প্রয়োজন। তাই ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়মিত হলে ভাল।