বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপ্যাধ্যায়ের কাছে পশ্চিমবঙ্গ ও সেখানকার জনগণের স্বার্থই বড়। তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি করতে গেলে তার এলাকার মানুষ বঞ্চিত হবে। সেই জন্য এবারও তিনি তিস্তা চুক্তিতে সম্মতি দিলেন না। বরং তিনি তিস্তার পানির বদলে অন্য নদীর পানি নেওয়ার প্রস্তাব করেন বাংলাদেশকে। তিনি যে সব নদীর পানি নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, তাতে বাংলাদেশ আগ্রহ দেখায়নি। কারণ বাংলাদেশের আগে তিস্তার পানিই প্রয়োজন। মমতার প্রস্তাবিত নদীগুলো থেকে রীতিমত খাল কেটে বাংলাদেশের ভূখন্ডে পানি টেনে আনা দীর্ঘমেয়াদী সময়ের ব্যাপার।
সূত্র জানায়, মমতা তিস্তার পানি দিতে চান না এটা আগে থেকেই স্পষ্ট ছিল। এর আগে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ২০১১ সালে যখন বাংলাদেশ সফর করেন তখনই তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা ছিল এবং চুক্তি হওয়ার কথাও শোনা গিয়েছিল। কিন্তু ওই সময়ে আপত্তি করেছিলেন মমতা। এরপর ২০১৫ সালে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফর করার সময়েও আশা করা হয়েছিল তিস্তা চুক্তি হতে পারে। কিন্তু ওই সময়েও মমতা তার অবস্থান জানিয়ে দেন। এতে করে তিস্তা চুক্তি হয়নি। বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে তিস্তা চুক্তি হওয়ার বিষয়টি। এবারও তিস্তা চুক্তি হয়নি। মমতা বন্দোপাধ্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি কি চান। তিনি তাকে তিস্তার পরিবর্তে তোর্সা, সঙ্কোশ ও রাইদাক নদীর পানি বন্টনের বিষয়ে বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, মমতা বন্দোপাধ্যায় তিস্তা নিয়ে আলোচনার চেয়ে তোর্সা, সঙ্কোশ ও রাইদাক নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এবং প্রধানমন্ত্রীকে বিকল্প প্রস্তাব দেন। তাদের মধ্যে ৮ এপ্রিল বৈঠক হয়। সেখানে তিস্তা চুক্তি যে মমতা করতে চান না এর জানান দেন। এতে বাংলাদেশ অনেকটাই অস্বস্তিতে রয়েছে। কারণ মমতার কাছ থেকে এমন একটি প্রস্তাব আসতে পারে এটা বাংলাদেশ আগে জানতো না। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জানতো কিনা সেটা স্পষ্ট নয়। সূত্র জানায়, মমতা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে অন্য যে তিন নদীর পানি বন্টনের প্রস্তাব দিয়েছেন এটা সাধারণভাবেই তার দেওয়ার কথা না। এটা ভারত সরকার দিতে পারে। কারণ এই ধরণের প্রস্তাব সাধারণত এক সরকার আরেক সরকারকে দেয়। আর এই ঘটনার পর বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের একজন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেখান থেকে জানানো হয়েছে, মমতা যে এই ধরণের প্রস্তাব দিবেন এটা তারা আগে ভাগে জানতেন না। এই কারণে তারাও অস্বস্তিতে রয়েছেন।
যদিও কেউ কেউ বলছে, কেন্দ্রীয় সরকার এখন তিস্তা চুক্তি হয়তো করতে চান না। কারণ তারা মমতার উপর কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চান না। তার মতামতকে প্রাধান্য দিতে চান। এই জন্য তিনি যখন তিস্তা চুক্তি করতে চাইবেন তখনই তিস্তা চুক্তি হতে পারে। কারণ মমতারও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে হিসাব নিকাশ রয়েছে। তিনি তার পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সুবিধা বাড়াতে চান।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সময়ে তার কাছে তিস্তা চুক্তির বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তা করার বিষয়ে অনুরোধ জানান। মোদি এমনও আশ্বাস দেন বর্তমান দুই সরকারের আমলেই তিস্তা চুক্তি হবে। নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমার সরকার এবং শেখ হাসিনার সরকার তিস্তা পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান করতে পারবে এবং করবে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ চেয়েছিল তিস্তা চুক্তি যে হবে এই বিষয়টি যাতে করে লিখিতভাবে রাখা হয়। তবে ভারতের তরফ থেকে তা যৌথ বিৃবতিতে লিপিবদ্ধ করা হয়নি। সেখানে আগের ঘটনার উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের জানুয়ারিতে তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদিকে এই ব্যাপারে চুক্তি করার ও সমস্যাটি সমাধান করার জন্য অনুরোধ করেন। সেই অনুরোধের প্রেক্ষিতে মোদি বলেছেন, তিস্তা চুক্তি সংক্রান্ত বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তার সরকার কাজ করছে।
উল্লেখ্য, তিস্তা চুক্তি এবারও হয়নি। কবে নাগাদ হবে তাও ঠিক হয়নি। কেবল আশ্বাস মিলেছে দুই দেশের সরকারের আমলেই এই চুক্তি করা সম্ভব হবে। যদিও তিস্তা চুক্তির বিষয়টি অনেক আগেই ঠিক করা রয়েছে। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশের সফরের সময়ে ২০১১ সালে সেটি স্বাক্ষর হবে এমনই ঠিক ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা এর বিরোধিতা করেন। এই কারণে শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি এখনও একই অবস্থায় রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হলেও সমাধানের উপায় মিলেনি। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে বার বারই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। চুক্তি করা হবে তা বলা হয়েছে। কিন্তু কোন সময় ঠিক হয়নি। বাংলাদেশ চেয়েছিল অন্তত এই সফরের সময়ে তিস্তার চুক্তি করার জন্য একটি সময় ঠিক করা যাবে এবং মমতা বন্দোপ্যাধ্যায় আর বিরোধিতা করবেন না। কিন্তু তিনি তিস্তার পরিবর্তে অন তিনটি বিকল্প নদীর প্রস্তাব দিবে সেটা হিসাবের মধ্যে ছিল না। আর তিনি যেসব নদীর পানি বন্টনের বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন ওই নদীর পানি বাংলাদেশের প্রয়োজন কতখানি তাও দেখতে হবে বাংলাদেশকে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ চেষ্টা করে যাবে তিস্তা চুক্তি করার। আর বাংলাদেশ তিস্তা চুক্তির বিষয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে অব্যাহতভাবে চেষ্টা করে যাবে।