বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
নয়াদিল্লি থেকে: ‘মুঝে কুছ পাতা নেহি দিদিমনি কেয়া করেগি। নয়া কুছ দেখা দিয়া… পানি মাঙ্গা, ইলেক্ট্রসিটি দেয়া… কই বাত নেহি… কুছ তো মিলা।’ তিস্তার পানি বণ্টন প্রসঙ্গে এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন শেখ হাসিনা। তবে তিনি আশাবাদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথায়। শেখ হাসিনা বলেন, মোদিজি বলেছেন সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে তিস্তার পানি বণ্টন বিষয়ের সমাধান করবেন। আশা করি তিনি তার কথা রাখবেন।
ভারতের প্রধানতম বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনায় কথা বলছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতে তার রাষ্ট্রীয় সফরের চতুর্থ ও শেষ দিন (১০ মার্চ, সোমবার) সকালে দিল্লির ইম্পেরিয়াল হোটেলে শেখ হাসিনাকে দেওয়া এই নাগরিক সংবর্ধনায় সমবেত হয়েছিলেন বিশিষ্ট নাগরিকরা।
তাদের উদ্দেশ্যে ইংরেজি-হিন্দি-বাংলা মিলিয়ে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে তাকে বিশ্ব নেতা হিসেবে উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন বক্তারা।
শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক পারস্পরিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে, যার ভিত গড়ে গিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। উভয় দেশের মধ্যে সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগিতা রয়েছে তারই ধারাবাহিকতায় সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ছিলো এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা আমরা দু’দেশ মিলে সম্পন্ন করেছি।
এ পর্যায়ে হিন্দিতে শেখ হাসিনা বলেন, সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন এক ঐতিহাসিক ঘটনা, যেখানে ভারতের সকলে যেন এক হয়ে গিয়েছিলেন, ঠিক যেমন মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছিলেন ভারতীয়রা। আমরা এই সহযোগিতার কথা কখনোই ভুলবো না।
কানেক্টিভিটির ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এই যোগাযোগ স্থাপনে আরও উদার হতে হবে এবং নতুন নতুন দিক উন্মোচন করতে হবে।
এরপরই তিনি আসেন তিস্তার পানি বণ্টন প্রসঙ্গে। প্রথমে ইংরেজিতে শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন শিগগির তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান করবেন। লেকিন পাতা নেহি দিদিমনি কেয়া করেগি… দিদিমনিকো সাথ বাত হুয়া…উনোনে তো নয়া কুছ দেখা দিয়া… পানি মাঙ্গা, ইলেক্ট্রিসিটি দিয়া… কই বাত নেহি… কুছ তো মিলা। ফের ইংরেজিতে শেখ হাসিনা বলেন, তবে প্রধানমন্ত্রীর কথায় আমরা ভরসা রাখছি। আশা করি শিগগিরই এর সমাধান হবে।
এরপর প্রধানমন্ত্রী ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণার জন্য ভারতবাসীর সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, যারা এক সময়ের শত্রু তাদের আমরা ক্ষমা করে দিতে পারি, কিন্তু তাদের দেওয়া সেই ক্ষত ভুলতে পারি না।
শেখ হাসিনা বলেন, উই ক্যান ফরগিভ বাট ক্যান নট ফরগেট। ২৫ মার্চ আমাদের দেশে যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে… আর যারা তা ঘটিয়েছে তা একটি বড় ক্ষত। আমি দিনটিকে গণহত্যা দিবস ঘোষণায় ভারতসহ বিশ্ব নেতৃত্বের সহযোগিতা চাই।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ভারত যে সহযোগিতার মনোভাব আমার পরিবারকে দেখিয়েছে তা আমি কখনোই ভুলবো না- বলেন শেখ হাসিনা। সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কিভাবে জার্মানি থেকে তাকে ও ছোটবোন শেখ রেহানাকে ডেকে আশ্রয় দিয়েছিলেন সে কথাও স্মরণ করেন হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, ভারতের গণতন্ত্র আর আমাদের গণতন্ত্রে পার্থক্য রয়েছে। ভারত সৌভাগ্যবান টানা গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারছে। আমাদের মিলিটারি শাসক আসে, স্বার্থবাদী শক্তি আসে, তাদের কারণে দেশ পিছিয়ে যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সবার সম্পর্কের মূলে দু’দেশের জনগণ। তাদের প্রধান সমস্যা দারিদ্র্য। আমরা যদি একসাথে কাজ করতে পারি তাহলে এই মানুষগুলোকে উন্নত জীবন দিতে পারবো।
তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ। ছোট কিংবা বড় দেশ বিষয় নয়, উভয়ই স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। আমরা বন্ধুত্বকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই… বন্ধুত্ব দিয়েই যেকোনো সমস্যার ভালো সমাধান সম্ভব। আমাদের সবার একমাত্র শত্রু দারিদ্র্য। দক্ষিণ এশিয়ার দারিদ্র্য আমরা সবাই মিলে যেন সমাধান করতে পারি সেটাই প্রত্যাশা।
ইন্ডিয়া ফাউন্ডশনের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল সাড়ে ৯টায় হোটেল ইমপেরিয়ালে। এতে বাংলাদেশ-ভারতের কৌশলগত অংশীদারিত্ব নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে আলোচকরা কথা বলেন। অংশ নেন ভারতের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী লাল কৃষ্ণ আদভানি, বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারাম।
নির্মলা আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ হাসিনাকে বর্তমান সময়ের বিশ্বনেতা বলে উল্লেখ করেন। তার নেতৃত্বে দেশ কিভাবে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তার উল্লেখ করে নির্মলা বলেন, শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে, বারবার তাকে জেলে আটকে থাকতে হয়েছে, কিন্তু এই লড়াকু নেতা তার সব মনোবল দিয়ে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
আদভানি ফুল দিয়ে শেখ হাসিনাকে বরণ করে নেন এবং উত্তরীয় পরিয় দেন। ইন্ডিয়া ফাউন্ডশেনর পক্ষ থেকে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় বিশেষ উপহার।
পরে আদভানি তার বক্তৃতা করেন। হিন্দিতে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি বলেন, আমার জানা নেই, এর আগে আর কোনো প্রতিবেশী দেশের নেতা এত দীর্ঘ সময় ধরে ভারতের প্রিয় বন্ধু ও প্রিয়জন হয়ে থেকেছেন। শেখ হাসিনাকে ভারতে যে সম্মান দেখানো হচ্ছে তার অংশ হতে পেরে আমিও ধন্য মনে করছি।
ভারত ও বাংলাদেশ মিলে উন্নয়ন কিভাবে ত্বরান্বিত করা যায় সে চেষ্টা করতে হবে। শেখ হাসিনা তার দেশকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তা অসাধারণ এবং তাতে অসাধারণ সফলতাও তিনি পেয়েছেন। এই বিষয়ে গর্ব সবারই। বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক আরও মজবুত করার ওপর জোর দেন- আদভানি।
এ সময় তিনি দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, সবাইকে যেন অন্তর্ভূক্ত করা যায় সেটাই সবচেয়ে ভালো। তিনি বলেন, এশিয়াতে আমাদের আরও কিছু দেশ রয়েছে তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সাধারণ হলে আমরা খুশি হবো। এ লক্ষ্যে ভূমিকা রাখতে শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান ভারতীয় জনতা পার্টির উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান এল কে আদভানি।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আরও অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে বলেও কামনাও করেন তিনি। বাংলানিউজ