স্পোর্টস ডেস্ক ॥
২০০৬ সালের নভেম্বরে খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি ২০ অভিষেক হয় মাশরাফির। অভিষেকের পর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে ৫৩ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এর মধ্যে রেকর্ড ২৭ ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। মাশরাফির নেতৃত্বেই দল টি ২০-তে সবচেয়ে বেশি নয়টি জয় পেয়েছে।
বোলার হিসেবে নিয়েছেন ৪১ উইকেট। এই ফরম্যাটে ১৯ রানে চার উইকেট তার সেরা বোলিং। ব্যাট হাতেও দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। ৫৩ ম্যাচের মধ্যে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন ৩৮ ইনিংসে। সর্বোচ্চ ৩৬ রানের সঙ্গে পুরো ক্যারিয়ারে ৩৭৭ রান করেন তিনি।
গতকাল টি-২০ ফরম্যাট থেকে ম্যাশ বিদায় নিলেন, জয়ের স্বাদ নিয়ে। কিন্তু এই জয়ে কি সত্যি বাংলাদেশ জিতে গেল। নাকি জয়ের পরও অমূল্যবান এক সম্পদ হারিয়ে ফেলল। হঠাৎ করে তার অবসর নেয়ার পেছনে কি কারণ? ভক্তমহলে তা নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই কোন।
১১ বছরের টি-২০ ক্যারিয়ারে অনেক প্রাপ্তি ছিল মাশরাফি বিন মর্তুজার। তিনি ক্রিকেটার হিসেবে যেমন জনপ্রিয়, তেমনি একজন বড় ভাই হিসেবে দলে বটবৃক্ষের মত ছায়া দিয়েছেন। তার বিষয়ে ডেভ হোয়াটমোর বলেছিলেন-
মাশরাফির সাথে পৃথিবীর কোনো খেলোয়াড় এর তুলনা চলেনা, তার তুলনা সে নিজেই। কারণ, নিউজিল্যান্ডের গতিদানব ‘শেন বন্ড’ দুইবার সার্জারীর পরই ভয়ে ক্রিকেট ছেড়ে দেন। বিশ্ববিখ্যাত ইংলিশ অলরাউন্ডার ‘এন্ড্রু ফ্লিন্টফ’ মাত্র একটি সার্জারীর ভয়েই ক্রিকেট কে গুডবাই জানিয়েছেন। একমাত্র ক্রিকেটার যিনি পরপর ৭টা মারাতœক সার্জারী করেও এখনো ক্রিকেট চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্বের কোন ফার্স্ট বোলারই দুইবারের বেশি সার্জারী করে খেলতে পারেননি কিন্তু তিনিই এই অসাধ্য ব্যাপার সাধ্য করেছেন।
একমাত্র পরিশ্রমী ক্রিকেটার যার ওজন বেড়ে যাচ্ছে বলে ক্রিকেট ছাড়ার আশংকা ছিল তাই তিনি ১মাসে ১২ কেজী ওজন কমিয়ে সবাইকে আশ্চর্য করে দিয়েছিলেন। যেকোন আঘাতে তাঁর বাম পা পঙ্গু হয়ে যেতে পারে এমন রিস্ক থাকা সত্ত্বেও তিনিই একমাত্র সাহসী মানব যিনি প্রতিটি ম্যাচে এখনো হিংস্র বাঘের মত বোলিং করে যাচ্ছেন। তিনিই একমাত্র দেশপ্রেমিক যার একমাত্র আদরের ৫ মাস বয়সী ছেলে এ্যপোলো হাসপাতালে ভর্তি হয়ে টাইফয়েডের সঙ্গে মূত্রাশয়ের সংক্রমণ রোগে মৃত্যুর মুখো-মুখি, অথচ দেশের স্বার্থে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকে একমাত্র ছেলের সুস্থ্যতার জন্য দু’হাত তুলে দোয়া করে দেশের জন্য মাঠে নেমেছেন।
একমাত্র ক্রিকেটার যে প্রতি ম্যাচ শেষে হাটুতে জমে যাওয়া রস নিজে সিরিঞ্জ দিয়ে বের করে ফেলেন। তিনিই সেই ক্রিকেটার যার প্রতিদিন ঘুম ভাঙ্গার পর ১৫মিনিট সময় লাগে হাঁটু ভাঁজ করে বিছানা থেকে নামতে। আমাদের একমাত্র প্লেয়ার যে কিনা ইনজুরি বিধ্বস্ত অবস্থায় বোলিং এর কষ্টকে ভুলতে নিজেকে সান্ত্বনা দেন এই বলে ‘মুক্তিযোদ্ধারা পায়ে গুলি নিয়েও যুদ্ধ করে যেতে পারলে আমি কেনো সামান্য অপারেশন নিয়ে বোলিং করতে পারবো না!’
যে মাঠে থাকার জন্য জীবনে এত কষ্ট সহ্য করতে পেরেছে, তাকে যদি ষড়যন্ত্র করে সরিয়ে দেয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশের হার হয়েছে। আর এই হারের মাসুল, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে দীর্ঘকাল ভুগাবে।