শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > সমাজের বাঁকাচোখ, অবজ্ঞা নারী উদ্যোক্তাদের বাধা

সমাজের বাঁকাচোখ, অবজ্ঞা নারী উদ্যোক্তাদের বাধা

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥

ঢাকা: ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যানকর  অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর” জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম নারীর এই অবদানের কথা বলে গেলেও তার পর অর্ধ শতাব্দী কাটিয়ে আজও  সমাজের রক্ষচক্ষু থেকে রেহাই পাওয়া হয়ে উঠেনি নারীদের। বিশেষ করে নারী যখন এগিয়ে আসার চেষ্টায় রত তখন পদে পদে বাধা তাদের রুখে দিতে চায়।

বিশেষ করে ব্যবসার ক্ষেত্রে সামাজিক রক্তচক্ষুই এখনো বড় বাধা বলে মনে করছেন ছোট থেকে বড় সকল পর্যায়ের নারী উদ্যোক্তারা।

‘একজন মেয়ে ব্যবসা করবে শুনলেই সমাজ ভাবে মেয়েটি নষ্ট গেছে। আবার কেউ কেউ অবহেলার চোখে তাকিয়ে এই মনোভাব দেখান যে, মেয়েদের দিয়ে ব্যবসা সম্ভব না, ঠিক এভাবেই বলছিলেন লুসিয়া চাকমা। রাঙামাটির মেয়ে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে একটি চাকরির পাশাপাশি জামা-জুতো-ব্যাগের ছোট খাট ব্যবসা করছেন তিনি। সামনে আরো বড় আকারে ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর কথা ভাবছেন। কিন্তু এরই মধ্যে মুখোমুখি হতে হচ্ছে নানা সমস্যার।

‘কেউ কেউ মেয়েদের ব্যবসায়ের সরাসরি বিরোধীতাও করেন। একজন মেয়েকে ব্যবসা করতে হলে প্রথমেই লড়াই করতে হয় সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে,  বলেন লুসিয়া চাকমা।

বিউটি পার্লার এমন একটি ব্যবসা যা সাধারণত নারী উদ্যোক্তারাই চালান। কারণ নারীদেরই পার্লারে যেতে হয়, নানা পার্বণে উপলক্ষ্যে। কিন্তু পার্লারের উদ্যোক্তা মানেই খারাপ মেয়ে, এমন একটা মনোভাব সমাজে প্রকটভাবে বিদ্যমান, এমনটা বলছিলেন মোহাম্মদপুরের একটি বিউটি পার্লারের উদ্যোক্তা ফাতেমা আক্তার।

তিনি বলেন, প্রথমে আমি পার্লার দেই আমার নিজের বাসার একটি রুমে। তখন থেকেই লক্ষ্য করছি, বাসা থেকে বের হলেই মানুষ বাঁকা চোখে তাকায়।  আত্মীয়-স্বজনরাও ভালো চোখে দেখে না। কেউ কেউ তো বলেই ফেলে, পার্লার মানেই খারাপ জায়গা।

তবে শুধু পার্লার কেন, মেয়েরা ব্যবসা করবেন শোনা মাত্রই সমাজ ধরে নেয় সে কোনো খারাপ কাজ করছে। এখনো সমাজের বেশিরভাগ মানুষ মনে করে মেয়েরা ব্যবসার কাজে পা বাড়িয়েছে মানেই খারাপ হয়ে গেছে, বলেন এই ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা।

এসব মতের সঙ্গে অমিল নেই বৃহৎ পর্যায়ে ব্যবসা করেন এমন নারীদেরও।

বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সঙ্গীতা আহমেদের সঙ্গে কথা হচ্ছিলো বাংলানিউজের। তিনি বলেন, একজন নারী ব্যবসা করবে তা এখনো আমাদের সমাজ স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। পুরুষ যখন কাজের কারেণ রাতে দেরিতে বাড়ি ফেরেন তখন সে নিয়ে কথা হয়না, কিন্তু সেই একই কাজের কারেণ কোনো নারী যদি রাতে দেরি করে বাসায় ফেরেন তখন তাকে সমাজে অন্য দৃষ্টিতে দেখা হয়। ফলে নারীরা মনোবল পান না।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পারিবারিকভাবেও নারীদের ব্যবসা ক্ষেত্রে সহায়তা করা হয় না বললেই চলে। কারন তারা ধরেই নেয় নারীর পক্ষে ব্যবসা করা সম্ভব না। তারপরও যেসব নারী এগিয়ে আসেন তাদের পরতে পরতে নানা জটিলতা, বলেন সঙ্গীতা আহমেদ।

ব্যাংক ঋণ ছাড়া ব্যবসা করা প্রায় অসম্ভব। এ বিষয়ে ব্যাংকে নারীরা গেলেও আশানুরূপ সহায়তা পাওয়া যায় না, বিশেষ করে বড় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের অনেকটা অবজ্ঞার চোখে দেখা হয়, বলেন এই শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবসায়ী নেতা।

সদাচরণটুকুও অনেক সময় পাওয়া যায়না, অনেক ছোটবড় উদ্যোক্তাই তাদের অভিজ্ঞতার কথা আমার কাছে শেয়ার করেছেন, বলেন তিনি।

শাহ মেরিন বিজনেস ইন্সটিটিউটের চেয়ারম্যান মাকসুদা আফরোজ চৌধুরীর সঙ্গেও কথা হলো বাংলানিউজের। তিনি শোনালেন কিছুটা আশাবাদীতার কথা।

বললেন, আমাদের দেশের নারীরা ব্যবসা ক্ষেত্রে এখন এগিয়ে আসছে। বাধা-বিপত্তি রয়েছে, কিন্তু নারীরা পিছিয়ে থাকার পাত্র নয়, তাই এগিয়ে চলছে।

কী ধরনের বাধা জানতে চাইলে একই বড় মাপের নারী ব্যবসায়ী বলেন, আসলে মূলধনের জন্যই নারীদের যুদ্ধে নামতে হয়। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ঋনের জন্য প্রতি বছর একটি বরাদ্দ রাখা হয় বাজেটে। কিন্তু আমরা যখন ব্যাংকগুলোতে সেই ঋনের জন্য যাই তখন তারা আমাদের প্রয়োজনীয় সব তথ্য দিতে গরিমসি করেন। এমন জটিলতা তৈরি করেন যাতে নারী উদ্যোক্তারা সেই ঋন নেয়া থেকে সরে আসেন।’

এসব বিষয়ে সরকারের নজর দেয়া উচিত, এই মত দিয়ে তিনি বলেন, সরকারের বিশেষ করে সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছা রয়েছে, তিনি বিভিন্নভাবে নারীদের এগিয়ে আসার পরামর্শ দিচ্ছেন, তাদের জন্য মূলধনের ঋণপ্রাপ্তি সহজ করার কথা বলেছেন, কিন্তু সমাজের সব স্তরে মানুষগুলো এখনো ততটা উদারমনা হয়ে উঠতে পারেনি, ফলে তারা বাধার সৃষ্টি করেই যাচ্ছে।

এ বিষয়ে বাংলানিউজের কথা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহার সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিটি ব্যাংকে নারীদের জন্য বিশেষ একটি ডেস্ক রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্দেশনা রয়েছে।  শুধু তাই নয় কোনো নারী উদ্যোক্তা ঋণের বিষয়ে তথ্য চাইলে তাকে শতভাগ সহায়তা দিতে ব্যাংকগুলো বাধ্য।

বাংলাদেশ ব্যাংকগুলো এগুলো মনিটরিং করে। কিন্তু তারপরও যদি কোনো ব্যাংকে নারী উদ্যোক্তারা ঋনের জন্য গিয়ে অসুবিধায় পড়তে হয় তাহলে আমাদের অভিযোগ করলে বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।

আশা করাই যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই উদ্যোগ এক সময় নারীদের ব্যবসা-বাণিজ্যে আরও এগিয়ে আনবে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম