স্টাফ রিপোর্টার ॥
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ও ভাতা পরিশোধের জন্য এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার পরেও যেসব শ্রমিক আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম।
এছাড়াও বুধবার আন্দোলনরত শ্রমিকদের বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) নিজস্ব তহবিল থেকে দুই সপ্তাহের মজুরি দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সচিবালয়ের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত দুই ঘণ্টাব্যাপী এক বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেন প্রতিমন্ত্রী।
বৈঠকে পাটমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামানিক, এবং সচিব এম এ কাদের সরকার ও ১৮টি পাটকলের শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা আজম সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর সকল শ্রমিকের বকেয়া মজুরি ও ভাতা পরিশোধের জন্য বিজেএমসিকে এক হাজার কোটি টাকা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ অর্থ পেতে কিছু দিন সময় লাগবে। তাই বিজেএমসির নিজস্ব তহবিল থেকে বুধবার শ্রমিকদের দুই সপ্তাহের মজুরি পরিশোধের জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দ দেয়া টাকা হাতে পাওয়ার পর শ্রমিকদের সব বকেয়া মজুরি পরিশোধ করে দেয়া হবে।
এ ঘোষণার পর বুধবার থেকে খুলনা অঞ্চলের আন্দোলনরত শ্রমিকদের কাজ শুরুর আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী।
তা না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এদিকে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে গিয়ে সচিবালয়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর শ্রমিক নেতারা।
এরপর পাটকল শ্রমিক সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো. সোহরাব হোসেন খুলনা অঞ্চলের অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
বিকালে চলমান আন্দোলনের বাইরে থাকা ১৮টি পাটকলের শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-সচিব দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন।
এসব নেতাদের বেশিরভাগই সরকার দলীয় শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদকও ছিলেন।
অন্যদিকে সোহরাব হোসেনের নেতৃত্বাধীন খুলনা অঞ্চলের ৯টি পাটকলের শ্রমিক নেতারা ‘নন-সিবিএ’ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ না নিয়ে সম্মেলন কক্ষের বাইরে অবস্থান নেন।
পরে তারা আলাদাভাবে বৈঠকে বসতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম তাদের বুধবার বেলা আড়াইটায় সময় দেন।
এরপর আন্দোলনরত শ্রমিক নেতারা সাংবাদিকদের বলেন, ‘নন-সিবিএদের নিয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বৈঠক করেছেন, তাই আমরা বৈঠকে যাইনি।
তার এ কথায় উত্তেজিত হয়ে অন্য অংশের নেতারা তাদের উপর চড়াও হন।
এতে উভয় পক্ষে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে মন্ত্রণালয়ের করিডোরে দুই পক্ষের নেতাদের হাতাহাতি চলতে থাকে।
পরে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে করিডোর ছাড়েন পাটকল শ্রমিক নেতারা।
উল্লেখ্য, খুলনার খালিশপুরের প্লাটিনাম, ক্রিসেন্ট, দিঘলিয়ার স্টার, আটরা শিল্প এলাকার আলীম, ইস্টার্ন, নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলের প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমিক পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন।
শ্রমিকদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, পাটশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে মিলগুলোকে পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনমুখী করতে পাট খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড়, পে-কমিশনের ন্যায় অবিলম্বে শিল্পশ্রমিকদের জন্য মজুরি কমিশন বোর্ড গঠন, ২০১৩ সালের ১ জুলাই ঘোষিত ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা প্রদান এবং খালিশপুর, দৌলতপুর, কর্ণফুলী জুট মিলের শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ীকরণসহ সব পাওনা পরিশোধ।