‘উন্নয়ন’ ভোগান্তিতে নগরবাসী

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

ঢাকা: বছরের শুরু থেকেই রাজধানীর গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া অংশে চলছে সড়ক সংস্কার ও ড্রেন নির্মাণের কাজ। এ কাজের জন্য সড়কের অর্ধেক জুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে ইটপাথরের খোয়া। মেয়র মো. হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের অংশে সড়কের অর্ধেকেরও বেশি অংশ কেটে ফাইপ বসানো হচ্ছে। সড়কটি দিয়ে একসঙ্গে পাশাপাশি দুটি গাড়ি চলতে পারে না। ফলে এখানে সারাক্ষণ লেগে থাকে যানজট।

শান্তিনগর-মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারের নিচের অবস্থাও একই। এতে এক দিকে যেমন ফ্লাইওভারের নির্মাণ সামগ্রী অন্যদিকে নিচের সড়কের অর্ধেকেরও বেশি অংশ কেটে চলছে ওয়াসার স্যুয়ারেজ লাইন স্থাপনের কাজ। ফলে সড়কটিতেও লেগে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট।

সুপ্রভাত পরিবহনের বাস চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শান্তিনগরের শান্তি কবে যে ফিরে আসবে জানি না। কোথাও কোনো শান্তি নেই। শুধু শুনি উন্নয়ন আর উন্নয়ন, আর আমাদের ভোগান্তির পর ভোগান্তি।’

তিনি জানান, গত চার বছর ধরে শান্তিনগরের এ স্থানটিতে তিনি এ দুর্ভোগ দেখে আসছেন। তাছাড়া প্রতিবছর গ্রীষ্ম থেকে শুরু করে বর্ষায়ও চলে রাস্তা খোঁড়াখুড়ি। রাস্তার বিভিন্ন অংশে বড় বড় খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। বর্ষার পানি জমে থাকলে সেইসব খানাখন্দে পড়ে প্রতিদিন দুর্ঘটনা শিকার হয় পথচারী ও যানবাহন।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকার বেশিরভাগ সড়কে চলছে উন্নয়ন কাজ। সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি সেবাদানকারী সংস্থা, ঢাকা ওয়াসা, তিতাস, ডেস্কোসহ সড়কের নিচে থাকা অন্যান্য সংস্থার সার্ভিস লাইন ঠিক করতে প্রতিনিয়ত রাস্তা কাটতে হচ্ছে। বিভিন্ন সেবাসংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভাবে সব সময়ই নগরীর সড়কে এমন চিত্র দেখা মিলে। এতে বাড়ছে নাগরিক দুর্ভোগ, অপচয় হচ্ছে সরকারি অর্থ।

এবিষয়ে খোঁড়াখুড়ির কাজে নিয়োজিত ঢাকা ওয়াসার একজন শ্রমিক বলেন, ‘মানুষের দুর্ভোগ দেখলে আমাদেরও খারাপ লাগে। আমরা কী করবো। যেভাবে নির্দেশ আসে আমরা সেভাবে পালন কনি। কিন্তু তখন কষ্ট লাগে যখন মানুষ আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে গালাগাল করে।’

‘উন্নয়ন’ ভোগান্তিতে নগরবাসীসিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, কিছু শর্ত সাপেক্ষে অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সড়ক খননের অনুমতি দিয়ে থাকে সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে জনদুর্ভোগ হয় এমন সময় সড়ক খোঁড়া যাবে না। অনুমতির ২৮ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। প্রধান সড়কগুলোতে সরকারি ছুটির দিন ও রাতের বেলায় কাজ করার বেশি তাগিদও থাকে।

কিন্তু তারা এসব নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। আগে খোঁড়াখুড়ির জন্য সিটি করপোরেশন থেকে অনুমতি নেয়া হলেও এখন আর তাও নিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। খোঁড়াখুড়ির সঙ্গে জড়িতরা নিজেদের ইচ্ছে মতই কাজ করে যাচ্ছে। জনদুর্ভোগ এড়াতে রাতে সড়ক খোঁড়ার কথা থাকলেও এখন সড়ক খোঁড়া হচ্ছে দিনে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও এসব বিষয়ে তেমন কোনো তদারকি হচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যাত্রাবাড়ি থেকে হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের অংশ সড়ক সংস্কারের পাশাপাশি চলছে খোঁড়াখুড়ি। মালিবাগ রেলগেট থেকে রামপুরা বাজার পর্যন্ত সড়কেও চলছে খোঁড়াখুড়ি। কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল সড়কে চলছে ড্রেনেজ পরিষ্কারের কাজ। তাছাড়া একযোগে নগরীর ক্ষতিগ্রস্থ ফুটপাতে চলছে উন্নয়ন কাজও। ফলে যানবাহনের পাশাপাশি পথচারীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে নগরীতে নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি বলে অভিযোগ ছিলো নগরবাসীর। নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় নগরবাসী কারও কাছে এ কথা বলতে পারেনি। গত বছরের এপ্রিলে সিটি নির্বাচনের পর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি পায় নগরবাসী। এর পর প্রতিটি ওয়ার্ডের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের এলাকার ভাঙা রাস্তাসহ সব ধরনের সমস্যা তুলে ধরেন মেয়রের কাছে। চলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকা তৈরির কাজ।

সম্প্রতি ৩০০ সড়কের তালিকা চূড়ান্ত করেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। উত্তর সিটিও চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থ সড়কের মেরামতকাজ। দক্ষিণের ক্ষতিগ্রস্থ সড়কগুলোতে জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু হয়েছে। নগরীর এতগুলো সড়কে একযোগে কাজ শুরু হওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর রাস্তাগুলো ভেঙেচুরে একাকার হয়ে আছে। একটি ওয়ার্ডও খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে রাস্তা ভাঙেনি। বিশেষ করে পুরান ঢাকার রাস্তাগুলো দুর্বিসহ করে করে তুলেছে স্থানীয়দের। দুর্ভোগ-দুর্দশার মধ্য দিয়ে তাদের চলাফেরা করতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘উন্নয়ন কাজতো করতেই হবে। তাই বলে তো রাস্তা সংস্কার বন্ধ রাখা যাবে না। তবে আমরা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে জনদুর্ভোগ যাতে না হয় সে বিষয়টি লক্ষ্য রেখে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি।’ (বাংলামেইল)

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
272829  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫