শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > রাজনীতি > আওয়ামী লীগে দেড়শ আসনে নতুন মুখ

আওয়ামী লীগে দেড়শ আসনে নতুন মুখ

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে মাঠে নেমে পড়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। মনোনয়নে পরিবর্তন আসছে ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের এমন ঘোষণার পর নবীন-প্রবীণ অনেকেই নড়েচড়ে বসেছেন। আর  এজন্য শুধু কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে লবিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। একই সঙ্গে এলাকার রাজনীতি ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন তারা। আর এই দৌড়ে সাবেক ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠন ও বিভিন্ন কারণে গত নির্বাচনে ছিটকে পড়া নেতারাও রয়েছেন। কমপে ১৫০ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হবে বলে জোর গুজব রয়েছে আওয়ামী লীগে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, আমাদের নেতাকর্মী ও আগামী দিনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা রোজার মধ্যেই সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিটি আসনে দু’তিনজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আসলে নতুন কিছু নয়, আওয়ামী লীগ একটি বিশাল দল। বিশাল কর্মী বাহিনীর পাশাপাশি প্রতিটি আসনেই একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে একাধিক নেতা মনোনয়নের জন্য মাঠে নেমেছেন। একটি আসন থেকে একাধিক নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এটা প্রতিবারই ঘটে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। এদের মধ্য থেকেই তৃণমূলের মতামত, জনগণের প্রত্যাশা ও জয়ের সম্ভবানা যার বেশি থাকবে তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। তবে যেসব এমপি জনপ্রত্যাশা পূরণে ও নেতাকর্মীদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করেছেন তাদের েেত্র দলের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত থাকবে বলেও জানান আওয়ামী লীগের এই নেতা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভরাডুবির পর নতুন করে চিন্তা করতে শুরু করে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে বিতর্কিত ও দলের মধ্যে সমালোচিত এমন সংসদ সদস্যদের আসনে পরিবর্তন আনার বিষয়ে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়া হয় দলটির নীতিনির্ধারণী মহল থেকে। এরই মধ্যে দলটির নিজস্ব এক জরিপে দেখা গেছে, ৭০ থেকে ৮০ জন এমপির অবস্থা খুবই খারাপ। এছাড়া আরও ৬০ থেকে ৭০ জনের অবস্থাও আশানুরূপ নয়। সব মিলিয়ে প্রায় দেড়শ’ আসনে পরিবর্তনের কথা ভাবছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। আর দলের মধ্যে এমন গুঞ্জনের খবরে নড়েচড়ে বসেছে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। ঈদকে সামনে রেখে এরই মধ্যে এলাকায় প্রচারণায় নেমে পড়েছেন অনেকে।

বহুল আলোচিত ও সমালোচিত সংসদ সদস্য পটুয়াখালী-৩ আসনের আওয়ামী লীগ সমর্থিত এমপি গোলাম মাওলা রনির আসনে আবারও দলীয় সমর্থন পাওয়ার জন্য এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন আখম জাহাঙ্গীর। সংস্কারপন্থী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার কারণে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন দেয়নি। কিন্তু রনির বিরুদ্ধে দলের হাইকমান্ডসহ সর্বস্তরের নেতিবাচক মনোভাবের জন্য এই আসনে আবারও দলের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী আওয়ামী লীগের এই নেতা। এজন্য এরই মধ্যে তিনি এলাকায় গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। ছাড়াও এ আসনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আলমগীর।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া আবারও তার নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুর-২ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রত্যাশা নিয়ে এরই মধ্যে গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন করার বিষয়ে আমি পুরোপুরি প্রস্তুত। এরই মধ্যে আমার নির্বাচনী এলাকায় কাজ শুরু করে দিয়েছি। প্রতি সপ্তাহে আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় যাচ্ছি। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। এখন দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব। গত নির্বাচনে আইনি জটিলতার কারণে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, আমার নির্বাচনী আসন শরিয়তপুর-২-এ আমি গতবারই মনোনয়ন চেয়েছিলাম। গতবারও আমি আমার এলাকার তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রস্তাব অনুযায়ী একক প্রার্থী ছিলাম। কারণ আমি ছাত্র রাজনীতি থেকেই এলাকার মানুষের পাশে থেকে রাজনীতি করে আসছি। ঢাকায় থাকলেও আমি নিয়মিত এলাকায় যাতায়াত করি। রোববার থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত এলাকায় থেকে তাদের সঙ্গে ঈদ উৎযাপন করব। দল মনে করলে আমি এই আসন থেকে নির্বাচন করতে চাই।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে এবার যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম আনোয়ার দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় এলাকায় গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতি করার সময় থেকেই আমি এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে আসছি। এখনও করি। ভবিষ্যতেও করব। দল যদি মনে করে তাহলে জনপ্রতিনিধি হিসেবে আগামীতে এলাকার মানুষের সেবা করতে চাই।

ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন নেতাকর্মীদের কাছ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এই আসনে পরিবর্তনের গুঞ্জন বহু আগে থেকেই বইতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় বহু আগে থেকেই মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা মনিরুজ্জামান মনির। তিনি বলেন, আমি এই এলাকার সন্তান। এই এলাকার মানুষের জন্য রাজনীতি করে আসছি। দল, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার পে কখনও আপস করিনি। দলের নেতাকর্মী ও এলাকার মানুষের প্রত্যাশা অনুয়ায়ী এই আসনের মনোনয়নের দাবিদার আমি। মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি জয়ের বিষয়েও অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী তিনি।

এদিকে রাজশাহী-৩ আসনে পরিবর্তনের বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার কারণে এই আসনের জন্য সাবেক সংসদ সদস্য ও সংরতি আসনের এমপি জিনাতুন নেছা তালুকদার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মোহম্মদ আলী সরকার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন। রাজশাহী ৫ আসনে নতুন করে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ ফারুক ও পুঠিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হোসেন। পটুয়াখালী-১ আসনের এমপি শাহজাহান মিয়ার বিরুদ্ধে এবার মনোনয়ন পাওয়ার লড়াইয়ে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ মৃধা। খুলনা-৪ আসনের সাবেক এমপি মোস্তফা রশীদী সূজা আগামী নির্বাচনের জন্য জনসংযোগ শুরু করেছেন অনেক আগেই। মাদারীপুর-৩ (কালকিনি ও সদরের একাংশ) আসনে জনসংযোগ চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আবদুস সোবহান ওরফে গোলাপ।

ফরিদপুর-২ (সালথা ও নগরকান্দা) আসনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নের প্রত্যাশায় প্রচারণা চালাচ্ছেন মেজর (অব.) আ ত ম হালিম। সম্প্রতি তিনি প্রচারণায় অংশ নিতে গিয়ে বর্তমান এমপি ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সমর্থকের হামলারও শিকার হয়েছেন। বড় ধরনের পরিবর্তন ও ঈদকে সামনে রেখে প্রায় অধিকাংশ নির্বাচনী এলাকাতেই এভাবে নেমে পড়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। ঈদ উৎসবের মধ্যে এলাকায় সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে পাওয়া যায় ও বিভিন্নভাবে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কাছে টানার সুযোগ থাকে বলেই ঈদের আগেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে নেমে পড়েছেন বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।