স্টাফ রিপোর্টার ॥
ঢাকা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আয়ের প্রধান খাত উৎসে আয়কর ও মূসক (মূল্য সংযোজন কর)। মোট রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৫৮ শতাংশ যোগান দেয় এ খাত।
কিন্তু দীর্ঘসূত্রতায় সঠিক সময়ে এ খাত থেকে আদায় সম্ভব হয় না। তাই এ খাতের পরিধি ও আদায় বৃদ্ধি এবং মনিটরিং জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর।
এ খাতের রাজস্ব আদায়ে নেই ‘স্বতন্ত্র কর অঞ্চল’। তবে সহসাই নিরসন হচ্ছে এ জটিলতা। উৎসে কর আদায়ে গঠিত হচ্ছে ৫টি উৎসে ‘কর কর্তন পরিবীক্ষণ অঞ্চল’।
উৎসে কর কর্তনে চলতি বছরের জাতীয় বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী ‘স্বতন্ত্র কর অঞ্চল’ গঠনের ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী এনবিআর কাজ করছে বলে জানা গেছে।
পাঁচটির মধ্যে চারটি ঢাকায় ও একটি চট্টগ্রামে গঠিত হবে। অর্থমন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সম্ভাব্যতা যাচাই ও পদক্ষেপ নিতে একটি কমিটি গঠন করেছে এনবিআর।
চলতি অর্থবছর ১৩টি নতুন খাত যুক্ত করে বর্তমানে ৫২টি খাত থেকে এ কর আদায় করা হচ্ছে। আগামী অর্থবছর ০.৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত প্রায় ৬০টি খাত থেকে এ কর আদায়ের পদক্ষেপ নিয়েছে এনবিআর।
অপরদিকে, উৎস কর কর্তন ও সঠিক সময়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে সচিব, মেয়র, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারদের সহায়তা চেয়েছে এনবিআর।
সম্প্রতি সচিব, সিটি মেয়র, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে আধা সরকারিপত্র (ডিও লেটার) পাঠিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান।
চিঠিতে সরকারিভাবে পণ্য ও সেবা ক্রয়ের বিপরীতে নিয়ম মাফিক নির্ধারিত হারে উৎসে আয়কর ও মূসক কর্তনের অনুরোধ জানান।
সিটি করপোরেশন পণ্য ও সেবা ক্রয়, পরামর্শক ফি, বেতন-ভাতা পরিশোধ, লাইন্সেস নবায়ন, হোল্ডিং ট্যাক্সসহ বিভিন্ন খাত থেকে উৎসে আয়কর ও মূসক কর্তন করে থাকে।
মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সরকারি সব দফতরে বিধি অনুযায়ী উৎসে কর কর্তন ও সরকারি কোষাগারে জমা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ পেয়েছে এনবিআর।
মন্ত্রণালয়-বিভাগ প্রকল্পের বেতন-ভাতা, পরামর্শক ফি, পণ্য ও সেবা ক্রয়ের বিল পরিশোধের সময় উৎসে কর কর্তনের বিধান থাকলেও সঠিকভাবে কর্তন হয় না।
পদক্ষেপ নিতে চলতি অর্থবছর মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রধানকে বিধি অনুযায়ী উৎসে আয়কর কর্তন, সরকারি কোষাগারে জমা ও মনিটরিং করতে চিঠি দিয়েছে এনবিআর।
সব বিভাগ থেকে সঠিক নিয়মে, নির্ধারিত সময়ে উৎসে আয়কর ও মূসক কর্তন করে তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমাদানে সম্মত হয়েছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে ঢাকায় একটি বৃহৎ করদাতা ইউনিট ১৭টিসহ সারাদেশে ৩১টি কর অঞ্চল রয়েছে। এসব কর অঞ্চলে উৎসে করসহ সব ধরনের কর নেওয়া হয়।
ফলে সারাদেশে উৎসে কর কর্তনে জোর দেওয়া ও সঠিক মনিটরিং সম্ভব হয় না। এতে সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে কর কর্তন ও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয় না।
পাঁচটি কর জোন গঠিত হলে এ সমস্যা থাকবে না। চিহ্নিত করে মনিটরিং করা ও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। জোন গঠনে ইতোমধ্যে এনবিআর কমিটি গঠন করেছে।
কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, সহসাই গঠিত হবে এসব জোন। আর আগামী অর্থবছর থেকে এসব জোন আলাদাভাবে উৎসে কর কর্তনের কাজ শুরু করবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
কমিটির এক সদস্য বাংলানিউজকে জানান, অন্য রাজস্ব আহরণ করতে গিয়ে উৎসে করের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ ও আদায়ে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে বলে জোন গঠিত হচ্ছে।
‘উৎসে কর কর্তন পরিবীক্ষণ অঞ্চল’ নামে গঠিত হবে এসব জোন। এসব জোনের অধীনে এলটিইউসহ সারাদেশে ৩১টি কর অঞ্চলে ভাগ করে দেওয়া হবে।
এসব জোনে প্রায় আড়াই হাজার নতুন জনবল প্রয়োজন হবে। জোন গঠিত হলে উৎসে করের নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি ও রাজস্ব আয় কয়েকগুণ বাড়বে বলে জানান তিনি।
চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, সচিবদের চিঠি ও ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধের পর তারা উৎসে আয়কর ও মূসক সঠিকভাবে আদায় ও জমাদানের আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি বলেন, উৎসে কর খাতে বিপুল রাজস্ব সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আলাদা জোন না থাকায় সে সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। শিগগিরই এ জোন গঠিত হবে।