জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ॥
ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলায় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যে কয়টি গৌরবউজ্জল বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধ হয়েছে তার মধ্যে আলফাপুর গ্রামের যুদ্ধ অন্যতম। সে দিন ছিল ৬ সেপ্টম্বর ১৯৭১ সাল পাক হানাদার বাহিনি নৌকায় চড়ে নদী পার হয়ে মীন গ্রাম ও আবাই পুরের মুক্তিযোদ্ধাদের ঘটিতে হানা দেওয়ার জন্য কিন্তু তারা জানত না যে আলফাপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল রয়েছে। নদী তখন ২ কুলে ছোঁয়া ছোঁয়া জলে পূর্ণ ২ টি নৌকায় প্রায় ৬০/৭০ জন পাক হানাদার বাহিনি পার হচ্ছিল। তাদের নৌকা যখন মাঝ নদীতে তখনই সুযোগ বুঝে মুক্তিযোদ্ধারা হামলা চালায় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় মাত্র ১ জন সাতার কেটে কুলে উঠে পালিয়ে যেতে পেরেছিল বাকিরা সকলে নিহত হয়েছিল। এই গ্রামের পূর্বপাশ দিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের মাঠের অতিরিক্ত পানি নিঃকাশনের জন্য একটি খাল প্রবাহিত হয়ে কুমার নদিতে এসে মিশেছে। এই গ্রামটি হল ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার শেষ সীমান্ত। এরই পূর্ব পার্শে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার গ্রাম। এই গ্রামের ওপারে নদীর দক্ষিণ পাশে শৈলকূপা উপজেলার শেষ সীমান্ত গ্রাম মীনগ্রাম ও মীনগ্রামের পূর্বপার্শে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার খরিদারডেহ ও পূর্বশ্রীখোল গ্রাম। এই খালের পাশেই ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর সামনা সামনি যুদ্ধ হয়। কিন্তু এই যুদ্ধে মাত্র কয়েক জন সাধারন মানুষ নিহত হয়। যে সমস্ত পাকিস্থানি সৈনিকেরা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে নিহত হয় তাদের ফেলে দেওয়া হয় কুমার নদীর গর্ভে। সেটা করতে পেরে সেদিন এই যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রানের আবেগ উল্লাস কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়েছিল এই ভেবে যে খান সেনারা সারা বাংলায় যে অত্যাচার নির্যাতন করেছিল তার কিছুটা হলেও প্রতিশোধ নিতে পেরেছিল, সে দিনের বাংলার সূর্য সন্তানেরা। ১৯৭১ সালে সারা বাংলায় মুক্তিযোদ্ধাদের এত বড় অর্জনের কথা জানা নেই। আমারা প্রায় ৪৪ বছর দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের এত বড় বীরত্বগাথা কাহিনি আজ আস্তে আস্তে বিলিন হয়ে যেতে বসেছে কালেরগর্ভে। ভুলে যেতে বসেছে এই অঞ্চলের সাধারন মানুষ। সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে অনেক কিছু গড়ে উঠেছে এখানে কিছুই হয় নাই।
এই সৃতি যাতে বিলীন হয়ে না যেতে পারে তাই এই অঞ্চলের সাধারন মানুষের প্রানের দাবী দীর্ঘ দিনের লালায়িত স্বপ্ন এই আলফাপুর ঘাটে একটি বিজয় সৃতি সৌধ ও দুই অঞ্চলের মানুষের মাঝে মেল বন্ধনের জন্য কুমার নদীর উপর একটি সেতু তৈরি করার। নির্বাচন আসলে এলাকার সংসদ সদস্য প্রার্থীরা সেতু ও বিজয় সৃতি সৌধ তৈরির প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু ভোট চলে গেলে ভুলে যায়। এই এলাকার মানুষের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়, বাস্তবতায় রুপ আর দেখে না। আজ এই দুই অঞ্চলের মেল বন্ধন একমাত্র খেওয়া নৌকার উপর নির্ভর করতে হয়। আর মাগুরা জেলার স্রীপুরের নদীর উত্তর পার্শ্বের গ্রাম গুলির সাথে যোগাযোগের জন্য গ্রাম বাসিরা চেষ্টা করে খালের উপর বাঁশ দিয়ে তৈরি করেছেন বাঁশের সাঁকো। ঘটে সেতু তৈরি হলে ঝিনাইদহের সাথে লাঙ্গলবাধ বাজারের যোগাযোগ গড়ে উঠে হাট ফাজিলপুর বাজার, আবাইপুর বাজার, মীনগ্রাম বাজার হাট শ্রীখোল বাজার ও হাট গোপালপুর বাজার, গোয়ালপাড়া বাজার ও মাগুরার আলমখালি বাজার। কৃষকের মালা মাল ন্যায্য মুলে কৃষক বিক্রয় করতে পারে। এই ঘাটের মাত্র ১ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে মাগুরা-লাঙ্গলবাধ পাকা সড়ক। এই আলফাপুরের ঘাট পার হয়েই কুমার নদীর দক্ষিণ পাশে মানুষের যেতে হয় বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলের অন্যতম ব্যবসা কেন্দ্র লাঙ্গলবাধ বাজারে। আগের পুরান গৌরব ফিরে পাবে বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলের অন্যতম ব্যবসা কেন্দ্র লাঙ্গলবাধ বাজার। তাই ঝিনাইদহ মাগুরা জেলার প্রায় ৫০ টি গ্রামের মানুষের দাবী মুক্তিযোদ্ধাদের এত বড় বীরত্বগাথা কাহিনি ইতিহাস ধরে রখাতে একটি বিজয় সৃতি সৌধ ও একটি সেতু নির্মাণ।
এই গ্রামের প্রবীন মুক্তিযোদ্ধা তোবারেক ফকির আলফাপুর গ্রামের ঘাটের উপর তার বাড়ী যিনি তৎকালীন আলফাপুরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন নিজ হাতে জীবন বাজি রেখে। সেদিনের ঘটনার সাক্ষী তিনি বলেন বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন সেই সাথে যদি এই খানে একটি ব্রিজ ও একটি বিজয় সৃতি সৌধ গড়ে দেন তাহলে এই মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব গাথা কাহিনি দেশের মানুষ ভুলবে না। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি তারা সরকার থেকে অনেক সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছে আর আমি মুক্তিযোদ্ধা হয়েও আমার নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নেই।
এই গ্রামের আরেক প্রবীন হাসমত আলী, তিনি জানান সেদিনের কাহিনী, তিনি বলেন আমার ভাই একজন মুক্তিযোদ্ধা। সেদিন যে যুদ্ধ এখানে হয়েছিল তাঁহা যে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কি সাফল্য ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মাত্র একজন পাক হানাদার ফেরত যেতে পরেছিল। আলফা পুর গ্রামে নারি পুরুষ সকলেই সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করেছিল। কিন্তু আজও আমরা অবহেলিত যাতায়াতের রাস্তা নেই, নদিতে নেই সেতু মারদাতা আমালের নৌকায় পার হওয়ার এক মাত্র ভরসা। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তিনি যদি সদয় হয়ে আমাদের এই সামান্ন চাওয়া টা পূরণ করে দেন তাহলে আমারদের রাস্তা ঘাটের দুর্ভোগ লাঘব হবে।