শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > মেরুদ-হীন ছোট ও মাঝারিরা, শঙ্কায় বড়রাও

মেরুদ-হীন ছোট ও মাঝারিরা, শঙ্কায় বড়রাও

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

ঢাকা: বড়গুলো টিকে গেলেও কোমর সোজা করে আর দাঁড়ানোর কায়দা নেই ছোট ও মাঝারিগুলোর। একের পর এক বিদেশি হত্যা, রানাপ্লাজা ধস, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ও গ্যাস না পাওয়া ও এর মূল্যবৃদ্ধি আর হরতাল অবরোধের তোপে পিষ্ট হয়ে বিশ্ববাজার থেকে ছিটকে পড়েছে অনেক পোশাক কারখানা। বিদেশিরা তাদের চুক্তি হস্তান্তর করছে এখন ভিয়েতনামে। নিয়মিত ও অনিয়মিতভাবে কাজ হারাতে হারাতে গত দুই বছরে দেশের বন্ধ পোশাক করাখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬শ ৯৩টিরও বেশি। প্রায় বন্ধের পথে আরো অনেক প্রতিষ্ঠান। অথচ রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস আমাদের এই তৈরি পোশাকশিল্প।

বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সূত্র বলছে, বন্ধ হওয়া কারখানার মধ্যে শুধু বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত কারখানাই রয়েছে ৫শ এর বেশি এবং ছোট-মাঝারি মিলে হাজারের অধিক হবে। চাকরি হারিয়েছে কয়েক লাখ শ্রমিক। নতুন কারখানা চালুর হারও কমেছে। ফলে সংকুচিত হচ্ছে পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট অন্য শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ।

বিজিএমইএ নেতারা জানান, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে ঠিকই, তবে তাতেও দেশের পোশাক কারখানার সংখ্যা কমছে। কারণ যে হারে কারখানা বন্ধ হচ্ছে সেই হারে নতুন কারখানা গড়ে উঠছে না।

সূত্র জানায়, চলতি বছর ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ৫০টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সোয়ান, লিরিক, আরএম ফ্যাশন, মিফকিফ ও বনী। বন্ধের প্রক্রিয়ায় রয়েছে মিরপুরের লিবার্টি গার্মেন্টস, লিবার্টি ফ্যাশন ও উত্তরার ফাহিম লুমসহ ৩০-৪০টি কারখানা।

শ্রমিক নেতা মোশরেফা মিশু জানান, বন্ধ হয়ে যাওয়া পোশাক কারখানাগুলোর শ্রমিকরা বেকার হয়ে আছেন। তাদের জীবন কাটছে খুবই কষ্টে। যেসব কারখানা চলছে তাতে কর্মখালি নেই।

বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি কারখানার কর্মকর্তা বলেন, গত মওসুমেও যে কারখানায় শ্রমিকরা দিন-রাত কাজ করতেন, সেখানে এখন মেশিনগুলো অলস পড়ে আছে। পরিদর্শকদের দিয়ে কারখানা পরিদর্শন করতে না পারার কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে মালিক।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর এখন বড় ক্রেতারা কারখানাগুলোর পরিবেশ ও মান যাচাই করে তবেই অর্ডার দেন। আর এ ক্রেতারা শেয়ার্ড বিল্ডিংয়ে অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ছোট কারখানাগুলো কাজ না পেয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহবুব হাসান খান বাবু বলেন, কয়েক বছর ধরে পোশাক খাতে অস্থিরতা চলার কারণে অনেকে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। কপ্লায়েন্স ইস্যুতে ক্রেতারা অনেক ঝামেলার সৃষ্টি করছে। যে কারণে অনেকে টিকতে পারছে না।

বিজিএমইএর ও বিকেএমইএ তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে নিবন্ধিত পোশাক কারখানা ৫ হাজার ৯৯৯টি। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে নিবন্ধিত কারখানা ৫ হাজার ১৪৫টি এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৮৫৪টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৯৩টিই বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে সচল কারখানার সংখ্যা ৪ হাজার ৩০৬টি। এর মধ্যে নতুন ও পুরনো মিলিয়ে রুগ্ন কারখানা প্রায় ৪৩৯টি। কারখানাগুলোর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে বন্ধ হয়েছে ১ হাজার ৫৪৪টি আর চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১৪৯টি কারখানা। আর বন্ধ হওয়া কারখানার মধ্যে ২০ শতাংশ হচ্ছে শিফট হওয়া এবং ৪০ শতাংশ শেয়ার্ড বিল্ডিং কারখানা। বাকিগুলো সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করা কারখানা। পাশাপাশি নতুন কারখানা চালুর হার কমে আসছে। ১৩ সালে ১৪০টি, ১২ সালে ২০০টি। আর ১৪ সালে নতুন কারখানা হয়েছে ৮০টি। অর্থাৎ নতুন করে বিনিয়োগ হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশে পোশাক কারখানা ছিল ৫ হাজার ১৫০টি। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৪০০টি। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল ৫ হাজার ৮৭৬টি। কিন্তু ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২২২। বর্তমানে এ খাতে শ্রমিকের সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে বলে বিজিএমইএর তথ্যে জানা যায়।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদনে বলা হয়, রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনসে দুর্ঘটনার পর কমপ্লায়েন্স (তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ) ঘাটতি ও কার্যাদেশ বাতিলের অজুহাতে কারখানা বন্ধের তালিকায় ২০১৪ সালে যোগ হয়েছে ২২০টি কারখানা। এতে বেকার হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার শ্রমিক।