ব্যাংক শুধু উচ্চবিত্তের ধনাগার নয়

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, ব্যাংক শুধু উচ্চবিত্তের ধনাগার নয়, দরিদ্রের ক্ষমতায়নের নিবেদিত কারখানা। মানুষ হচ্ছে তার আর্থিক উন্নতির সহযোগী বন্ধু।

মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘ব্যাংকিং মেলা বাংলাদেশ-২০১৫’ উদ্বোধন ও প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন গভর্নর।

গভর্নর বলেন, আমাদের পরিশ্রমের লক্ষ্য দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করা। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রতিদিন বিভিন্ন সেবা ও দ্রব্যের যোগান পৌঁছে দিতে চাই মানুষের দ্বারে। মেলার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো একে অন্যের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে শিখতে পারবে।

তিনি বলেন, একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে চাই। সদিচ্ছার সঙ্গে ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা গ্রহণের মানসিকতা থাকতে হবে। অর্থ পরিধি সমাজের সবার মধ্যে বিস্তৃত না হলে প্রবৃদ্ধি টেকসই হয় না। এজন্য দরিদ্র, নারী, স্কুলগামী শিক্ষার্থী, পথশিশু ও পোশাক শিল্পের কর্মী বা অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে।

আতিউর রহমান বলেন, টেকসই প্রবৃদ্ধি আমাদের দীর্ঘমেয়াদি উন্নতি বা অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য। তাই আসুন আমরা মানবিক ব্যাংকিংয়ের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করি। এ সময় ব্যাংক কর্মীদের নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের পারিবারিক সদস্যের মতো সম্মান করার আহ্বানও জানান গর্ভনর।

সভাপতির বক্তব্যে ডেপুটি গর্ভনর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী বলেন, আধুনিক ব্যাংকিং সেবার মূল উপাদান জনগণের সামনে তুলে ধরাই মেলার উদ্দেশ্য। এ সেবা পাওয়ার অধিকার সর্ম্পকে মানুষকে জানাতে হবে। সরকারের উন্নয়ন কৌশল বাস্তবায়ন করতে আর্থিকখাত সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে ব্রতী হয়েছি। আগামী দুই বছরের মধ্যে ব্যাংকিংখাত ডিজিটালাইজড হবে বলেও জানান গর্ভনর।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম বলেন, বিমা সংক্রান্ত জনসচেতনার অনেক ঘাটতি রয়েছে। সে বিষয়েও মেলা করা প্রয়োজন। ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত জাতি গড়ার লক্ষ্যে আর্থিক বাজার ও সেবা বিভাগকে শক্তিশালী কাঠামোও দাঁড় করতে কাজ যাচ্ছে সরকার।

ব্যাংকের পণ্য ও সেবার ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে। ইন্টারনেট ও কার্ড ব্যাংকিংয়ের তেমন উন্নতি হয়নি। এজন্য ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে যেসব সীমাবদ্ধতা আছে তা যৌথভাবেই অতিক্রম করতে হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে দুষ্টচক্র কাজ করছে, অনিয়ম রয়েছে, রয়েছে গরমিল। এ দুষ্টচক্রকে ভাঙতে হবে। এ চক্র রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে।

তিনি বলেন, ব্যাংকিং মেলা সফল হলেই প্রমাণিত হবে দিনদিন মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে। রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে বিভিন্নখাতে যে দুষ্টচক্র কাজ করছে তাদের প্রতিহত করতে কিছুটা সক্ষম হয়েছি। ব্যাংকিংখাতেও দুষ্টচক্র কাজ করছে। এটা ভাঙতে হবে। ইতিমধ্যে এনবিআর-এফবিসিসিই হাতে হাত মিলিয়ে দুষ্টচক্র দমনে সফল হয়েছে। একইভাবে ব্যাংকিংখাতেও করতে হবে। এজন্য এনবিআরের আহ্বানে ব্যাংক খাতকে এগিয়ে আসতে হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. আবুল কাশেম, নাজনীন সুলতানা, আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান, ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা।

মেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক শিক্ষা, টাকা জাদুঘর, বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস (টাকা তৈরির মেশিন), বিভিন্ন প্রকাশনা, স্মারক মুদ্রা ও নোট ক্রয়, জনসাধারণকে সেবা, সিআইপিসি এবং অভিযোগ কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আর্থিক শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের নিয়ে দু’দিন, কর্মজীবী শিশুদের নিয়ে একদিন, উন্মুক্ত উপস্থিতদের নিয়ে একদিন ও ভালনারেবল অ্যাডাল্টদের নিয়ে আর্থিক শিক্ষা বিষয়ক কর্মসূচি পালন করা হবে।

দুপুর দুইটা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বির্তক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। প্রতিযোগিতার বিষয় থাকবে, ব্যাংকিংখাতে উচ্চ সুদের প্রধান কারণ, বাজারভিত্তিক মুদ্রার বিনিময় হার, পুঁজির অবাধ প্রবাহ, বৈদেশিক বিনিয়োগ, মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, কর্মের সময়সীমা ও মুনাফা।

বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে আর্থিক উন্নয়ন, শিক্ষা, মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকের ভূমিকা, গ্রহণযোগ্য সুদহার নির্ধারণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ প্রবাহের ভূমিকা, মূদ্রানীতির কার্যকারিতা ও প্রযুক্তি নির্ভর ব্যাংকিং সেবা বিষয়ে সেমিনার, গোলটেবিল ও ওয়ার্কশপ।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত বিনোদনের মাধ্যমে আর্থিক শিক্ষা কর্মসূচি পরিচালনা করতে পরিবেশন করা হবে ব্যাংকিং পণ্য ও সেবা সর্ম্পকে লোকজ গান ও নাটিকা।

এসব কর্মসূচিতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অর্থ, কৃষি, পরিকল্পনা, বাণিজ্য, শিল্প, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অর্থনীতি বিষয়ক গবেষকরা।

মেলার থিম সং উদ্বোধন করেন ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মইনুল ইসলাম। তথ্যচিত্র প্রকাশ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান। ম্যাগাজিন ‘সুবর্ণভূমি’র মোড়ক উন্মোচন করেন আসলাম আলম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫