শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > তেঁতে উঠছে রাজনীতি

তেঁতে উঠছে রাজনীতি

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥সরকারের মেয়াদ দ্রুত ফুরিয়ে আসলেও আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এখনো ঐকমত্যে আসতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। ক্রমেই রাজনীতির আকাশে কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে। আশঙ্কা, সেই সংঘাতময় রাজনীতির পুরনো চেহারা।

সংকট থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো সংলাপ হয়নি। লণও তেমন নেই। ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে বিরোধী জোট। আর তা প্রতিহত করবে মতাসীনরা।

অনেকটা দুই জোটের মুখোমুখি অবস্থান। এতে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংশয় যেমন বাড়ছে, তেমনি সংকট উত্তরণের পরিবর্তে সংঘাতের আশঙ্কা ব্যক্ত করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সংবিধান অনুসারে মহাজোট সরকারের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৪ জানুয়ারি। নির্বাচনের জন্য সময়সীমার তিন মাস আগে অক্টোবরে ভেঙে দেয়া হবে সংসদ। এজন্য বর্তমান সংসদ বহাল থাকতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ের নিষ্পত্তি চায় বিরোধী দল বিএনপি ও তার নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট।

দাবি আদায়ে ঈদুল ফিতরের পর হাতে থাকা দেড়-দুই মাস সময়কেই কাজে লাগাতে চায় তারা। কঠোর আন্দোলনের মধ্যদিয়ে দাবি দিয়ে আদায়ে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিরোধী জোট। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ জোট ও দলের শীর্ষ নেতারা ইতোমধ্যেই সরকারকে সংলাপে বসে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে তৈরি হওয়া সংকট সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন।

একই সঙ্গে কঠোর আন্দোলনে দাবি আদায়ের কথা বলার পাশাপাশি দেশে গণতন্ত্র ব্যাহত হবার বিষয়েও সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছে তারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে। সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘রমযানের পর কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। যাতে সংসদ ভেঙে যাওয়ার আগে সংবিধানে সরকার নির্দলীয় সরকার পুনর্বহাল করতে বাধ্য হয়। এখন সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কী সমঝোতার পথে আসবে? নাকি সংঘাতের পথে যাবে।’

এদিকে, ঘরে বসে না থেকে রাজনৈতিক প্রতিপকে মোকাবেলায় মাঠে নামার জোরাল প্রস্তুতি নিচ্ছে মতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের মহাজোট। এই জোটের অন্যতম শীর্ষ দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবস্থান এখনো পরিষ্কার না হলেও মাহজোটের অন্য শরিকরা আওয়ামী লীগের পাশেই আছে। বিরোধী জোটের দাবিকে উপো করেই তারা সামনে এগোনোর চেষ্টা করছে।

এরই অংশ হিসেবে ঈদের পর সারা দেশে সাংগঠনিক সফর করতে যাচ্ছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। সেই সঙ্গে থাকছে একগুচ্ছ কর্মসূচি। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ দল ও মহাজোটের নেতারা বিরোধী দলের দাবি নাকচ করার পাশাপাশি দলীয় সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন আয়োজনের কথা বলছেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আরো এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। দলীয় সূত্রমতে, তৃণমূল নেতকর্মীদের নিয়ে মাঠে বিরোধী জোটকে মোকাবেলা ও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই জেলা নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুপরেই এমন পাল্টাপাল্টি অনড় অবস্থান ঈদুল ফিতরের পর দেশে কঠিন পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান আরটিএনএন- কে বলেন, ‘রাজনীতিতে সমঝোতা না হলে সংঘাত অনিবার্য। আগামীতে দেশ যে, ভয়াবহ সংঘাতের দিকে যাচ্ছে তা বলার অপো রাখে না।’

তিনি বলেন, ‘সরকার ও বিরোধী দলের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থানে যে কেউই গবেষণা ছাড়াই বলে দিতে পারবে দেশ কোন দিকে যাচ্ছে। দিনদিন দেশ যে প্রবল সংঘাত-সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তা এখন খালি চোখেই দেখা যায়।’

বর্ষীয়ান এই বিশ্লেষক মনে করেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপ ও সমঝোতা বাদ দিয়ে সংঘাতের পথে হাটলে জনগণকে চড়া মূল্য দিতে হবে। সেই সঙ্গে রাজনীতিবিদরও সুদে-আসলে তার মাশুল দিতে হবে।’

তাই সময় নষ্ট না করে অবিলম্বে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলেও মনে করেন আকবর আলি খান।

সমাজবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. পিয়াস করিম মনে করেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতায় পুরো জাতি এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। আগামী নির্বাচন হবে কিনা, আর না হলে কী হবে এই প্রশ্নের উত্তর নেই কারো কাছেই। এমন অবস্থা কারো কাছেই কাম্য হতে পারে না।’

স্বাধীনতার ৪২ বছরেও নির্বাচন পদ্ধতি ঠিক করতে না পারা ও ভোটের অধিকার নিয়ে আন্দোলনের দরকার হওয়াটা দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ড. পিয়াস করিম কে বলেন, ‘দেশের অধিকাংশ মানুষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলেও সরকার সেটা বুঝতে পারছে না। দেশে শান্তি চাইলে সরকারের উচিত হবে জনমতকে গুরুত্ব দেয়া।’

তিনি বলেন, ‘এজন্য সরকারকে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে শিগগিরই সমঝোতায় আসতে হবে। তা না হলে, ওয়ান-ইলেভেনের মতো অনির্বাচিত সরকার মতায় চেপে বসার যে আশঙ্কার কথা বলে প্রধানমন্ত্রী তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে চাচ্ছেন না, তার চেয়েও খারাপ অবস্থা সামনে আসতে পারে।’

আর সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হবার আগেই সাবধান হওয়া দরকার বলে মনে করেন পিয়াস করিম।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ঈদের পরেই শুরু হবে রাজনীতির নতুন যাত্রা। জাতীয় রাজনীতির সেই মেরুকরণ যেন সংঘাত না হয়ে সুখের হয়, সেজন্য সুশীল সমাজের পাশাপাশি জনগণেরও দায়িত্ব রয়েছে। রাজনীতিবিদের সমঝোতার পথে হাটতে চাপ বাড়ানোর মাধ্যমে সে দায়িত্ব সবাইকে পালন করতে হবে।