শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ‘ছাড়’ দিয়েই নতুন বাজেট পাস হচ্ছে আজ

‘ছাড়’ দিয়েই নতুন বাজেট পাস হচ্ছে আজ

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: করের আওতা বাড়িয়ে সরকারের ব্যয়ের টাকা যোগাড়ের যে ছক কষেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত তা থেকে খানিকটা পেছনেই সরে আসতে হলো তাকে। অবশেষে পোশাকসহ বেশ কয়েকটি খাতে রাজস্ব আদায়ে ‘কড়াকড়ির’ বদলে ‘ছাড়’ দিয়েই পাশ হতে যাচ্ছে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ব্যয়ের ফর্দি।

আজ (মঙ্গলবার) জাতীয় সংসদে পাশ হচ্ছে নতুন এ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার বাজেট। পাস হতে যাওয়া নতুন এ বাজেটে ব্যয়ের সব খাত অপরিবর্তিত থাকলেও কমে আসলো করের আওতা। ব্যবসায়ী, মন্ত্রী-এমপি বিশেষকরে প্রধানমন্ত্রীর দাবির কাছেই হার মানতে হলো ৭ বারের বাজেট প্রদানকারী এ মন্ত্রীকে। যাতে করে বাজেট বাস্তাবয়নটা অর্থমন্ত্রীর ঘাড়ে আরো খানিকটা বাড়তি চাপ ফেললো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে যে বড় অঙ্কের রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে তা অর্জনে জরিপের মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া খাত ও নতুন করদাতাদের ওপর আক্রমণ করা হবে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সবকিছুর পর নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকলেও সোমবার শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধেই কয়েকটি জায়গায় কর কমাতে হলো অর্থমন্ত্রীকে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার প্রস্তাবিত বাজেটের উপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সব বিষয়ে পরিবর্তন করার প্রস্তাব করেছেন সেগুলো অবশ্যই সংশোধন হবে।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে- পোশাক খাতের উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশে নামিয়ে আনা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে আরোপিত ভ্যাটের পরিমাণ ১০ শতাংশ থেকে নামিয়ে ৭ দশমিক ৫ করা, পোল্ট্রি ও মৎস্য শিল্পে ১৯ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়কে করমুক্ত এবং ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫ শতাংশ এবং ৩০ লাখ টাকার বেশি হলে ১০ শতাংশ করা এবং ক্যান্সারের ওষুধ তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে সব ধরনের আমদানি শুল্কসহ সব শুল্ক-কর প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। এসব কিছুই হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে।

এছাড়া ইন্টারনেটে সরবরাহ ও ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত ৫ শতাংশ কর কমিয়ে ৩ শতাংশে, ই-কমার্স ব্যবসার ওপর প্রস্তাবিত ৪ শতাংশ কর প্রত্যাহার, সিগারেট উৎপাদনের উপর আরোপিত ৩ শতাংশ কমিয়ে ২ শতাংশে, ব্যক্তিকরের করমুক্তসীমা আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ করা, নুনতম করসীমা ঢাকা-চিটাগং এ ৪ হাজার, নিট সম্পদের মুল্যমানের উপর করমুক্ত সীমা ২কোটি ২৫ লাখ থেকে কমিয়ে ৩ কোটি ২৫ লাখ করা, পন্য বহন বা প্যকিং এর জন্য ব্যবহৃত প্লাস্টিকের তৈরি দ্রব্যাদি (বাক্স, কেইস, ক্রেস্ট এবং সমজাতীয় পণ্য) উপর থেকে সম্পুরক শুল্কহার ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা, বেশকিছু খাদ্যসামগ্রীর উপর কর ২৫ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে, ৪৯০১.৯৯.৯০ এইচএস কোডের পণ্যে কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে শূন্য তে নামিয়ে আনাসহ আরো কয়েকটি জায়গায় কর কমানো হয়েছে।

এসব জায়গায় কর কমালে অর্থমন্ত্রী আশার দিকটায় বলছেন, ’কর দেয়ার মত অনেক লোকই আছেন; যারা আওতার বাইরে। এ সংস্যা ১১ তে থাকলেও আমরা তা ১৮ লাখে নিয়ে যেতে চাই।’ তবে প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপনের পর গবেষণা প্রতিষ্ঠান বরাবরই শঙ্কা প্রকাশ করেছে এই রাজস্ব আদায়ের চ্যালেঞ্জ নিয়ে।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন বাংলামেইলকে বলেন, ‘আসলে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন খাত ও শিল্পকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য কয়েকটি জায়গায় রাজস্ব কমাতে হয়েছে। যার প্রভাব তো পড়বেই। কারণ আয় কমলে ধার-দেনার পরিমাণ বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।ইঁফমবঃ-২০১৫-১৬-ঢ়রব

প্রসঙ্গত, ২ লাখ ৯৫ হাজার ১শ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা গত অর্থবছরের চেয়ে একটু কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ শতাংশ। আর বিশাল এ বাজেট ব্যয় করা হবে তিনটি ভাগে। যেখানে অনুন্নয়ন রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭১ কোটি, উন্নয়ন ব্যয় ১ লাখ ২ হাজার ৫৫৯ কোটি এবং অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে পুরো ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকাই ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ অপরিবর্তিত থাকছে।

আর বিশাল এ ব্যয় মেটাতে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। যেখানে এনবিআরের মাধ্যমে কর আদায় করা হবে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। আর এনবিআর বহির্ভূত কর আদায়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। এছাড়া কর ব্যতীত আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা।

মোট আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা পুরো বাজেটের মোট আকার থেকে ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা কম; আর টাকার এ পরিমানটিই হলো বাজেট ঘাটতি। যা চলতি অর্থবছরে ছিল (শংশোধিত) ৭৬ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। এ ঘাটতি বাজেটের আকার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ।

এ ঘাটাতি বাজেট পূরণ করার জন্য সরকার নির্ভর করবে বৈদেশিক বিভিন্ন উৎস ও অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। পাস হতে যাওয়া এ বাজেটে অপরিবর্তিত থাকছে ধারদেনার পরিমান। বৈদেশিক উৎস থেকে সরকার নেবে ৩০ হাজার ১৩৪ কোটি এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেবে ৫৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা।

অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে যে পরিমাণ টাকা নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা সরকার নির্ধারণ করেছে তার বেশিরভাগটিই ঋণ নেবে ব্যাংকিং খাত থেকে। এখানে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা।

উন্নয়ন ব্যয়ের ৯৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে। আর এবারে মূল্যস্ফীতি আরও কমিয়ে অনার জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬.২ শতাংশে।

অপরিবর্তিত থাকছে দেশের বিভিন্ন খাতে যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার পরিমাণ। জনপ্রশাসনে ১ লাখ ২ হাজার ৭৮১ কোটি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ২১ হাজার ১ কোটি, প্রতিরক্ষায় ১৮ হাজার ৩৯৮ কোটি, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় ১৩ হাজার ৬৪৪ কোটি, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে ৩৪ হাজার ৩৭৮ কোটি, স্বাস্থ খাতে ১২ হাজার ৭২৫ কোটি, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে ১৬ হাজার ৯৫৫ কোটি, গৃহায়ন খাতে ২ হাজার ৯১৯ কোটি, বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্ম খাতে ২ হাজার ২৮৫ কোটি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ১৮ হাজার ৫৪১ কোটি, কৃষি খাতে ১৯ হাজার ৯৮৩ কোটি, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ২ হাজার ৭৫৬ কোটি এবং পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে ২৮ হাজার ৭৩৪ কোটি বরাদ্দ রেখেই পাস হচ্ছে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের নতুন বাজেট। বাংলামেইল২৪ডটকম