শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > রাজনীতি > বিএনপিকে চাপে রাখবে সরকার

বিএনপিকে চাপে রাখবে সরকার

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
ঢাকা: পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খানিকটা চাপে পড়া বিএনপিকে আপাতত আর ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি নিয়ে দাঁড়াতে দেয়া হবে না রাজপথেও। হরতাল অবরোধে নাশকতার অভিযোগে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে সারা দেশে দায়ের হওয়া মামলার চার্জশিট প্রস্তুত হচ্ছে। হাইকমান্ডের নির্দেশে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই দুটি মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এখন সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে রাজপথে নামলেই গ্রেফতার করা হতে পারে বেগম খালেদা জিয়াসহ কারাগারের বাইরে থাকা অন্য নেতাদেরও।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপির সিনিয়র অনেক নেতা দীর্ঘ সময় ধরে কারান্তরীণ রয়েছেন। আবার মামলা ও হুলিয়া নিয়ে পলাতক রয়েছেন অনেকে। ভঙ্গুর এ সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে যেন দলটি আপাতত রাজপথে না আসতে পারে এমন বাড়তি চাপে রাখতেই সরকারের এ কৌশল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিদের বক্তব্যেও সেটি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠছে। সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রী বলেছিলেন সরকারের পদত্যাগ না করে তিনি নাকি আর ঘরে ফিরবেন না। কিন্তু তিনি আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করে আবার ঘরেও ফিরে গেছেন। জনগণ তার ডাকে সাড়া দেয়নি। এ অশুভ শক্তি যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।
একই দিনে পৃথক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, যেকোনো ধরনের নাশকতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জন করছে সরকার। তাই বিএনপি জোটকে নিয়ে এখন সরকার আর চিন্তিত নয়।
মঙ্গলবার খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, দেশকে ধ্বংস করার জন্য দেশের অর্থনীতিকে বিধ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে বিএনপি। দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার একটা ষড়যন্ত্র চলছিল দীর্ঘ দিন পর্যন্ত। যারা এই ষড়যন্ত্র করেছিল তারা এখন সুবোধ বালকের মতো সোজা পথে ফিরে এসেছে। তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে। তাদের ভবিষ্যতে আর সুযোগ দেয়া হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত ৫ জানুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে নাশকতার অভিযোগে এক হাজার ৭৭৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৭৪টি মামলার চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগরে এখনো ২৯৫টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগরে ১০৭টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ১১ জেলায় ৩৫৬, রাজশাহী রেঞ্জে ২১০, ঢাকা রেঞ্জে ২০৩, বরিশাল রেঞ্জে ৭৪, সিলেট রেঞ্জে ৬৩, রংপুর রেঞ্জে ৬৯, খুলনা রেঞ্জে ৭৬ ও রেলওয়ে থানায় ৩৩টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।
এসব মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় থেকে স্থানীয় বেশির ভাগ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া ২০১৩ সালের নাশকতার ৫৪০টি ও ২০১৪ সালের ১৭১টি মামলা এখনো তদন্তাধীন রয়েছে যা দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন জেলার এসপি ও ডিসিদের কাছে মামলা দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়ে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একইভাবে মামলার তদন্তকার্যক্রম তদারক করতে ওসিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সরকারের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নাশকতার অভিযোগে সারা দেশে দায়ের হওয়া মামলাগুলো শিগগির সচল করে চার্জশিট দেয়ার নির্দেশ রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের ওপর। পূর্ণ মন্ত্রী না থাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব এখন প্রধানমন্ত্রীর হাতে। মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ রয়েছে। কয়েক দফায় তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেছেন। প্রায় প্রতিটি মন্ত্রিসভার বৈঠকেই বিভিন্ন জেলার স্থানীয় প্রশাসনের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রীকে নাশকতা ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যার মামলাগুলো সচল করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এতে আরো সক্রিয় হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। এরপরই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানার দুটি মামলার চার্জশিট দেয়া হয়। খুব শিগগিরই এ সংশ্লিষ্ট বাকি মামলায়ও অভিযোগপত্র দেয়া হতে পারে। দেশব্যাপী নাশকতা, সহিংসতা ও হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সাত বিভাগে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করার উদ্যোগও নিয়েছে সরকার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ে এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়। এতে বিশেষ করে নাশকতার মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেয়া হয়েছে। গত ৬ এপ্রিল পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত ত্রৈমাসিক অপরাধ সভায় মামলার তদন্তের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক।
আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, ঘর গুছিয়ে আগামী ঈদুল আজহার পর বিএনপি আবারো রাজপথে নামতে পারে এমন আশঙ্কা করছে সরকার। আর সম্ভাব্য সেই আন্দোলন দমনের কৌশল হিসেবেই বিভিন্ন মামলার চার্জশিট দিয়ে গ্রেফতারের পথ খোলা রাখা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণীপর্যায়ের একজন নেতা আলাপকালে বলেন, বিএনপির কাছে এখন সরকারবিরোধী আন্দোলনের চেয়ে তাদের নিজেদের দল রা করাই বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে তারা সেটা টের পেয়েছে। কারণ সব কেন্দ্রে এজেন্ট দেয়ার মতো নেতাকর্মী তাদের ছিল না। এ ছাড়া যাদের এজেন্ট দেয়া হয়েছে বিভিন্ন মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে তারা ভোট কেন্দ্রেও যায়নি। তারপরও আওয়ামী লীগ রাজপথের বিরোধীদের নিয়ে অনেকটাই সতর্ক। তাদের আর রাজপথে দাঁড়ানোর সুযোগ দেয়া হবে না।
অন্য একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, সিটি নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ না দেয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নেয়া ছিল। নির্বাচনের পর তাই বিএনপি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেনি। বিএনপির তিন মাসের অবরোধ ও মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘটনায় অভিযুক্ত বিএনপিকে এত তাড়াতাড়ি মূলধারার রাজনীতিতে আসতে দিতে চাচ্ছে না সরকার। বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে আরো চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে সরকার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপির আন্দোলনে জনগণের কোনো সাড়া ছিল না, সমর্থনও ছিল না। আগুনে মানুষ পোড়ানোর দায়ে মানুষ তাদের বর্জন করেছে। সিটি নির্বাচনে সেটি প্রমাণ হয়েছে। ভবিষ্যতে বিএনপি যদি আন্দোলনের নামে অনৈতিক ও জনবিরোধী কোনো কর্মসূচি দেয় আওয়ামী লীগ তা প্রতিহত করবে। আর জনগণের নিরাপত্তায় সরকার সবকিছুই করবে।
দলের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিগত তিন মাসের হরতাল-অবরোধে মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘটনায় দায়ীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা সরকারের রুটিন দায়িত্ব। কারণ এসব অপরাধের বিচার না হলে ভবিষ্যতে অপরাধীরা উৎসাহিত হবে। তাই বিএনপির যত দুরবস্থাই হোকনা কেন তাদের এসব মামলা মোকাবেলা করতে হবে।
-নয়াদিগন্ত।