শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > অবরোধ-হরতালের প্রভাব ॥ কর দিতে নগরবাসীর অনীহা, অর্থ সঙ্কটে ডিসিসি

অবরোধ-হরতালের প্রভাব ॥ কর দিতে নগরবাসীর অনীহা, অর্থ সঙ্কটে ডিসিসি

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: অব্যাহত হরতাল-অবরোধের কারণে চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। সঙ্কট ঘোচাতে কর আদায়ের প্রতি জোর দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। কর প্রদানে নাগরিকদের উৎসাহিত করতে এরই মধ্যে শতভাগ সারচার্জ মওকুফ করে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরশন (ডিএসসিসি)। তারপরও উল্লেখযোগ্য সাড়া মিলছে না নাগরিকদের পক্ষ থেকে।

জানা গেছে, চলমান হরতাল-অবরোধে শুধু অর্থ সঙ্কটের কারণেই থমকে আছে দুই সিটি করপোরেশনের নিয়মিত কর্মকাণ্ড। থমকে গেছে নাগরিক সেবাও। এরইমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভাবে নিয়মিত অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না। দেয়া যাচ্ছে না ঠিকাদারদের বকেয়া বিল। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন-ভাতা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠান দু’টিকে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে বকেয়া কর আদায়ে জোর দেয়া ছাড়া কোনো উপায়ই দেখছে না কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, হরতাল-অবরোধের কারণে আমাদেরকে বেশকিছু সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। গত দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অবরোধের পাশাপাশি হরতাল পালন করে আসছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এর ফলে পুরো নগরী জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিভিন্ন অজুহাতে অনেকেই করপোরেশনকে ট্যাক্স দেয়া থেকে বিরত থাকছেন। কর্মকর্তারাও নিয়মিত কর আদায়ের কাজ করতে পারছেন না। এ কারণে কমে গেছে প্রতিষ্ঠানের আয়ও।

শুধু তাই নয়, কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- চলমান পরিস্থিতির কারণে ভূমি রেজিস্ট্রার, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ, হোল্ডিং ট্যাক্স, বাজার সালামি, দোকান বরাদ্দ, সম্পত্তি হস্তান্তর, ট্রেড লাইসেন্স ফি, বিজ্ঞাপন ফি, কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া, বাস-ট্রাক টার্মিনাল ও পশুর হাট ইজারা, সড়ক খনন ফি ও যন্ত্রপাতি ভাড়া একেবারেই কমে গেছে। ফলে নগরভবনে ভিড় কমেছে সেবাপ্রার্থীদেরও।

ডিএসসিসির প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন বাংলামেইলকে বলেন, ‘বর্তমানে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবত ১১ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। আগামী জুন থেকে নতুন পে-স্কেল চালু হলে প্রতিমাসে আরো সাড়ে ৭ কোটি ঢাকা বাড়তি প্রয়োজন হবে। এখন সাড়ে ১১ কোটি টাকার বেতন দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে ডিএসসিসিকে। সামনে বাড়তি টাকা কোন খাত থেকে আসবে তা নিয়ে বিপাকে রয়েছি আমরা।’

এছাড়াও এখন পর্যন্ত শুধু ঠিকাদারদের পাস হওয়া বিল বাকি রয়েছে প্রায় সোয় ২০০ কোটি টাকা। যা এখনো পরিশোধকরা যায়নি। এভাবে চলতে থাকলে এ সঙ্কট আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলেও মন্তব্য করেন মাহমুদ হোসেন।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক শওকত মোস্তফার সঙ্গে কথা বলার জন্য তার কার্যালয়ে গেলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। পিএসের মাধ্যমে খরব পাঠিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রধানরা কথা বলবেন।’ তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও পাওয়া যায়নি কোনো সদুত্তর।

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনছার আলী খান বাংলামেইলকে বলেন, ‘নগরবাসী যদি ঠিকমতো ট্যাক্স পরিশোধ করে তাহলে নতুন পে-স্কেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে সমস্যা হবে না। কারণ, বর্তমান ট্যাক্স অটোমেশনের যে কার্যক্রম চলছে তা বাস্তবায়ন হলে আমাদের বর্তমানের চেয়েও দ্বিগুণ ট্যাক্স আদায় হবে।’

তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের কারণে তো আর ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ নেই। অহেতুক অজুহাত সৃষ্টি করে নিয়মিত ট্যাক্সসহ সিটি করপোরেশনের পাওনা টাকা নিয়ে টালবাহানা করছে নগরবাসী।’

সিটি করপোরেশনের আর্থিক সঙ্কট পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘোষণা দিয়ে সর্বপ্রথম গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত কর পরিশোধে শতভাগ সারচার্জ মওকুফের ঘোষণা দেয় ডিএসসিসি। এজন্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, নগরজুড়ে বিলবোর্ড-ব্যানারসহ নানাভাবে প্রচারণা চালানো হয়েছে। এতেও পর্যাপ্ত সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে তারিখ বাড়িয়ে করা হয় ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু তাতেও উল্লেখযোগ্য সাড়া মেলেনি নগরবাসীর পক্ষ থেকে। পরে সে তারিখও বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০ মার্চ।

ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বাংলামেইলকে বলেন, ‘হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানে উৎসাহিত করার জন্য আমরা ট্যাক্সের শতভাগ সারচার্জ ১০ মার্চ পর্যন্ত মওকুফ করেছি। এখনো অনেক টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে এ সমস্যা আরো বাড়ছে।’

কর আদায়ের হার বাড়ানোর জন্য ডিএসসিসি নানা কৌশল অবলম্বন করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থ বছরে আমাদের ট্যাক্স আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৭৫ কোটি টাকা। কিন্তু তা এখনো আদায় হয়নি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলমান আন্দোলনের কারণে বিভিন্ন ছোট-বড়-মাঝারি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠানে এখন অনেকটা অচলাবস্থা বিরাজ করছে। সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানেও পড়েছে ভাটা। যে কারণে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবীরা পাচ্ছেন না নিয়মিত বেতন। হরতাল-অবরোধের কারণে পেশাজীবীরাও রয়েছেন ভয়াবহ অর্থ সঙ্কটে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের এক কর্মকর্তা বাংলামেইলকে বলেন, ‘কর আদায় করতে গেলে নগরবাসীর হাতে নাজেহালের শিকার হতে হয়। তারা হরতাল অবরোধে ব্যবসা বাণিজ্য নেই বলে অজুহাত দেখিয়ে কর দিতে চান না। এজন্য কর আদায়ের হার কমে গেছে।’

হরতাল-অবরোধের প্রভাব পড়েছে ডিএসসিসির সামাজিক অনুষ্ঠানস্থল কমিউনিটি সেন্টারগুলোতেও। এসময় এ খাতটি থেকে লাখ লাখ টাকা আয় হওয়ার কথা থাকলেও চলমান আন্দোলনের কারণে নতুন কোনো বুকিং হচ্ছে না। যারা আগে বুকিং দিয়েছিলেন তারাও তা বাতিল করছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সমাজসেবা ও সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বাংলামেইলকে বলেন, ‘কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া এখন একেবারেই কমে গেছে। আগে কেউ ভাড়া নিয়ে থাকলেও এখন বাতিল করে দিচ্ছেন। অথচ অন্যান্য বছর এ সময় করপোরেশনের কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে বুকিংয়ের হিড়িক পড়তো।’

এদিকে আন্দোলন ঠেকানোর কাজে পুলিশবাহিনী ব্যস্ত থাকায় করপোরেশনের নিয়মিত অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে অনেক স্থান ও স্থাপনা বেদখল হয়ে যাচ্ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত দু’মাসে পুলিশের অভাবে উল্লেখযোগ্য কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়নি। নামমাত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে একটি উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। একইসঙ্গে নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রমেও ব্যাঘাত ঘটছে। এ নিয়ে নগরবাসীর অভিযোগেরও শেষ নেই। বাংলামেইল২৪ডটকম