এমপি বদির অ্যাকাউন্টে ‘সন্দেহজনক লেনদেন’!

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: কক্সবাজার-৪ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ও তার পরিবারের সদস্যের ব্যাংক হিসাব নম্বরে (অ্যাকাউন্ট) ‘সন্দেহজনক লেনদেন’ দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটির কাছে বদির নিজ নামে ১১টি অ্যাকাউন্ট এবং তার স্ত্রী-সন্তানের নামে ১০টি অ্যাকাউন্টের তথ্য রয়েছে। এসব অ্যাকাউন্টের চারটিতে সন্দেহজনক লেনদেন পেয়েছে দুদক। এরমধ্যে দু’টি বদির নিজ নামে, আর দু’টি তার পরিবারের সদস্যদের।

পরিবারের সদস্যদের নামে অ্যাকাউন্ট থাকলেও এগুলো বদি নিজে পরিচালনা করতেন কি-না দুদক তাও খতিয়ে দেখছে। এসব অ্যাকাউন্টে লেনদেনের পরিমাণ এবং কোন কোন অ্যাকাউন্টে ‘সন্দেহজনক লেনদেন’ হয়েছে তা সুষ্টু তদন্তের কারণে প্রকাশ্যে আনতে চায়নি দুদকের দায়িত্বশীল সূত্রটি।

দুদকের পদস্থ একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, এসব অ্যাকাউন্টে আসা অর্থ কোন উৎস থেকে এবং কি জন্য এসেছে তা দুদকের তদন্তে এখন পর্যন্ত অজ্ঞাত। দুদক এর উৎস বের করতে চেষ্টা করছে। যদি এসব অর্থের বিষয় অস্বচ্ছ মনে হয় তাহলে তদন্ত প্রতিবেদনে অ্যাকাউন্টধারীর বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থ স্থানান্তরের কারণে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ এনে চার্জশিটের সুপারিশ করা হবে।

তিনি জানান, বিদেশে অর্থপাচার যেমন মানি লন্ডারিং আইনের আওতাভুক্ত অপরাধ, তেমনি ব্যাংকে অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তরও এ আইনের আওতাভুক্ত।

দুদকের কাছে আবদুর রহমান বদি, তার দুই স্ত্রীর মধ্যে এক স্ত্রী শাহীনা আকতার, ছেলে আবদুল্লাহ আরমান শাওন ও মেয়ে সামিয়া রহমান সামীর নামে মোট ২১টি অ্যাকাউন্টের তথ্য রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বদির নিজ নামে রয়েছে ১১টি অ্যাকাউন্ট। যেগুলো বদি নিজে পরিচালনা করেন।

এরমধ্যে কক্সবাজার টেকনাফ শাখায় আরব বাংলাদেশ ব্যাংকে ৩টি অ্যাকাউন্ট, ঢাকা ব্যাংক কক্সবাজার শাখায় ১টি, কক্সবাজারে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ঝিলংজা শাখায় ১টি, একই ব্যাংকের প্রধান শাখায়ও রয়েছে তার আরেকটি অ্যাকাউন্ট, ইসলামী ব্যাংকের কক্সবাজার ও টেকনাফ শাখায় ২টি, সোনালী ব্যাংকের টেকনাফ শাখায় ৩টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এছাড়া তার মালিকানাধীন মেসার্স এ রহমান অ্যান্ড এজেন্সির নামে সোনালী ব্যাংক টেকনাফ শাখায় ২টি, ইসলামী ব্যাংকের টেকনাফ শাখায় ১টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

বদির স্ত্রী শাহীন আক্তারের নামে সোনালী ব্যাংকের টেকনাফ শাখায় ১টি, পূবালী ব্যাংকের উখিয়া শাখায় ১টি, ইসলামী ব্যাংকের টেকনাফ শাখায় ১টি, এবি ব্যাংকের টেকনাফ শাখায় ১টি একাউন্ট রয়েছে।

এছাড়া বদির মেয়ে সামিয়া রহমানের নামে মেসার্স সামিয়া এন্টারপ্রাইজের ২টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে সোনালী ব্যাংকের টেকনাফ শাখায়।

মেয়ে সামিয়া আক্তারের নামে মেসার্স সামিয়া এন্টার প্রাইজ নামে সোনালী ব্যাংকের টেকনাফ শাখায় ২টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ছেলে আবদুল্লাহ আরমান শাওনের মেসার্স শাওন এন্টারপ্রাইজের নামে সোনালী ব্যাংকের টেকনাফ শাখায় একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

এছাড়া বদির দ্বিতীয় স্ত্রী খাদেজা আকতার শাখেরুন্নেছা শাকীর নামে কোনো অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য এখনও পায়নি দুদকের তদন্ত টিম। এসবের বাইরে বদি ও তার পরিবারের আরও কোনো অ্যাকাউন্ট রয়েছে কি-না দুদক তা খতিয়ে দেখছে। এছাড়া ২১টি অ্যাকাউন্ট বিভিন্ন নামে থাকলেও বদিই এগুলো পরিচালনা করছেন কি-না দুদক তাও তদন্ত করছেন।

ইতিমধ্যে এসব অ্যাকাউন্টের হিসাব-সংক্রান্ত সব তথ্য, হিসাব খোলার আবেদন ফরম, নমুনা স্বাক্ষর কার্ড, কেওয়াইসি প্রোফাইলসহ শুরু থেকে হালনাগাদ লেনদেন বিবরণীর সব রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছে দুদক।

প্রসঙ্গত, অবৈধ সম্পদের অভিযোগে গতবছরের ২১ আগস্ট আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় মামলা দায়ের করে দুদক। দুদকের মামলায় প্রায় তিন সপ্তাহ কারাভোগ করেছেন সরকার দলীয় এ সংসদ সদস্য।

এজাহারে বলা হয়েছে, বদির নামে ১০ কোটি ৮৬ লাখ ৮১ হাজার ৬৬৯ টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে। সম্পদ বিবরণীতে তিনি ওই পরিমাণ সম্পদ গোপন করেছিলেন। এ ছাড়া অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের বৈধতা দেখানোর জন্য কম মূল্যের সম্পদকে এক কোটি ৯৮ লাখ তিন হাজার ৩৭৫ টাকা বেশি উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্বাচনী হলফনামার তথ্য অনুযায়ী মহাজোট সরকারের পাঁচ বছরে বদির আয় বেড়েছে ৩৫১ গুণ। ওই পাঁচ বছরে তিনি আয় করেছেন ৩৬ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪০ টাকা। বার্ষিক আয় সাত কোটি ৩৯ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৮ টাকা এবং বার্ষিক ব্যয় দুই কোটি ৮১ লাখ ২৯ হাজার ৯২৮ টাকা।
অনুসন্ধানকালে নির্বাচনী হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গছে, বিগত মহাজোট সরকারের আমলে তার সম্পদ বাড়তে থাকে অস্বাভাবিকভাবে।

এ মামলায় বদি গত ১২ অক্টোবর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এরপর ১৬ অক্টোবর ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ও মহানগর দায়রা জজ আদালতে তার জামিন আবেদন খারিজ হলে ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন বদি।

গত ২৭ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের করা মামলায় বদিকে ছয় মাসের জামিন দেন। এটাকে চ্যালেঞ্জ করে আপিল করে দুদক। ২৯ অক্টোবর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত এ জামিন বহাল রাখেন। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫