বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
গুলশান কার্যালয় থেকে: গুলশানে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে টানা এক হাজার ৪শ’ ২৬ ঘণ্টা পার করলেন খালেদা জিয়া। চলতি বছরের ০৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের এ কার্যালয়বাস।
অবশ্য সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিস করার নিয়মে নিজেকে কখনোই বাঁধেননি খালেদা। নানা সমালোচনা অগ্রাহ্য করেও তিনি অফিস করতেন সন্ধ্যার পর থেকে মাঝরাত পর্যন্ত।
কেউ বলতেন, খালেদা অনিদ্রার রোগী। তাই তিনি দিনে ঘুমান, রাতে অফিস করেন। আবার কেউ বলতেন, সারাদিনের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুবিধার্থে এ রাতের অফিস।
ঘটনা যাই হোক, সুযোগটি ছাড়তেন না তার বিরোধীরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে তার দলের নেতারা নানা সময় এ নিয়ে খুনসুটি করেছেন এ ‘অনিয়মের নিয়ম’ নিয়ে। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।
গত ০৩ জানুয়ারিও প্রায় একই ঘটনাই ছিল। এদিন সন্ধ্যায় তিনি অফিসে আসেন। এরপর দলের দফতর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী অসুস্থ জেনে তাকে দেখতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু আটকে দেওয়া হয় খালেদাকে।
ভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছিল, রিজভী অসুস্থ নন, বরং তাকে দেখতে যাওয়ার নামে খালেদা নয়াপল্টনে যাবেন ও সেখানেই অবস্থান নেবেন বলে পরিকল্পনা রয়েছে। যাতে ০৫ জানুয়ারি জোটের কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন।
একদিকে খালেদাকে কার্যালয়ে থাকতে ‘বাধ্য’ করা হলো; অন্যদিকে, রিজভীকে অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপর খালেদা আর বের হননি গুলশান কার্যালয় থেকে। জাতি দেখতে পেল, গুলশানকেন্দ্রীক রাজনীতি। অবরোধ-হরতাল এলো, কার্যালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা এলো, সেই সঙ্গে খাবার ঢুকতে না দেওয়ার গল্প। এভাবেই লম্বা সময় কেটে গেল এ রাজনীতিকের।
এর মধ্যে, তার জীবনের অন্যতম কষ্টের দিনটি এসেছে ২৪ জানুয়ারি। ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু খবর জানলেন। হতবিহ্বল হয়ে পড়েন সেই সময়টিতে।
এরপর মাস পেরোতেই ২৫ ফেব্রুয়ারি তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। আর মার্চের শুরুতেই আসে কার্যালয়ে তল্লাশির নির্দেশ।
সঙ্গে সময় বেধে দেওয়া হয় ০৪ মার্চের। এদিন তাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তাই জল্পনা-কল্পনার শেষ রইলো না। সোমবার (০২ মার্চ) খালেদার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন জানালেন, নিরাপদে কার্যালয়ে ফেরার নিশ্চয়তা পেলেই খালেদা আদালতে যাবেন, নইলে নয়।
রাত ৪টা: ০৪ মার্চকে সামনে রেখে ০৩ মার্চ রাতের শেষ। খালেদার কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের আনাগোনা।
গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে খালেদা বেশ কয়েকজন নেতা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ রয়েছেন কার্যালয়ে। বুধবার তাকে আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
যদিও গুলশান সূত্র বলছে, খালেদা প্রস্তুতি নিচ্ছেন ছেলের চেহলাম পালনের।
কোকোর মৃত্যুর ৪০ দিন পূর্ণ হচ্ছে বুধবার। দিনব্যাপী মিলাদ ও কুরআন তেলাওয়াতের আয়োজন করা হবে বলে খালেদার মিডিয়া উইং থেকে বলা হচ্ছে। বাদ আসর হবে কোকোর জন্য বিশেষ মোনাজাত।
ছেলের জন্য দোয়া জানাতে দেশবাসী ও ২০ দলের নেতাকর্মীদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা।
অবস্থাদৃষ্টে অনেকেরই ধারণা, খালেদা আদালতে এসব কারণেই যাবেন না। ছেলের চেহলামের দিনে কার্যালয়ে পুলিশ ঢুকে তাকে গ্রেফতার করবে বা তল্লাশি চালাবে, এমনটি ভাবতে চাইছেন না অনেকে। কারণ, এদেশে পরিবার ও ধর্মীয় আচারকে গুরুত্ব দেওয়া হয় অনেক বেশি।
এছাড়া নিজেরই দেওয়া হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি ভেঙেও আদালতে যাওয়ার কথা নয় খালেদার।
তারপরও অপেক্ষা সবার ০৪ মার্চের, কী হয়, সেটাই যেন দেখার আগ্রহ। কারণ, রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই।
মঙ্গলবার (০৩ মার্চ) রাত অথবা বুধবার ভোরে কার্যালয়ে তল্লাশি হবে বলে গুঞ্জন রটেছিল সোমবারই। হোক গুঞ্জন, তবু নিশ্চিন্তে বসে থাকতে পারেন না সাংবাদিকরা। তাই তাদের বিনিদ্র রাত কাটছে গুলশানে।
কার্যালয়ের ফটকে পাহারায় রয়েছেন পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যরা। ভেতরে অবস্থানকারীদের চেহারাও মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে ফটকে বা বারান্দায়।
গুলশানের ডুমো মশাদের নিরলস রক্তপানে অভ্যস্ততার ভান করেই কাজ করছেন সাংবাদিক-পুলিশ। যেকোনো আপডেট তাৎক্ষণিকভাবে জাতিকে জানাতে বরাবরই প্রস্তুত থাকতে হচ্ছে তাদের। কোনো গাড়ির শব্দ শোনামাত্রই সজাগ হয়ে উঠছেন আরও বেশি। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম