শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ডেটলাইন ৫ জানুয়ারি: কি ঘটবে সেদিন?

ডেটলাইন ৫ জানুয়ারি: কি ঘটবে সেদিন?

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। সরকার ও বিরোধী পক্ষ কৌশলের পর নতুন কৌশল করছেন। নিজ অবস্থান থেকে দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে অনড় উভয় জোট। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বাইরে থাকা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও আগামী ৫ জানুয়ারির দিকে দৃষ্টি রাখছে। কোন কোন ছোট দল ইতিমধ্যে ৫ জানুয়ারি কেন্দ্রীক কিছু কর্মসূচি পালন করেছে। আর সরকার ও বিরোধী জোটে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অবস্থান জানান দিতে মরিয়া হয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। একইদিন আওয়ামী লীগ ও ২০ দল রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন করতে ইতিমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
ডেটলাইন ৫ জানুয়ারি- কি ঘটবে সেদিন? এমনই প্রশ্নের মাঝে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু নিয়ে শঙ্কা কাটছে না।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটসহ দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ৫ জানুয়ারিকে গণতন্ত্র হত্যাদিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিলেও আওয়ামী লীগ বলছে এ দিনটি ছিল গণতন্ত্রের বিজয় দিবস। আর সে হিসেবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৫ জানুয়ারিকে অনেকটা ভিন্ন আঙ্গিকে পালন করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আর এ নিয়ে সরকার ও বিরোধী জোটের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই অশান্ত হয়ে উঠছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ৫ জানুয়ারি রাজধানীতে সমাবেশের অনুমতি দিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, আমাদের সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। এ সময় তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অনুমতি না পেলেও যেকোনো মূল্যে রাজধানীতে সমাবেশ করবে তার দল। এ সময় তিনি অনুমতি দেয়া নিয়ে সরকার ও পুলিশ প্রশাসন টালবাহানা করছে বলেও অভিযোগ করেন। এ প্রসেঙ্গ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানান, বিএনপি যদি নাশকতার আশঙ্কা নিয়ে মাঠে নামতে চায় তাহলে ৫ জানুয়ারি ঢাকায় তাদের সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে না।
একই দিন সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, ৫ জানুয়ারি রাজপথ থাকবে তার দলের দখলে। এ সময় তিনি বিএনপি নেতাদের ‘কাগুজে বাঘ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ওইদিন রাজপথে তাদের (বিএনপি) খুঁজেও পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, আন্দোলন মোকবেলা করতে আওয়ামী লীগের কোনো সময় লাগে না। আন্দোলন মোকাবেলা করতে আওয়ামী লীগ সব সময়ই প্রস্তুত বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ সময় হানিফ জানান, ওইদিন রাজধানীর ১৬ স্থানে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ।
এদিকে শুক্রবার সকালে রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ৫ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন সরকার সমাবেশ করার অনুমতি না দিলেও কর্মসূচি পালনে ওইদিন রাজপথে থাকবে তার দল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ধ্বংসের রাজনীতি করে। আর বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছে। দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমেই জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এদিকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪, ২০ দলীয় জোট নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চলমান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে ৭ দফা প্রস্তাব দেন। গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে ২০ দলের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব পেশ করেন। এ বিষয়ে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপও নিতে বলেন তিনি।
মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের ৭ দফা প্রস্তাব নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন প্রতিক্রিয়া না ানালেও দলের পক্ষ থেকে তৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। এছাড়াও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ খালেদা জিয়ার ৭ দফা দাবি কোনক্রমেই বাস্তবসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেছেন। অপরদিকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ২০ দলের পক্ষ থেকে দেয়া প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে ৫ জানুয়ারি দলের কর্মীদের মাঠে থাকতে নিদের্শ দিয়েছেন।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১ জানুয়ারি রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজনৈতিক দলের প্রতি আহবান জানান। ওইদিন তিনি বলেন, আসুন সবাই হানাহানি বন্ধ করে একসঙ্গে বসি। কীভাবে একটি সুন্দর নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করি। কিন্তু মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে আলোচনার কোন সম্ভাবনা নেই বলে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা দশম (বিতর্কিত) জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না দেয়ায় বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোট এতে অংশ নেয়নি। এছাড়া দেশের অনেক পুরোনো রাজনৈতিক দলও এ নির্বাচন বর্জন করে। বিশেষ করে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই ১৫৪ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় এ নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে শতকরা ৪০ ভাগেরও বেশি ভোটার ভোট দিয়েছে বলে দাবি করা হলেও বিএনপি বলছে ওইদিন দেশের ৫ ভাগ ভোটারও ভোট কেন্দ্রে যায়নি। এ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা এখনো সমাধান হয়নি।