শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > আর কত ঝুঁকি নেবে সুন্দরবন!

আর কত ঝুঁকি নেবে সুন্দরবন!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
সুন্দরবন: আপাতত সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে নৌ-চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে পশুর ও মংলা নদীসহ বনের আশপাশের নদীতে আগের মতোই চলছে ট্যাঙ্কার ও জাহাজ। এতে মঙ্গলবারের তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবির কারণে ছড়িয়ে পড়া তেল ঢেউয়ে ঢেউয়ে বনের ভেতরে আছড়ে পড়ছে।

ঘন কুয়াশার মধ্যে চলাচলরত এসব নৌযানের অধিকাংশেরই ফিটনেস নেই। এসব নৌযান ধারণ ক্ষমতার অধিক তেল ও মালামাল নিয়ে চলাচল করছে।

শুক্র ও শনিবার অনুসন্ধানকালে পূর্ব সুন্দরবনের বেশ কয়েকটি নদী ঘুরে এসব দেখা গেছে।

পরিবেশবাদীরা আশঙ্কা করছেন, এসব নৌযানের কারণে আবারও বনের মধ্যে যে কোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

তাদের দাবি, সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে এই মুহূর্তে নৌ-রুট বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে সুন্দরবনে জরুরি ‘পরিবেশগত দুর্যোগ’ ঘোষণা দিতে হবে।

ঘটনার পর বুধবার সুন্দরবনের শ্যালা চ্যানেল দিয়ে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, বন বিভাগ, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও বিআইডব্লিউটিএ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মংলা-ঘষিয়াখালি আন্তর্জাতিক নৌ চ্যানেলের নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় ২০১১ সাল থেকে পূর্ব সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র আওতায় তেল ও পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়।

বর্তমানে পূর্ব সুন্দরবনের বুক চিরে প্রতিদিন মাত্রাতিরিক্ত শব্দ করে দুই শতাধিক নৌযান চলছে। বিশেষ করে পণ্যবাহী লাইটার ও কার্গো জাহাজ এবং তেলবাহী ট্যাঙ্কার চলছে- যেগুলোর অধিকাংশই ফিটনেসবিহীন।

অবশ্য বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা জানান, মংলা-ঘষিয়াখালি আন্তর্জাতিক নৌ-চ্যানেলের ড্রেজিং শেষ হলে সুন্দরবনের ভেতরের এই নৌ পথটি আর ব্যবহার করতে হবে না।

বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের মংলা অঞ্চলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রতিদিন খুলনা ও মংলা সমুদ্রবন্দর হয়ে বনের ভেতর দিয়ে দুই শতাধিক দেশি বিদেশি ছোট-বড় লইটার ও কার্গো জাহাজ চলাচল করছে।

এসব জাহাজের হাইড্রোলিক হর্নের উচ্চ শব্দ প্রাণীদের স্বাভাবিক চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।

একাধিক বন কর্মকর্তা জানান, ওয়েল ট্যাংকার চলাচলের কারণে নদীর পাড় ভাঙছে। ফলে এই মাটিগুলো নদীর গভীর স্থানগুলো ভরাট করে ফেলছে, আর তাতে করে শুশুক ও ইরাবতীদের বাসস্থান নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া একের পর এক লঞ্চ, কার্গো, জাহাজ, ট্যাঙ্কার ও লাইটারেজ ডুবির ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে সুন্দরবন।

মঙ্গলবার ভোরে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের অন্তর্গত মৃগোমারী ও তাম্বুল বুনিয়ার মাঝামাঝি এলাকায় ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ নামে একটি তেলবাহী ট্যাঙ্কারডুবির ঘটনা ঘটে। খুলনার পদ্মা ওয়েল ডিপো থেকে জ্বালানি তেল (ফার্নেস অয়েল) নিয়ে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে গোপালগঞ্জের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাবার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

শ্যালা নদীতে এ দুর্ঘটনার পর তেলবাহী ওই ট্যাংকার থেকে তিন লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল ছড়িয়ে পড়ছে সুন্দরবনের প্রায় ২০০ কিলোমিটার নদী-খালে। এর ফলে সুন্দরবনের জলজ জীববৈচিত্র্য বড় ধরনের হুমকিতে পড়েছে।

ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির এডুকেশন ও রিচার্জ কো-অর্ডিনেটর ফারহানা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, বনের ভেতর দিয়ে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ যান চলাচল কোনভাবেই কাম্য নয়।

উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোটের (ক্লিন) প্রধান সঞ্চালক হাসান মেহেদীর দেওয়া তথ্য মতে, ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌরুট বন্ধ করার নির্দেশ দেন। ২০১২ সালের ২১ আগস্ট পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে একই অনুরোধ জানায়। কিন্তু নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ওই নির্দেশ ও অনুরোধের কোনো তোয়াক্কাই করেনি।

তিনি জানান, ২০০২ সালে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে তিনটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সুন্দরবনের তেল-দূষণের সম্ভাব্য ক্ষতি বিষয়ে একটি সমীক্ষা চালায়। তেল-দূষণ থামানো না গেলে প্রথম ১৫ দিনের মধ্যে পাখি, কচ্ছপ, ছোট মাছ ও অমেরুদণ্ডী প্রাণী মারা যেতে পারে বলে ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল।

তিনি অভিযোগ করেন, ওই প্রতিবেদনে তেল-দূষণ রোধ করার জন্য বন বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ ক্রয়, স্থানীয় জনগণ ও স্বেচ্ছাসেবীদের অংশগ্রহণে বাঁশ, কাঠের গুঁড়ি, কাঁচা পাট, খড়কুটো, বস্তা ও চট ব্যবহার করে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল।

ওই প্রতিবেদনের পর এক যুগ পার হয়ে গেলেও কোনো প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি।

সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌ-চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ করা সহ তেল অপসারণের কাজ প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে সরাসরি তদারকিরও আহ্বান জানান মেহেদী। একই সঙ্গে তিনি সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে এই মুহূর্তে নৌ-রুট বন্ধ করে সুন্দরবনে জরুরি পরিবেশগত দুর্যোগ ঘোষণা দেওয়ারও দাবি জানান।

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আমীর হোসেন চৌধুরী শনিবার বলেন, সুন্দরবনের শ্যালা চ্যানেল দিয়ে সব ধরনের নৌযান চলাচল বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।

আশপাশের নদীতে নৌচলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি সরকার জানেন।’