রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > শুল্কমুক্ত নিউজপ্রিন্ট বিক্রি হয় পরিচিতমহলে

শুল্কমুক্ত নিউজপ্রিন্ট বিক্রি হয় পরিচিতমহলে

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: দেশে তৈরি কাগজ গুণে-মানে সেরা, রঙ ভাল, কাটতিও বেশি। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী শুল্কমুক্ত বিদেশি কাগজ বাজারে কম মূল্যে বিক্রি করছে। এতে দেশীয় কাগজের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আশাহত হচ্ছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা।

এই বিদেশি কাগজের তালিকায় রয়েছে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমাদানি করা নিউজপ্রিন্টও। রাজধানীর নয়াবাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এই বাজারে পাইকারি ছাড়াও খুচরা কাগজ বিক্রি করা হয়।

কাগজ প্রস্তুতকারী, ব্যবসায়ী, প্রিন্টিং প্রেসের মালিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে এসব অসাধু ব্যবসায়ীর হাত থেকে দেশীয় কাগজের বাজারকে রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিদেশি কাগজের মধ্যে সংবাদপত্রের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা নিউজপ্রিন্ট, আর্ট পেপার, ডুপ্লেক্স বোর্ড দেশীয় কাগজের বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

এক শ্রেণির সংবাদপত্রের মালিক প্রচার সংখ্যা বেশি দেখিয়ে শুল্কমুক্ত নিউজপ্রিন্ট আমদানি করে অতিরিক্ত নিউজপ্রিন্ট ওই অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। আর তা ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বাজারে চলে যায়।

সংবাদপত্রগুলো প্রচারসংখ্যা ও ছাপানো পৃষ্ঠার সংখ্যা অনুযায়ী ক্যাটাগরি অনুযায়ী শুল্কমুক্ত সুবিধায় নিউজপ্রিন্ট আমদানির সুযোগ পায় বলে জানায় চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডিএফপি)।

ডিএফপি’র তথ্যমতে, বার্ষিক গ্রস আয় এবং প্রচারসংখ্যা অনুযায়ী দৈনিক পত্রিকাগুলোকে ‘ক’ থেকে ‘ঙ’ শ্রেণিভূক্ত করা হয়েছে। গ্রস আয় ২৫ কোটি বা তদুর্ধ্ব এবং প্রচার সংখ্যা ৫০ হাজার (বাংলা) ও ২৫ হাজার (ইংরেজি) হলে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত হয়।

এভাবে গ্রস আয় ১০ কোটি বা তদুর্ধ্ব এবং প্রচার সংখ্যা ২৫ হাজার (বাংলা) ও ১৫ হাজার (ইংরেজি) হলে ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত; গ্রস আয় দুই কোটি বা তদুর্ধ্ব এবং প্রচার সংখ্যা ১৫ হাজার (বাংলা) ও পাঁচ হাজার (ইংরেজি) হলে ‘গ’ শ্রেণিভুক্ত; গ্রস আয় এক কোটি বা তদুর্ধ্ব এবং প্রচার সংখ্যা সাত হাজার (বাংলা) ও দুই হাজার (ইংরেজি) হলে ‘ঘ’ এবং গ্রস আয় এক কোটি বা তার নিচে এবং প্রচার সংখ্য সাত হাজারের নিচে (বাংলা) ও দুই হাজারের নিচে (ইংরেজি) হলে ‘ঙ’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়।

ডিএফপি’র পরিচালক (বিজ্ঞাপন ও নিরীক্ষা) নূরুন নাহার নাজমা বাংলানিউজকে বলেন, সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে যেগুলো অষ্টম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করছে তারা শুল্কমুক্ত নিউজপ্রিন্ট আমদানির সুযোগ পায়।

কিন্তু রাজধানীর নয়াবাজারে সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, নিম্ন ক্যাটাগরিভুক্ত সংবাদপত্রগুলো প্রচার সংখ্যা বেশি দেখিয়ে বেশি পরিমাণে শুল্কমুক্ত নিউজপ্রিন্ট আমদানি করে। খবরের কাগজ ছাপানোর চেয়ে লাভজনক হওয়ায় পরে সেগুলো খোলা বাজারে বিক্রি করে।
স৪থনমথ
নিউজপ্রিন্টের পাশাপাশি বিভিন্ন গার্মেন্টসের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় নিয়ে আসা কাগজও খোলা বাজার হয়ে চলে যায় ক্রেতাদের হাতে।

রোববার নয়াবাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, মেসার্স গ্রীন পেপার হাউস, গাজী ট্রেডার্স, প্রত্যাশী, কাগজ বিতান, সোনারগাঁও, এলিট পেপার্স, ভাই ভাই ছাড়াও বেশ কয়েকটি দোকানে শুল্কমুক্ত এসব নিউজপ্রিন্ট বিক্রি হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নয়াবাজারের জিন্দাবাজার প্রথম লেনের এক দোকানদার বাংলানিউজকে বলেন, অর্ডার দিলে শুল্কমুক্ত এসব নিউজপ্রিন্ট পাওয়া যাবে। অপরিচিত কাউকে শুল্কমুক্ত নিউজপ্রিন্ট দেয়া হয় না।

সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে এসব দোকানে শুল্কমুক্ত নিউজপ্রিন্ট বিক্রির কথা অস্বীকার করেছেন গ্রীন পেপার হাউস ও গাজী ট্রেডার্সের বিক্রয়কর্মীরা।

নওয়াব আক্তার উদ্দিন পেপার মার্কেটের গ্রীন পেপার হাউসের আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, ৩/৪ বছর আগে কোরিয়ান নিউজপ্রিন্ট পাওয়া যেত, তবে এখন আর পাওয়া যায় না।

তবে ফকিরাপুলের একটি প্রিন্টিং প্রেসের স্বত্ত্বাধিকারী বাংলানিউজকে বলেন, পরিচিতদের কাছে শুল্কমুক্ত নিউজপ্রিন্ট বিক্রি করা হয়। অপরিচিত ক্রেতারা শুল্কমুক্ত নিউজপ্রিন্ট কিনতে পারবে না। একটি সিন্ডিকেট এসব শুল্কমুক্ত কাগজ কিনে সস্তায় বিক্রি করে আসছে।

দেশীয় কাগজের তুলনায় শতকরা ২০ শতাংশ কম মূল্যে এসব কাগজ পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।

নয়াবাজারে সৈয়দ হাসান আলী লেনের পাইকারি কাগজ বিক্রেতা ও ডিলার বাংলানিউজকে বলেন, শুল্কমুক্ত (বন্ড আইটেম) আর্ট পেপার, নিউজপ্রিন্ট, ডুপ্লেক্স বোর্ড খোলা বাজারে বিক্রি হয়। অথচ এসব বন্ড আইটেম বিভিন্ন গার্মেন্টেসের নামে নিয়ে আসা হয়।

কাগজ ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘দ্য বাংলাদেশ পেপার মার্সেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’র কাছে এ বিষয়ে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

শুল্কমুক্ত নিউজপ্রিন্ট খোলা বাজারে বিক্রির বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে কোন স্টেটমেন্ট দেবো না।

সংবাদপত্রের জন্য আনা শুল্কমুক্ত নিউজপ্রিন্ট খোলা বাজারে বিক্রির বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না- জানতে চাইলে ডিএফপি’র পরিচালক নূরুন নাহার নাজমা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি দেখবে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম