শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > পরিকল্পনা কমিশন এতোই দক্ষ ! ॥ ৭ ঘণ্টায় মতামত নেবে ১২০ সংগঠনের

পরিকল্পনা কমিশন এতোই দক্ষ ! ॥ ৭ ঘণ্টায় মতামত নেবে ১২০ সংগঠনের

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মতামত নিতে পরিকল্পনা কমিশন শেষ মুহূর্তে চিঠি পাঠিয়ে ৮০টি ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটা থেকে এ বৈঠক শুরু হবে।

বুধবার এই বৈঠকের চিঠি কয়েকটি ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রধানের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে আরেকটি বৈঠক হবে, যেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে অন্তত ব্যবসায়ীদের ৪০টি চেম্বারের প্রধানকে।

এই দুই বৈঠক মিলিয়ে বৃহস্পতিবার এক দিনে প্রায় ১২০টি ব্যবসায়ী সংগঠনের মতামত গ্রহণের ব্যবস্থা করেছে পরিকল্পনা কমিশন।

তবে ব্যবসায়ীদের অনেকেই এ বৈঠকের বিষয়ে কিছু জানেন না। তাদের কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ৮০টি সংগঠনকে একসঙ্গে বৈঠকে ডাকলে তাতে বৈঠকের কোনো পরিবেশ থাকেনা। এ ধরনের বৈঠকের কোনো মানেই হয় না। এতে ২/৩ মিনিট সময় পেয়ে গড় একটা বক্তব্য দেওয়া যায়, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অবদান রাখার মতো কোনো মতামত দেওয়া সম্ভব নয়।

ব্যবসায়ীদের মত, পরিকল্পনা কমিশন সত্যিকার অর্থে পরিকল্পনা করতে চাইলে খাত ধরে ধরে আলাদাভাবে তাদের সঙ্গে বসতে হবে। তবে এজন্য আগে থেকে তাদের সময় দেওয়া হোক।

জানা গেছে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরি হবে ২০১৬-২০ সালের জন্য। ২০২১ সালেই বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে চায়। সরকারের জন্য এ পরিকল্পনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাদের মাধ্যমে মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার আশা, সেই ব্যবসায়ীদের মতামতও এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভালোভাবে প্রস্তুতি ও সময় নিয়ে মতামত না দিতে পারলে সঠিক পরিকল্পনা হবে না। এতে করে মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার লক্ষ্য অর্জন ব্যাহত হতে পারে।

এর আগে গত ১৯ নভেম্বর পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ওপর মতামত দিতে অর্ধশতাধিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেই বৈঠকেরও আমন্ত্রণপত্র ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছেছিল শেষ মুহূর্তে। ফলে ওই বৈঠকে ৮/১০টির মতো ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বেশিরভাগ উপস্থিত না থাকায় কার্যত ওই বৈঠক ব্যর্থ হয়।

এনএসই সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠকের জন্য অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি ইস্যুর তারিখ ছিল ২৭ নভেম্বর। কিন্তু মাঝখানে ৬ দিন সময় থাকলেও বেশিরভাগই চিঠি পেয়েছেন গত মঙ্গল ও বুধবার। অনেকে এখনো এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।

এ বিষয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, তিনি এ বৈঠকের বিষয়ে কিছুই জানেন না। অথচ বৈঠকে আমন্ত্রিত সংগঠনের তালিকায় ৭২ নম্বরে আছেন তিনি।

দুপুরে শুরু করে কিভাবে অল্প সময়ে ৮০ সংগঠনের মতামত সঠিকভাবে নেওয়া সম্ভব হবে জানতে চাইলে রিহ্যাব সভাপতি বলেন, ৮০টি সংগঠনকে এক বৈঠকে ডেকে আসলে কী পরিকল্পনা হবে? একেক খাতের একেক রকম সমস্যা ও সম্ভাবনা আছে।

তিনি মনে করেন, খাতওয়ারি আলাদা বৈঠকে বসা উচিত। আবাসন খাত নিয়ে একটি বৈঠক হলে সেখানে সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনকে ডাকা যেতে পারে। এভাবে পোশাক খাত নিয়ে একটি বৈঠক হলে সেখানে পোশাক ও বস্ত্র খাতের সবাইকে রাখা যেতে পারে।

রপ্তানি খাতের একটি ব্যবসায়ী সংগঠনের এক সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ রকম বৈঠক কখনো অর্থবহ হয় না। আমি মনে করি, খাতওয়ারি হওয়া ভালো।

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পর দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রকে (পিআরএসপি) বাদ দিয়ে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে দেশে পিআরএসপি চালু ছিল। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, ব্যবসায়ী সংগঠন, অ্যাসেসিয়েশনসহ বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নিয়ে পাঁচ বছর মেয়াদী (২০১১-১৫) ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা চালু হয় ২০১১ সালে। ওই পাঁচশালা পরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছর। এরপর শুরু হবে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনার দলিল প্রণয়নে এখন কাজ করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। অভিযোগ রয়েছে, আসন্ন পাঁচশালা পরিকল্পনাকে যে ধরনের গুরুত্ব দেওয়ার কথা, সেটি দেওয়া হচ্ছে না। অনেকটা তড়িঘড়ি করেই পরিকল্পনা দলিল চূড়ান্ত করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, তাদের মতামতও পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রতিফলিত হয়না। তাই এসব মতামত দেওয়া গুরুত্বহীন। তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দাবি, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মতামত নেওয়ার জন্য যেসব অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, তাতে আমন্ত্রণের চিঠি পাঠানো হয় বেশ কয়েক দিন আগে। কিন্তু সে চিঠি ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছে পৌঁছতে অনেক সময় লেগে যায়। যোগাযোগ সমস্যার কারণে এটি হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।

কমিশনের একাধিক সূত্র জানায়, দুপুরে যে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে, সেটি আগে থেকেই নির্ধারিত। সভায় কাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে, তা পরিকল্পনামন্ত্রীর নির্ধারণ করার কথা। সে ফাইল অনেক আগে মন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সরকারি সফরে মন্ত্রী থাইল্যান্ডে থাকায় সে ফাইল অনুমোদন দিতে পারেননি। মন্ত্রী দেশে ফিরে তা অনুমোদন দিলেও অনেক দেরি হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম বলেছেন, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয় অনেক আগে। কিন্তু তাদের কাছে সেটি পৌঁছতে দেরি হয়। এতে সমস্যা তৈরি হয়।

বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছ থেকে লিখিত মতামত নেওয়ার কথা বলবেন বলে জানান তিনি।

অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী জুনে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) বৈঠক করতে আগ্রহী সরকার। ওই বৈঠকেই সপ্তম পঞ্চবার্ষিক দলিল তুলে ধরার পরিকল্পনা রয়েছে। সে জন্য পরিকল্পনা দলিলটি দ্রুত ও তড়িঘড়ি করে চূড়ান্ত করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এ কারণেই আজ প্রায় ১২০টি সংগঠনের সঙ্গে সকাল-বিকেল বৈঠকে বসবে মন্ত্রণালয়।

ঢাকা চেম্বারের একজন কর্মকর্তা জানান, তিনিও ওই বৈঠকের আমন্ত্রণ পেয়েছেন। তবে সভাপতি যাবেন না, গবেষণা বিভাগের একজন কর্মকর্তার যাওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর আগে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় তাদের মতামত ও সুপারিশ নেওয়া হলেও দলিল চূড়ান্ত করার সময় তাদের সেই মতামতের কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি।

সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) ও বণিক বার্তা আয়োজিত এক সেমিনারে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এম শামসুল আলম অভিযোগ করেছেন, জ্বালানি বিষয়ে তিনি যেসব মতামত দিয়েছিলেন, তার কিছুই ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ ধরনের মতামত নেওয়ার কোনো মানে হয় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ওই সেমিনারে পরিকল্পনামন্ত্রী নিজেও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এই অভিযোগের কোনো উত্তর দেননি।

অপরদিকে, গত ১৯ নভেম্বরের বৈঠকে অর্ধশতাধিক সংগঠনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও উপস্থিত ছিল মাত্র ৮/১০টির প্রতিনিধি। একপর্যায়ে অনুষ্ঠানের মাঝখানে সংসদে যাওয়ার কথা বলে পরিকল্পনামন্ত্রীও চলে যান।

জানা গেছে, ওই বৈঠকে যেসব ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন তাদেরও পুরোপুরি বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ মেলেনি। তবে মন্ত্রী তাদের মতামত লিখিত আকারে দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম