শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে মুক্তিপণ আদায়

মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে মুক্তিপণ আদায়

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ [নাফ নদীতে ছোট নৌকায় করে দালালরা মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুকদের এভাবেই নেয়া হয়]
নাফ নদীতে ছোট নৌকায় করে দালালরা মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুকদের এভাবেই নেয়া হয়

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে কক্সবাজারে বঙ্গোপসাগর দিয়ে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর কথা বলে তাদের গভীর সমুদ্রে আটকে রেখে বড় অংকের মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ এখন বেশি উঠছে।
মুক্তিপণের টাকা দিয়ে ফেরত আসা একজন বলেছেন, টাকা দেওয়ার পরও শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে ফিরতে হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে মৃতদেহও পাওয়া যায় না।
স্থানীয় প্রশাসন বলেছে, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ,থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়া-চারটি দেশের দালালরা সংঘবদ্ধভাবে মানব পাচার এবং অর্থ আদায়ের এই অপরাধ করছে।
ফলে দেশী-বিদেশী দালাল চক্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের একক অভিযান কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে শেষপ্রান্তে নাফ নদীর সীমান্তের একটি পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়,নদীতে ছোট ছোট অসংখ্য নৌকা চলাচল করছে।
সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর বক্তব্য অনুযায়ী,এ সব নৌকায় করে জেলেরা মাছ ধরে। আর অনেক সময় এই জেলের সাজ নিয়েই পাঁচজন-সাতজন লোককে নৌকায় করে সাগরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয় অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য।
দেশি-বিদেশী দালালরা এই অঞ্চলকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছে, এমন অভিযোগও উঠছে।
দালালের খপ্পরে পড়েছিলেন নাফ নদীর তীরের রঙ্গীখালী গ্রামের জয়নাল আবেদীন। মালয়েশিয়া যাওয়া হয়নি তাঁর। বঙ্গোপসাগরের গভীরে জাহাজে আটকে রেখে তাঁর উপর নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতিত হয়েছেন থাইল্যান্ডে। শেষ পর্যন্ত তার মা জমি বিক্রি করে দালালকে ৯০ হাজার টাকা দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে এনেছেন।
কিন্তু জয়নাল আবেদীন ফিরেছেন শরিরে নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে।
জয়নাল আবেদীন বলছিলেন, “আমার গ্রামের এক দালাল মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য ৯০ হাজার টাকা চেয়েছিল। এই টাকার পুরোটা একসাথে দিতে হবে না। প্রথমে দশ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা মালয়েশিয়া যাওয়ার পর দিতে হবে। এই চুক্তি করে দালাল আমাকে বঙ্গোপসাগরের গভিরে নিয়ে নির্যাতন করেছিল।”
জয়নাল আবেদীন আরও বলেছেন, “থাইল্যান্ডের দালালরা আমাদের ৯৫জনকে একটা ঘরে ৩২দিন আটকে রাখে। সেই সময় নির্যাতনে আমাদের মধ্যে ১৮ জন মারা গেছে। অন্যদিকে আমি মালয়েশিয়া পৌছে গেছি, এটা বলে আমার মা’র কাছ থেকে জোর করে ৯০ হাজার টাকা নিয়েছে।”
টেকনাফে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি’র ৪২ ব্যাটালিয়নের পরিচালক আবু জার আল জাহিদ বলেন, “গ্রামের দালাল আমাকে নাফ নদীর একটি ঘাট থেকে ছোট নৌকায় নিয়ে সারারাত রেখেছিল। পরদিন অন্য দালাল আমাকে ছোট নৌকায় করে গভির সমুদ্রে নিয়ে বড় জাহাজে তুলেছিল।সেই জাহাজে ১৭দিন রেখে আমাকে শারিরিকভাবে নির্যাতন করেছে।পরে আমার সাথে আরও অনেককে দালালরা সাগরে ভাসিয়ে দিলে থাইল্যান্ডের দালালরা আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেয়।”
উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে দালালরা বঙ্গোসাগরের এই অঞ্চলকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে এখন মূলত গভীর সমুদ্রে নিরীহ মানুষকে আটকে রেখে মুক্তিপণ বা টাকা আদায় করছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের দিক থেকে অভিযোগ রয়েছে যে, পুলিশের কাছে অভিযোগ করে লাভ হয় না। তবে কক্সবাজারের পুলিশ বলছে, দেশী দালালরা সারাদেশে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে এবং তারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক নিয়ে এসে তাদের সমুদ্রে ধরে রেখে টাকা আদায় করছে।
টেকনাফ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোক্তার হোসেনের বক্তব্য হচ্ছে,দালালদের দেশী-বিদেশ নেটওয়ার্কের কারণে কোস্টগার্ড,বিজিবি এবং পুলিশ সমন্বিত অভিযান চালিয়েও এই অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছেনা।
পুলিশ এবং বিজিবি’র স্থানীয় কর্মকর্তারা মনে করেন,নাফ নদী থেকে বঙ্গোসাগর দিয়ে মানব পাচার এবং অর্থ আদায়ের এই অপরাধ বন্ধে মিয়ানমারসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাথে আলোচনা করে যৌথ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বিবিসি।