বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ গঠনতন্ত্র মানছে না জামায়াতে ইসলামী। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের আমির ছয় মাস দায়িত্ব পালনে অক্ষম, ব্যর্থ হলে কিংবা অনুপস্থিত থাকলে ভারপ্রাপ্ত আমির নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নতুন আমির নির্বাচন করবেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ দায়িত্ব গ্রহণের ৫২ মাসের মধ্যে দলের নতুন আমির নির্বাচন করতে পারেননি। কারাগারে আটক থাকায় দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলেও সর্বশেষ মুদ্রিত দলের গঠনতন্ত্রে জামায়াতের আমির হিসেবে এখনো নাম রয়েছে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর।এদিকে দলীয় নেতাদের অতীতে দুর্নীতির অভিযোগে আটক হওয়ার পাশাপাশি তৎকালীন এমপি মিজানুর রহমান চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও এবার সর্বোচ্চ আদালতে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দলের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পদও অক্ষুণ্ন রয়েছে। এ তালিকায় রয়েছেন আরও অনেকেই। দণ্ডিত নেতাদের বহিষ্কারে অনীহা দেখাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের মজলিসে শূরার এক সদস্য বলেন, ২০০৯ সালে নির্বাচিতরাই স্বপদে আছেন। কবে নাগাদ এসব নির্বাচন হবে তা বলতে পারছি না। সরকারের বাধার কারণেই রুকন সম্মেলন বা মজলিসে শূরার বৈঠক করা সম্ভব হচ্ছে না। দণ্ডিতদের পদ থেকে বাদ দিলে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে জামায়াতের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে। কর্মীরা বিভ্রান্ত হবেন। অন্য নেতাদের বিচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে উৎসাহ হারাবে। তাই বহিষ্কার করা হচ্ছে না।
জানা যায়, জামায়াতের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের আমিরের অক্ষমতাকাল ছয় মাসের বেশি হলে নায়েবে আমিরদের মধ্য থেকে একজনকে অস্থায়ীভাবে ভারপ্রাপ্ত আমির নিযুক্ত করবে। নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত আমির অনূর্ধ্ব ছয় মাসের মধ্যে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য আমির নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। তবে বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা যুক্তিযুক্ত মনে করলে নির্বাচন যুক্তিযুক্ত সময়সীমা পর্যন্ত স্থগিত করে অস্থায়ী আমিরের কার্যক্রম বর্ধিত করতে পারবে। তবে এ স্থগিতকরণ আমিরে জামায়াতের নির্বাচনের সময়সীমা অতিক্রম করতে পারবে না। জামায়াত নেতা-কর্মীরা বলছেন, ২০১০ সালের ২৯ জুন মাওলানা নিজামী গ্রেফতার হন। ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর তার পদ শূন্য হওয়ার কথা ছিল। তবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাকে মজলিসে শূরার ক্ষমতাবলে ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পদে বহাল রাখার সুযোগ ছিল। ২০০৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচিত নিজামীর পদের মেয়াদ শেষ হয় ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর। এরপর আমির নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১০ সালের পর জামায়াতের মজলিসে শূরার সভা হয়নি। গঠনতন্ত্রের ২৩ (৭) ধারা অনুযায়ী, মজলিসে শূরার বৈঠক আহ্বান সম্ভব না হলে কর্মপরিষদ মজলিসে শূরার সব ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। কর্মপরিষদের অনুমোদনেই টিকে আছে নিজামীর পদ। তবে কর্মপরিষদেরও অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত রাখার অধিকার নেই। জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর নির্বাচনের সময়সীমা অনেক আগে অতিক্রম করলেও নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এর আগে জামায়াতের সাবেক আমির কারাগারে থাকায় মাওলানা আব্বাস আলী খান দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্বে ছিলেন। তখন গোলাম আযম কারাগারে থাকা অবস্থাতেই তাকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। দণ্ডিত হলে দলের পদ থাকবে কিনা এ নিয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই জামায়াতের গঠনতন্ত্রে। গণমাধ্যমেও এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি কেউই। তবে ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন দলটির কর্মপরিষদ সদস্য নীলফামারী-৩ আসনের এমপি মিজানুর রহমান চৌধুরী। গ্রেফতার হওয়ার পর দিনই তাকে বহিষ্কার করা হয়। সর্বোচ্চ আদালতে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড হলেও মাওলানা সাঈদী সর্বোচ্চ ফোরাম নির্বাহী পরিষদ সদস্য, নায়েবে আমির ও কর্মপরিষদ সদস্য তিন পদেই বহাল থাকবেন। দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সাজা পেয়েছেন নিজামী। যুদ্ধাপরাধের মামলার রায়ও অপেক্ষমাণ। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। নেতা-কর্মীরা বলছেন, জামায়াতের নেতা-কর্মীরা বিশ্বাস করেন তাদের শীর্ষ নেতারা সরকারের জুলুমের শিকার। ফলে এ অবস্থায় দলের পদ বাতিল হলে তার প্রতি আরও একটি জুলুম হবে। এক কর্মপরিষদ সদস্য বলেন, সুপ্রিমকোর্টে বিভক্ত রায় হওয়ায় সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাঈদীর রিভিউর সুযোগ পাওয়া উচিত। রিভিউর সুযোগ পেলে তিনি বেকসুর খালাস পাবেন।