শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > মন্ত্রণালয়-দূতাবাসে টানাটানি, বিপাকে প্রবাসী শারমিনরা

মন্ত্রণালয়-দূতাবাসে টানাটানি, বিপাকে প্রবাসী শারমিনরা

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: গৃহকর্মী হিসেবে লেবাননে গিয়ে যৌন নিপীড়নের শিকার বাংলাদেশের বহু নারীশ্রমিক। এদের অনেকে এসব নির্যাতন থেকে পালিয়ে বাঁচতে বিদেশ বিভুঁইয়ে জীবনও হারাতে বসেছেন। সব হারিয়ে তাদেরে এখন শুধুই দেশে ফেরার আকুতি। কিন্তু সে আকুতিতেও সময়মত সাড়া দিতে পারে না সরকারি কর্তৃপক্ষ। দূতাবাস আর প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতাই এর জন্য দায়ী, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এদেরকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠালেও সময়মত লেবানন দূতাবাসের সাড়া মেলে না বলে অভিযোগ প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের।

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শারমিন আক্তার এমনই একজন শ্রমিক। যিনি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে লেবাননের একটি হাসপাতালে দীর্ঘ চার মাস ধরে চিকিৎসাধীন। তার ভাই কিসমতের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসে চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন পরেও তাদের সাড়া মেলেনি। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।

এদিকে লেবাননের হাসপাতাল থেকে টেলিফোনে শারমিন জানান, স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে তিনি ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় লেবাবন পাড়ি জমান। ভিনদেশে আয় করতে গেলেও গত ছয় মাসে একটি টাকাও আয় করতে পারেননি তিনি। বরং কপর্দকহীন অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। অর্থের অভাবে হাসাপাতালের সুচিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

শারমিন জানান, গৃহ শ্রমিকের কাজে গেলেও কাজের বদলে দুষ্টুচক্র তাকে দিয়ে যৌন ব্যবসা করাতে চায়। সেখান থেকে কোন রকমে পালিয়ে বাঁচলেও বাঁচতে পারেননি ভাগ্যের নির্মম পরিহাস থেকে। ভিন দেশে অচেনা পথে গন্তব্যবিহীন পালানোর সময় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। রাস্তায় দায়িত্ব পালন করা লেবানন সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য তাকে স্থানীয় ডা. মুঞ্জুল আলজিয়া হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন পায়ে মারত্মক আঘাত পাওয়া শারমিন। কিন্তু হাসপাতালের দেনা মেটাতে না পারায় চিকিৎসাও বিলম্বিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

প্রায় মাসখানেক আগে দূতাবাসের দুইজন কর্মকর্তা তাকে দেখে এসেছেন বলেও জানান শারমিন। দেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে শারমিন বলেন, ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এখানে এসেছিলাম। এজেন্টের মাধ্যমে এসেও ঘরের কাজের বদলে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে যাচ্ছিলাম। সেখানে থেকে বাঁচতে গিয়ে জীবন হারাতে বসেছি। কান্নায় ভেঙে পড়ে শারমিন এ প্রতিবেদককে বলনে, আমি খুব গরীব ঘরের মেয়ে। দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আমার জীবনটা ভিক্ষা দিন। সরকারের কাছে এটাই অনুরোধ। আমার পা-টা সুস্থ্ করিয়ে দিন। এখানে টাকা দেওয়া হয় না বলে নার্সরা নিয়মিত ওষুধও দেয় না আমায়। নিয়মিত ওষুধ পেলে এতদিন আমার পা অনেকটাই ভাল হয়ে যেত।

এদিকে শারমিনকে ফেরত আনতে দূতাবাসের গাফিলতি প্রসঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের প্রশাসন শাখার পরিচালক ড. জিয়াউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, শারমিনের ভাইয়ের আবেদনের পরেই আমরা তার অবস্থা জানতে এবং ফেরত আনার বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়ে আসছি। কিন্তু লেবানন দূতাবাস থেকে কোনো সাড়াই মেলেনি এতোদিনেও। তিনি অভিযোগ করেন, শারমিন একটি কেস মাত্র। শারমিনের মত বহু শ্রমিকই দূতাবাসের অবহেলার শিকার। যেসকল দূতাবাসে শ্রম উইং নেই সেখানেই এমন দীর্ঘসূত্রতায় পড়তে হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যেন ভিনগ্রহের মানুষ। তারা আমাদের কোনো চিঠিকেই আমলেই নেন না।

এমন অভিযোগকে অসত্য বলে দাবি করে লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বুধবার বাংলানিউজকে জানান, শারমিন আক্তারের বিষয়টি নিবিড়ভাবে দেখছে দূতাবাস। বুধবারেই প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিঠির জবাব দেওয়া হয়েছে। লেবাননের হাসপাতালেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিকিৎসার জন্য এ পর্যান্ত ১৬ হাজার ডলার খরচ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কয়েকদিনের মধ্যেই দূতাবাস থেকে কিছু অর্থ হাসপাতালকে দেওয়া হবে। এছাড়া শারমিনকে সম্পূরর্ণ সুস্থ করে তুলতে আরো সাত থেকে আট হাজার ডলার লাগতে পারে বলেও আভাস দিয়েছে হাসপাতাল।

এই দূতাবাস কর্মকর্তা বলেন, যেখানেই কোনো শ্রমিকের দুর্দশার অভিযোগ পাচ্ছি, সেখানেই দূতাবাসের কর্মকর্তারা ছুটে যাচ্ছি। তবে লেবাননে বাংলাদেশি শ্রমিকের তুলনায় দূতাবাসে জনবল অনেক কম বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম